খাবারের নতুন চর্চা

কী খাবেন আর কোনটা একদম বর্জন করবেন, খাদ্যাভ্যাসের নতুন কোন চর্চায় মেতেছে গোটা বিশ্ব, তারই হদিস মিলছে এ বারকী খাবেন আর কোনটা একদম বর্জন করবেন, খাদ্যাভ্যাসের নতুন কোন চর্চায় মেতেছে গোটা বিশ্ব, তারই হদিস মিলছে এ বার

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০০:০১
Share:

প্রতি বছরই হিড়িক ওঠে নতুন কিছুর। এ বার কোন খাবারে মজতে পারেন ভোজনরসিকরা, তার জন্য চাপানউতোর চলতেই থাকে। তবে ফুড ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনার প্রথম শর্তই হল প্রাসঙ্গিকতা। ব্যস্ত সময়ে কী খেলে সুস্থ থাকা যায় অথবা খাদ্যাভ্যাসের পরীক্ষানিরীক্ষাকে কত দূর নিয়ে যাওয়া যায়— সেটা মনে রাখা জরুরি। আপনি চাইলেই বার্বিকিউ সসে ডোবানো মাংস দিয়ে সারতে পারেন দৈনন্দিন ভোজ। কিন্তু তা শরীরের জন্য কতটা ভাল, সে কথাও তো মাথায় রাখতে হবে। দেখে নেওয়া যাক, এ বারের ফুড ট্রেন্ড নির্দেশ করছে কোন দিকে।

Advertisement

• সবুজায়ন: যতই আপনি নাক কুঁচকে দূরে সরিয়ে রাখুন, তরতাজা সবুজ আনাজপাতির ট্রেন্ড বহাল তবিয়তেই ঘাঁটি গেড়েছে। শাকসব্জি খাওয়া মানেই শুধু শাকের চচ্চড়ি নয়। তাই বার্গার, পিৎজাতেও ব্যবহার করতে পারেন শাক। কিংবা রোস্টেড বাদাম, ড্রেসিং দিয়ে বানিয়ে ফেলুন পালংয়ের স্যালাড। এর ফলে খাবারের স্বাদেও আপনাকে আপস করতে হবে না।

• পশ্চিম এশিয়ার আস্বাদ: বাংলার রান্না হলুদ ছাড়া ভাবাই যায় না। আবার ভিন্ন স্বাদ আনতে এলাচ অন্যতম দোসর। এলাচ-হলুদের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার হরিসা, হালোমি, জা’আতর জাতীয় মশলা। তাই কফিশপে টারমারিক লাতে পেলে অবাক হবেন না কিন্তু!

Advertisement

• সর্বস্বই মূল: এ ক্ষেত্রে কোনও কিছুই বাতিলের তালিকায় নেই। মা-ঠাকুমারা লাউ-আলুর খোসা থেকে বানিয়ে ফেলতেন বিবিধ স্বাদের চচ্চড়ি, বড়া, বাটা। এ বার শিকড় থেকে পাতা— সব ব্যবহারের পথেই হাঁটছে দুনিয়া।

• ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খাবার: সহজ কথায় বললে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলির খাবারের দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়েছে বিশ্ব। খাবারে থাকতে হবে এমন উপাদান যাতে প্রাকৃতিক রঙের মিলমিশ, সবুজের একাধিপত্য ও মাছের মতো হালকা প্রোটিন আছে। প্যাকেটজাত খাবারকে বর্জন করার কথা বলে এই আদর্শ।

• চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছাকাছি: যে সমস্ত বীজ শরীরের নানা রোগমুক্তির কাজে সাহায্য করে, সেগুলিই খাবারের প্রধান উপাদান হিসেবে বেছে নিতে চাইছে এ বারের ট্রেন্ড। তাই ফ্ল্যাক্স, শিয়াজাতীয় বীজ ব্যবহার করা হচ্ছে স্মুদি, মাফিন, স্যালাডে।

• জারিত আনাজ: গরমের দুপুরে গনগনে রোদে কাচের বয়ামে সারিসারি রাখা সরষের তেলে খোসা ছাড়ানো লেবু কিংবা নানাবিধ আচার... কত কাল আগে থেকেই আমাদের অন্দরমহলে জারিত হয়েছে। আর সেটাই এখন হয়ে উঠেছে ট্রেন্ড। তাই ফার্মেন্ট করা বাঁধাকপি অর্থাৎ কিমচি, মিসো, কাফির ইত্যাদিতে মজেছে দুনিয়া।

• ফুলের দুনিয়া: পিৎজা কিংবা স্যালাডের উপর ইতিউতি ছড়ানো রঙিন ফুল। বাকি নানা উপকরণের সঙ্গেই সেগুলোকেও গলাধঃকরণ করা যাবে সহজে। এ রকমই এডিব্‌ল ফুলের ট্রেন্ড মাতিয়েছে এ বছর। মেন কোর্স, ডেজার্ট থেকে নানা ধরনের পানীয়তে ফুলের রঙিন ছোঁয়া দৃষ্টিনন্দন, গুণও প্রচুর।

• হাড়ের অভ্যন্তরে: অসুস্থ হলেই মা-ঠাকুমারা মাংসের স্টু করে দিতেন। এর উদ্দেশ্যই হল মাংসের হা়ড়ের ভিতরের পুষ্টিগুণ শরীরকে সুস্থ করতে সাহায্য করে। মাংসের মজ্জাস্থির সুরুয়া উপকারী। সেই বোন ব্রথেই এ বার মজেছে দুনিয়া।

• ভিগান: সহমর্মিতার আদর্শের কথা মাথায় রেখেই হোক, কিংবা শরীরের যত্ন নিতে— বহু মানুষই বেছে নিচ্ছেন ভিগানিজম-এর আদর্শ। মাছ, মাংস, দুধ, মধুজাতীয় যে কোনও প্রাণিজ দ্রব্য বর্জন করার মন্ত্রেই বিশ্বাস রাখছেন তাঁরা। আর একই ভাবে পরিবেশরক্ষার ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে এই খাদ্যাভ্যাস।

এই সমস্ত আদর্শ ছাড়াও বিশেষ কিছু উপকরণের দিকে ঝুঁকছে বিশ্বের খাদ্যতালিকা।

• ব্রকোলি: ব্রকোলি ফিরে এসেছে সুখাদ্যাভ্যাসের তালিকায়। ভিটামিন সি দ্বারা সমৃদ্ধ ব্রকোলি শরীরে জমে থাকা ফ্যাট দূর করতে সাহায্য করে।

• মাশরুম: ভিটামিন ডি এবং বি সমৃদ্ধ মাশরুমের গুণ অনেক। অ্যান্টি এজিং উপকরণ ছা়ড়াও খাদ্যতালিকায় মাশরুম যোগ করলে তা হতাশা দূর করে ও মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা এবং শুকনো— দু’ভাবেই মাশরুম উপাদেয়। তবে অতিরিক্ত রান্না না করে, পুষ্টিগুণের দিকে খেয়াল রেখে হালকা রান্নাই শ্রেয়।

• পালং শাক: প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর পালং শাক এখন অন্যতম ট্রেন্ডি উপাদান। স্যুপ, পাস্তা বা স্টার ফ্রাই হোক কিংবা অমলেট— সর্বত্রই একমুঠো পালং জোগাচ্ছে পুষ্টিগুণ।

এ ছাড়াও ডার্ক চকলেট, কেয়ান পেপার, পোক বোল কিংবা খাবারে এথনিক ছোঁয়া এখন ঊর্ধ্বমুখী। তবে খাদ্যাভ্যাসের মূল কথাই হল সুস্থ থাকার প্রয়াস। সে দিকটা খেয়াল রাখা সবচেয়ে জরুরি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন