dengue

জটিল হচ্ছে ডেঙ্গি-আতঙ্ক, যৌন সম্পর্কও এই রোগ ছড়ায় কি? কী করেই বা রুখবেন অসুখ?

দফায় দফায় অভিযান, বৈঠক, মশা মারার স্প্রে, ড্রোন নামিয়ে মশা খোঁজার চেষ্টা— বাদ যায়নি কিছুই। তবু সমাধান অধরাই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:২৭
Share:

ডেঙ্গি ছড়ানো স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা। ছবি: শাটারস্টক।

একটা সময় ছিল যখন কেবল বর্ষাকালেই ডেঙ্গি নিয়ে চিন্তার ভাঁজ দেখা যেত প্রশাসন থেকে আমজনতা সকলের কপালেই। সে চিন্তায় যুক্তিও ছিল যথেষ্ট। তবে প্রায় সারা বছর ধরেই ডেঙ্গির ভয় রাজ্যবাসীকে তাড়া করেনি এর আগে। গত দু’বছর ধরে এই ডেঙ্গি ছড়ানো স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই মশা যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে বঙ্গজীবন।

Advertisement

কেবল শহর কলকাতাই নয়, শহরতলি, প্রত্যন্ত জেলা ও গ্রামগুলিও এই অসুখের ভুক্তভোগী। ডেঙ্গি নিয়ে প্রতি বছরই প্রশাসনের তরফে বেশ কিছু পদক্ষেপ, স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার নানা সচেতনতা, সতর্কতা, কর্মশালার পরেও ডেঙ্গির প্রকোপ আটকানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফ্ল্যাভি ভাইরাস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ডেঙ্গির জীবাণুর মূল লক্ষ্য রক্তের লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা। সাধারণত মশা কামড়ানোর পর তিন থেকে ছ’দিনের মধ্যে এই উপসর্গ প্রকাশ পায়।

এ বছরও বর্ষাকাল পড়ার আগেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে কলকাতা পুরসভা। ডেঙ্গি আটকাতে পুরনো রেকর্ডের ঝাড়াইবাছাইও হয়েছে বিস্তর। গত বছর কোন কোন জায়গা থেকে মশার লার্ভা মিলেছিল তার বিস্তারিত তথ্যও জোগাড় করে সংশ্লিষ্ট দফতর। দফায় দফায় অভিযান, বৈঠক, মশা মারার স্প্রে, ড্রোন নামিয়ে মশা খোঁজার চেষ্টা— বাদ যায়নি কিছুই। তবু সমাধান অধরাই।

Advertisement

আরও পড়ুন: সুস্থ যৌন সম্পর্ক কমায় মাইগ্রেনের সমস্যাও, বলছে গবেষণা

পরিত্যক্ত টায়ার জমিয়ে রাখার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে অসুখ।

কেন বার বার ফেল?

সংক্রামক ও ট্রপিক্যাল ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর মত, ‘‘কলকাতা থেকে ডেঙ্গি নির্মূল একপ্রকার অসম্ভব। শুধু ডেঙ্গি নয়, মশাবাহিত যে কোনও অসুখের সঙ্গে লড়াই করতেই আধুনিক কলকাতা অপারগ। মনে রাখতে হবে, মশা কেবল পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে বলে জল জমা রুখে দিলেই এই রোগ থামানো যাবে, তা নয়। এখানে যে হারে হাইরাইজ তৈরি হয়, যত পরিমাণ স্যাঁতসেঁতে ইট, বালি, স্টোনচিপসের স্তূপ জমে থাকে, তাতে ডেঙ্গি আটকানো কঠিন। আর এই আটকানোর কাজটা একা সরকার বা পুরসভা কখনও করবে না। আমজনতা সচেতন না হলে এটি রোখা অসম্ভব। আর হ্যাঁ, ব্লিচিং দিয়েই ভাববেন না, অনেক হল। ওতে জায়গা পরিষ্কার হয়, মশা মরে না।’’

তাঁর সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য আধিকারিক সুবর্ণ গোস্বামীও। সাধারণত কীটনাশকের খেল এক ঘণ্টার মধ্যেই কমতে শুরু করে। তাই এ সব জায়গা পরিষ্কার রেখে মশাকে কিছু সময়ের জন্য নাজেহাল করে তুলতে সক্ষম হলেও তাদের প্রতিহত করতে পারে না। তাই যে সব জায়গায় মশারা ডিম পাড়ছে, সে সব জায়গা ও পরিবেশের বিনাশ ঘটানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর তাতেই ফাঁক থেকে যাচ্ছে বলে মত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

তা ছাড়া জেনেটিক মিউটেশনের ফলে মশারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত কীটনাশক, স্প্রে ও তেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে নিজেদের শরীরেই। তারা এই আক্রমণগুলো রুখতে যতটা শক্তিশালী হয়ে উঠছে, হাতিয়ারগুলো সমান তালে ততটা আধুনিক হচ্ছে না। এটাও ডেঙ্গির কাছে হেরে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এ ছাড়া এন্টোমোলজিস্টদের মতে, মশার উৎস খোঁজা ও তা মারার প্রক্রিয়া একেবারেই এক-দু’দিনের কাজ নয়। বছরের পর বছর এই প্রয়াস জারি রাখতে হয় সমান তৎপরতায়। মাঝে ঢিলেমি এলেই মশারা আবার মাথাচাড়া দেবে। তাই এই প্রক্রিয়া খুব ধৈর্যের আর সময়সাপেক্ষ। অবশ্যই ব্যয়বহুলও। বিজ্ঞান থেকে স্বাস্থ্য ও পুরসভা সব বিভাগের সঙ্গেই যোগাযোগ রেখে এই প্রক্তিয়ার বাস্তবায়ন সম্ভব। ঘাটতি থাকে এ সবেও।

আরও পড়ুন: ঘাড় ও পিঠের ব্যথায় প্রায়ই ভোগেন? এ সব মানলে ওষুধ ছাড়াই মিলবে আরাম

যৌন সংসর্গও কি ডেঙ্গি ছড়াতে পারে?

সম্প্রতি স্পেনের স্বাস্থ্য দফতর দাবি করেছিল, যৌন সংসর্গেই নাকি ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গি! মাদ্রিদের দুই বাসিন্দা যুবক কিউবা ঘুরে আসেন। এদের এক জন অসুস্থ হন ফিরে এসে। ধরা পড়ে ডেঙ্গি। তার কয়েক মাস পরে সেই যুবকের পুরুষসঙ্গীও আক্রান্ত হন ডেঙ্গিতে। কিন্তু তিনি সেই ক’মাসের মধ্যে স্পেনের বাইরেও যাননি, মাদ্রিদে তখন ছিল না ডেঙ্গির আক্রমণও। রোগের উৎস খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ল, তাঁদের মধ্যে বার কয়েক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের কথা। শারীরিক মিলনেই ডেঙ্গি আক্রান্ত সঙ্গীর থেকে সেই যুবকের মধ্যে ডেঙ্গি সংক্রামিত হয়েছে হয়েছে এর পর দাবি করে স্পেনের জনস্বাস্থ্য দফতর।

অমিতাভ নন্দী ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে জানিয়েছেন, এই দাবি খুব অস্বাভাবিক নয়। ডেঙ্গি কেবল রক্তের মাধ্যমেই নয়, শরীরের অন্য সব জলীয় অংশ মারফতও ছড়াতে পারে। তাই এই প্রকারে সংক্রমিত হওয়া খুব প্রচলিত না হলেও একেবারে অসম্ভব বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: খুশকি থেকে চুল ঝরা, ওষুধ ছাড়াই শীতে চুলের সব সমস্যাকে জব্দ করুন এ ভাবে

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তা হলে রোগ রোখার উপায়?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী জানালেন প্রচলিত নিয়মের বাইরে বেশ কিছু জরুরি নিয়মের কথাও।

এলাকায় জল জমতে না দেওয়ার কথা তো সকলেই জানি, সঙ্গে লক্ষ্য রাখুন কোথাও যেন ইটের পাঁজা, নারকেল-ডাবের খোলা, ভিজে বালি-সিমেন্ট, পরিত্যক্ত টায়ার দীর্ঘ দিন পড়ে না থাকে। একান্তই তা জমে থাকলে ঘন ঘন কীটনাশক দিন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনকে জানান। তবে কীটনাশক বা স্প্রে ও মশা মারার তেলে ভরসা রাখার চেয়েও বেশি আস্থা রাখুন আগাছা পরিষ্কারে। যত অনভ্যাসই থাক মশারির ভিতর ঘুমোন। বাড়িতে শিশু থাকলে ও বাড়ির চারপাশ অপরিষ্কার হলে বর্ষার ক’দিন সারা দিন মশারি টাঙিয়ে রাখুন। এলাকায় কারও ডেঙ্গি হলেও এমনই করুন। রাসায়নিক দেওয়া মশা নিরোধক ক্রিম মাখানোর চেয়ে ঘরোয়া কিছু উপায়ে মশা দমন করুন। তবে ভেষজ কোনও কোনও ধূপেও মশা যায়। সে সব প্রয়োগ করতেই পারেন। ধূপে হার্টের ক্ষতি হয়। তাই ওটা এড়িয়ে চলুন। যদি একান্তই মশার তেল ব্যবহার করেন, তা হলে সেই তেল মাঝেমধ্যেই বদলে ফেলুন। নইলে এই প্রতিষেধকের বিরুদ্ধেও নিজের শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন