Amazon Discovery

আমাজনের দুর্গম গহিনে খোঁজ মেলে মৃতদেহসমেত মাছ, কচ্ছপ ঠাসা রাক্ষুসে কলসির! রহস্য সমাধানে হিমশিম গবেষকেরা

গবেষণায় উঠে আসে এই পাত্রগুলি কয়েকশো বছর, এমনকি কয়েক হাজার বছরেরও পুরনো হতে পারে। এগুলি প্রাক্-কলম্বিয়ান যুগের তৈরি বলে ধারণা। স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির অঙ্গ কি না সে সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে পারেননি ব্রাজ়িলের প্রত্নতত্ত্ববিদেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১৬
Share:
০১ ১৬

আমাজনের গহিন অরণ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক চাষি জলাভূমি পরিষ্কার করার জন্য গাছ কাটছিলেন। ৫০ ফুটের একটি গাছ শিকড়সুদ্ধ উপড়ে পড়তেই বেরিয়ে এল বিরাট জালার মতো পাত্র। এক-আধটা নয়, সাতটি বিশাল আকৃতির কলসির মতো পাত্র দেখে খানিকটা হকচকিয়ে যান তিনি।

০২ ১৬

স্থানীয় গ্রামবাসীরা গাছটি পড়ার শব্দ শুনে এবং হট্টগোল দেখে ছুটে যান। দেখেন, গাছের শিকড়ের নীচে পোঁতা সাতটি সেরামিকের পাত্র। তাতে ঠাসা মানব দেহাবশেষ। এ ছাড়া মাছ, ব্যাঙ ও কচ্ছপের হাড় দিয়ে ভর্তি করা ছিল পাত্রগুলি।

Advertisement
০৩ ১৬

সাতটি পাত্রের মধ্যে সবচেয়ে বড়টির আয়তন তিন ফুট ও ওজন ছিল ৩৫০ কেজির কাছাকাছি। স্থানীয়েরা রহস্যময় পাত্রের ভান্ডার খুঁজে পাওয়ার পর পরই প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল তদন্ত করতে আসে সেখানে। কলসিগুলি ভাঙার পর ভিতরের বস্তুগুলি পরীক্ষা করেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। খনন করার পর নিদর্শনগুলিকে গবেষণাগারে নিয়ে যেতে বিস্তর সময় লেগে যায়।

০৪ ১৬

গবেষণায় উঠে আসে এই পাত্রগুলি কয়েকশো বছর, এমনকি কয়েক হাজার বছরেরও পুরনো হতে পারে। প্রাক্-কলম্বিয়ান যুগে তৈরি করা হয় এগুলি। কলম্বাসের আমেরিকায় আগমনের আগে আমাজনে বসবাসকারী অসংখ্য বৃহৎ, জটিল সভ্যতার প্রমাণ আবিষ্কার হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে সঠিক ভাবে বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির।

০৫ ১৬

মধ্য সোলিমোস অঞ্চলের প্লাবনভূমিতে একটি কৃত্রিম দ্বীপে কলসগুলি খুঁজে পান স্থানিয়েরা। লাগো দো কোচিলা নামে পরিচিত এই স্থানটি প্রায় ২ হাজার বছর আগে আমাজন নদীর তীরে বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে আদিবাসীদের দ্বারা নির্মিত ৭০টি দ্বীপের মধ্যে একটি।

০৬ ১৬

এই কলসিগুলি স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির অঙ্গ কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি ব্রাজ়িলের ‘মামিরাউয়া ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’-এর প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। প্রত্নতাত্ত্বিক জর্জিয়া লায়লা হোলান্ডা এই খননকাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দু’টি বড় সেরামিক কলসি, যার ব্যাস ৩৫ ইঞ্চি (৮৯ সেন্টিমিটার)। এতে মানুষের হাড় তো ছিলই তার সঙ্গে ছিল বীজ এবং মাছ, ব্যাঙ ও কচ্ছপের দেহাবশেষের মিশ্রণ।’’ তাঁর মতে, এই বীজ এবং প্রাণীর দেহাবশেষ সম্ভবত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অংশ ছিল।

০৭ ১৬

‘লাইভ সায়েন্স’ নামের একটি সংবাদমাধ্যমে হোলান্ডা জানান, আবিষ্কারগুলি অপ্রত্যাশিত ও অভূতপূর্ব। মাটির ১৬ ইঞ্চি গভীরে পোঁতা এই নিদর্শনগুলির মুখে কোনও সেরামিকের ঢাকনা ছিল না। হোলান্ডা জানিয়েছেন, কলসিগুলির মুখ আটকানোর জন্য সম্ভবত কোনও জৈব পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই পদার্থ পরে পচে যায়।

০৮ ১৬

একসঙ্গে এতগুলি কলসি খুঁজে পাওয়ার পর গবেষকেরা মনে করছেন এটি একটি সমাধিস্থল হতে পারে। আর এই জনগোষ্ঠীর সমাধিস্থলটি বাড়ির মধ্যেই স্থান পেয়েছিল। এই ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে এই কলসিগুলি আলাদা করে কোনও সমাধিক্ষেত্রে রাখার পরিবর্তে বাড়ির মেঝের নীচে সাবধানে রাখা হত।

০৯ ১৬

পাত্রগুলির উপাদান অবাক করেছে গবেষকদেরও। বিরল সেরামিক দিয়ে গড়া হয়েছিল কলসিগুলি। আনুষ্ঠানিক সমাধি প্রথার অংশ এই পাত্র মেডিও সোলিমোয়েস অঞ্চলের জীবনযাত্রা সম্পর্কে নতুন সূত্র প্রকাশ করতে পারে বলে আশা করছেন হোলান্ডা ও তাঁর দলের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।

১০ ১৬

সেরামিকগুলি সবুজ কাদামাটি দিয়ে ঢাকা ছিল। ঘন বনাঞ্চলযুক্ত মেডিয়ো সোলিমোয়েস অঞ্চলের আরও কয়েকটি স্থানে দেখা যায় এমন একটি বিরল প্রথা। সবুজ কাদামাটির পাশাপাশি পাত্রগুলিতে লাল ডোরাকাটা দাগ লক্ষ করেছেন অনুসন্ধানকারী দলের সদস্যেরা। মধ্য সোলিমোস এলাকার অন্যত্র প্রায় একইরকম সেরামিক আবিষ্কার হয়েছে। পরিচিত সেরামিক শৈলীর ঐতিহ্যের সঙ্গে এই পাত্রগুলির কোনও সরাসরি যোগসূত্র নেই।

১১ ১৬

এই কলসিগুলি এমন একটি অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে যেখানে অনেকগুলি উঁচু প্ল্যাটফর্ম বা কৃত্রিম দ্বীপ রয়েছে। বন্যার ঝুঁকি থেকে তাঁদের ঘরবাড়ি উঁচু করার জন্য এই দ্বীপগুলি তৈরি করেছিলেন আদিবাসীরা। ‘পলিক্রোম ট্র্যাডিশন’ নামে পরিচিত এই প্রথাটি এই অঞ্চলে সুপরিচিত।

১২ ১৬

সোলিমোস এবং নেগ্রো নদীর তীরে একই রকম প্লাবনভূমি দেখা গিয়েছে। এই উঁচু প্ল্যাটফর্মগুলি বছরব্যাপী বসবাসের জন্য উপযুক্ত। বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদীর প্লাবনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি স্থিতিশীল বাসস্থান গড়ে তুলেছিলেন আদিবাসীরা।

১৩ ১৬

কলসির ভিতরে যে মানুষের দেহাবশেষ, মাছ এবং কচ্ছপের হাড় পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি আমাজনে বসবাসকারী মানুষের শেষকৃত্যের রীতিনীতি সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে গবেষকদের। এই প্রাণীদের উপস্থিতি ভোজ বা ধর্মীয় নৈবেদ্যের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। সম্ভবত এই কলসিগুলি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। এই ধরনের নৈবেদ্য মৃত ব্যক্তিকে পরকালের যাত্রায় সহায়তা করে বলে বহু দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয়।

১৪ ১৬

হোলান্ডা মনে করেন, কেউ মারা গেলে স্থানীয় অধিবাসীরা মৃতদেহটি ঝুড়িতে করে নদীতে ফেলে রাখতেন, যাতে মাছ নরম টিস্যুগুলো খেয়ে ফেলে। অথবা দেহকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হত। পরে বিচ্ছিন্ন হাড়গুলিকে দাহ করা হত এবং শেষকৃত্যের কলসের ভিতরে রাখা হত। অবশেষে অন্যান্য আমাজনীয় সংস্কৃতি মেনে তাঁদের বাড়ির নীচে এই পাত্রগুলি পুঁতে রাখতেন মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যেরা।

১৫ ১৬

আর এক প্রত্নতাত্ত্বিক মার্সিও আমারাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এটি একটি অত্যন্ত পরিশীলিত আদিবাসী কৌশল, যা অতীতে উল্লেখযোগ্য ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করে। এই অঞ্চলের অতীত সম্পর্কে বর্হিবিশ্বের ধারণা কতটা সীমিত, তা প্রমাণ করে দিয়েছে এই আবিষ্কার।

১৬ ১৬

গবেষকেরা আশা করছেন যে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে কলসি তৈরি করা জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আরও অজানা তথ্য জানা সম্ভব হবে। দুর্গম মধ্য সোলিমাসের লাগো দো কোচিলা অংশের কলসির স্বতন্ত্রতা একটি স্থানীয় ঐতিহ্যের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। সেগুলি আমাজনের সেরামিক ইতিহাসের পরিচিত পর্যায়গুলির সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে।

সব ছবি: সংগৃহীত ও এআই সহায়তায় প্রণীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement