সম্পত্তির লোভে ২২ বছর ধরে বিষ, ওষুধ, মাদক খাইয়ে খুন ১১ জন স্বামীকে! ইরানের সেই ‘ব্ল্যাক উইডো’ তথা সিরিয়াল কিলার কুলথুম আকবরির ফাঁসির দাবিতে হইচই সে দেশ জুড়ে।
৫৬ বছর বয়সি কুলথুমের বিরুদ্ধে ২২ বছর ধরে অন্ততপক্ষে ১১ জন স্বামীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বিষ বা মাদকজাতীয় পদার্থ খাইয়ে স্বামীদের খুন করেছেন তিনি।
কুলথুমের এই হত্যালীলা নাকি শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। ধরা পড়েন ২০২৩-এ। অভিযোগ, অকৃতদার বা বিপত্নীক বিত্তশালী বৃদ্ধদের খুঁজে খুঁজে বার করতেন কুলথুম। তাঁদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বিয়েও করতেন।
বিত্তশালী বৃদ্ধদের বিয়ে করার নেপথ্যে মূল কারণ ছিল, তাঁদের সম্পত্তি। ভুলিয়ে-ভালিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে করেই স্বামীদের খুন করতেন কুলথুম। হয় স্বামীদের বিষ খাইয়ে একেবারে খতম করতেন, নয়তো দীর্ঘ দিন ধরে ভুল ওষুধ বা মাদক খাইয়ে তিলে তিলে মারতেন। অভিযোগ তেমনটাই।
অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পিত ভাবে বৃদ্ধ স্বামীদের বিষাক্ত ওষুধ, মাদক এবং বিষমদ খাওয়াতেন কুলথুম। স্বাভাবিক ভাবেই বৃদ্ধদের অশক্ত শরীরে ওই সব বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব পড়ত তাড়াতাড়ি। হৃদ্রোগ বা অন্য শারীরিক সমস্যার কারণে মৃত্যু হত তাঁদের। বৃদ্ধদের পরিবারের মনে হত স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু হয়েছে।
স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তি কায়দা করে নিজের নামে করতেন কুলথুম। মাঝেমধ্যে সম্পত্তির হস্তান্তর মৃত্যুর আগেই হয়ে যেত। স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি হাতিয়ে কুলথুম বেরিয়ে পড়তেন নতুন শিকারের খোঁজে।
পুলিশের অনুমান, ২২ বছরে ১১ জন স্বামীকে হত্যা করেছিলেন কুলথুম। যদিও সঠিক সংখ্যা আরও বেশি বলেই মত অনেকের। কুলথুমের খুনের পদ্ধতি এবং দীর্ঘ সময় ধরে সংঘটিত অপরাধের কারণে তাঁকে ইরানের ‘ব্ল্যাক উইডো’ বা ‘কৃষ্ণ বিধবা’ নাম দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে শেষ স্বামী গোলামরেজা বাবাইয়ের সন্দেহজনক মৃত্যুর পর কুলথুমের কুকীর্তি প্রকাশ্যে আসে। গোলামরেজার পুত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
পুলিশ তদন্তে নামার পর জানা যায়, আগেও একাধিক স্বামীকে বিষ খাইয়ে মেরেছেন কুলথুম। তবে ২০২০ সালে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা করলেও কুলথুমের এক স্বামী বেঁচে গিয়েছিলেন। তাঁরও খোঁজ পায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।
এর পরেই পুলিশের জালে ধরা পড়েন কুলথুম। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপের মুখে পড়ে অপরাধ স্বীকারও করেন তিনি। এ-ও ইঙ্গিত দেন, তাঁর হাতে খুন হওয়া স্বামীর সংখ্যা ১১-র বেশিও হতে পারে।
কুলথুমের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর কেবল নিহতদের পরিবার নয়, ইরানের জনসাধারণও হতবাক হয়ে গিয়েছিল। ২০২৩ সালে গ্রেফতার হন কুলথুম। তার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
সম্প্রতি কুলথুমের ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয় ইরান। আদালতে আইনজীবীরা কুলথুমের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর মানসিক সুস্থতা পরীক্ষা করে দেখার আবেদন জানান। যদিও মৃতদের পরিবার এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করে।
মৃতদের পরিবারের দাবি, কোনও মানসিক রোগ নেই কুলথুমের। সম্পত্তির লোভে ঠান্ডা মাথায় স্বামীদের খুন করেছেন তিনি। কুলথুমের মৃত্যুদণ্ডের দাবিও তোলে তারা।
ইরানের জনসাধারণের একাংশও কুলথুমের মৃত্যুর দাবিতে সরব হয়েছেন। যদিও ‘ব্ল্যাক উইডো’র বিরুদ্ধে চলা মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। রায় ঘোষণা এখনও বাকি। তবে শীঘ্রই সেই রায় ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।