অভিনয় ক্ষমতার জন্য তিনি বলিউডে সমাদৃত। ওয়েব সিরিজ় থেকে সিনেমা— রোম্যান্টিক নয়, বরং কৌতুক দৃশ্যেই তাঁকে বেশি দেখা যায়। তিনি আরশাদ ওয়ারসি।
বলিউডের প্রথম সারির অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আরশাদ। ২৭ বছরের বেশি কাটিয়ে ফেলেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তাঁর ঝুলিতে হিট ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। কৌতুকাভিনেতা হিসেবে বিশেষ জনপ্রিয় ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর সার্কিট।
চলতি বছরে মুক্তি পেয়েছে ‘জলি এলএলবি’ সিনেমা। অক্ষয় কুমারের সঙ্গে আরশাদের জুটি মন কেড়েছে দর্শকের। ছবি মুক্তি পাওয়ার তিন দিনের মধ্যেই প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আয় করেছিল ‘জলি এলএলবি’।
আরশাদ-পত্নীও কিন্তু বলিউডেই কাজ করেছেন একসময়। ৯০ দশকের নামকরা ভিডিয়ো জকি (ভিজে) সার্কিট-পত্নী মারিয়া গোরেত্তি। একসময় টেলিভিশন জগতে চুটিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
মারিয়ার সঙ্গে আরশাদের আলাপ মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে মালহার ফেস্টিভ্যালে। সেখানে এক নাচের প্রতিযোগিতায় মারিয়া ছিলেন অংশগ্রহণকারী, আর আরশাদ বিচারক। মারিয়ার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আরশাদ।
সেখান থেকেই প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯৯ সালে বিয়ে করেন আরশাদ-মারিয়া। ১৪ ফেব্রুয়ারি— যে দিন সকলে ভালবাসার দিন উদ্যাপন করে, সেই দিনই বিয়ে করেছিলেন এই জুটি।
ভিন্ ধর্ম হলেও তাঁদের প্রেমের সম্পর্কে কখনও কোনও আঁচ আসতে দেয়নি এই জুটি। বরং এক বার না, দু’বার না, এখনও পর্যন্ত মোট তিন-তিন বার বিয়ে করেছেন তাঁরা। প্রথম দু’বার বিয়ে করার পর গত বছর ফের তৃতীয় বার জন্য বিয়ে করেছিলেন আরশাদ-মারিয়া।
আরশাদ মুসলিম এবং মারিয়া খ্রিস্টান। সে জন্য তাঁদের বিয়েও হয় উভয় মতে। প্রথমে খ্রিস্টান রীতি মেনে চার্চে বিয়ে হয়, পরে নিকাহ্ সেরেছিলেন এই তারকা দম্পতি। যদিও সে সময় আইনি বিয়ে করেননি তাঁরা। তাই ২৫ বছর পর ভালবাসার মানুষের সঙ্গে আইনি মতে বিয়ে সেরে ফেললেন আরশাদ।
৯০-এর দশকে সমাজমাধ্যমের এতটা বিস্তৃতি ছিল না। সে সময়ের তরুণ-তরুণীর কাছে ‘এমটিভি’র মতো বেশ কিছু চ্যানেলই ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।
মারিয়া ৯০-এর দশকে ‘এমটিভি’-এর জনপ্রিয় ‘ভিজে’ ছিলেন। ওই চ্যানেলের বেশ কয়েকটি মিউজ়িক ভিডিয়ো শো উপস্থাপনা করেছিলেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তার পর থেকে টিভির পর্দায় আরও অনেক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে দেখা গিয়েছে মারিয়াকে।
‘এনডিটিভি গুড টাইমস’-এ সম্প্রচারিত হত ‘ডু ইট সুইট’ নামক একটি রান্নার অনুষ্ঠান। আরও একটি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হত ‘আই লাভ কুকিং’ নামে রান্নার অনুষ্ঠান। এই দু’টি অনুষ্ঠানেই রান্নার টিপ্স এবং প্রক্রিয়া দর্শকের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন মারিয়া।
মারিয়াকে বড়পর্দাতে কাজ করতে দেখেছেন দর্শক। তাঁর প্রথম সিনেমা ২০০৩ সালে রজত কপূর পরিচালিত ‘রঘু রোমিয়ো’। সেখানে রেশমা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথম ছবিতে অল্প সময়ের জন্য থাকলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
২০০৫-এ ‘সালাম নমস্তে’, ২০০৬-এ ‘জানে হোগা কেয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। খুব বেশি সিনেমায় কাজ করতে দেখা যায়নি মারিয়াকে। যদিও ২০১০-এর একটি সিনেমা ‘হাম তুম অউর ঘোস্ট’-এ প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
তবে আরশাদের মতো তিনি বিনোদন জগতের সঙ্গে এখন আর তেমন ভাবে জড়িয়ে নেই। সমাজমাধ্যমে নিজের চ্যানেল খুলেছেন। সেখানেই নানা রকম রান্নার ভিডিয়ো পোস্ট করেন।
রান্না করা মারিয়ার বেশ ভাল লাগার জায়গা। তাঁর সমাজমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া নিত্যনতুন পদের ভিডিয়ো দেখেই সে প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও রান্না, জীবনধারা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা লেখাও মাঝেমধ্যে ভাগ করে নেন মারিয়া।
সব মিলিয়ে নিজেকে পর্দার বিনোদন জগৎ থেকে সরিয়ে দুই সন্তান (পুত্র জেক ড্যানিয়েল ওয়ারসি এবং কন্যা জেন জোয়ে ওয়ারসি) এবং সার্কিটকে নিয়ে সংসার জীবন উপভোগ করছেন মারিয়া। তবে মাঝে আইনি জটিলতাতেও জড়িয়েছিলেন এই তারকা দম্পতি।
প্রায় তিন দশক ধরে শুধুমাত্র সিনেমাজগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন আরশাদ ওয়ারসি। বিতর্ক থেকে সব সময় নিজেকে শত হস্ত দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। তবুও ভারতের শেয়ার বাজারে বেআইনি লেনদেনের সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়েছিল বলি অভিনেতার। এমনকি তাঁর সঙ্গে মারিয়ার নামও জুড়ে গিয়েছিল।
বেআইনি ভাবে শেয়ার কেনাবেচার অভিযোগে সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (সেবি) ২০২৩ সালে ভারতের শেয়ার মার্কেট থেকে আরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী মারিয়া গোরেত্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সূত্রের খবর, এখনও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা এবং এই দম্পতিকে আইনি লড়াই লড়তে হচ্ছে।