Canada on H-1B Visa

চিন, ব্রিটেন, জার্মানির পর এ বার কানাডা! ট্রাম্পের ভিসানীতিতে সমস্যায় পড়া প্রতিভাবান ভারতীয়দের ডাকছে অটোয়া

আচমকাই এইচ-১বি ভিসার বিপুল ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে বেজায় বিপাকে পড়েছেন ষুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতীয় পেশাদাররা। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের জন্য ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪১
Share:
০১ ২০

যুক্তরাষ্ট্রের ‘লোভনীয়’ এইচ-১বি ভিসার নিয়মে বড় বদল। এ বার থেকে ওই নথি হাতে পেতে খরচ হবে এক লক্ষ ডলার! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ-হেন ঘোষণায় আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের মধ্যে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। প্রায় নাগরিকের সম্মান নিয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার দিন কি তবে ফুরিয়ে গেল? এই পরিস্থিতিতে পরিত্রাতা হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকার পড়শি দেশ কানাডা। সেটা যে নয়াদিল্লির পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তির, তা বলাই বাহুল্য।

০২ ২০

চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ভিসা নিয়ে বড় ঘোষণা করে অটোয়া। এ ব্যাপারে মুখ খুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। তিনি বলেন, ‘‘নতুন নিয়মের জাঁতাকলে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এইচ-১বি ভিসা পাবেন না। কিন্তু, এঁরা প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং দক্ষ কর্মী। ফলে আমাদের সামনে থাকছে এঁদের নিয়ে আসার বড় সুযোগ। সেটা অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।’’ দক্ষ বিদেশি কর্মীদের কানাডায় আসার ব্যাপারে তাঁর সরকার প্রস্তাব দিতে চলেছে বলে স্পষ্ট করেছেন কার্নি।

Advertisement
০৩ ২০

এইচ-১বি ভিসা না পাওয়া ব্যক্তিদের ঘরে ডেকে আনলে অটোয়া কতটা লাভবান হবে, ইতিমধ্যেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘এটা কোনও সংখ্যার বিষয় নয়। আমরা প্রতিভা, নতুন কিছু উদ্ভাবন এবং দেশের আর্থিক ভবিষ্যৎকে ঊজ্জ্বল করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র যে সোনালি সুযোগ আমাদের সামনে দিয়েছে, সেটাকেই পুঁজি করতে চাই।’’

০৪ ২০

গত কয়েক বছরে পেশাদার ভারতীয়দের কানাডা যাত্রার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০২২-’২৩ আর্থিক বছর ৩২ হাজার বিদেশি প্রযুক্তি কর্মী পেয়েছিল অটোয়া। এঁদের অর্ধেকই ছিলেন ভারতীয়। গত বছর (২০২৪) কানাডার নাগরিকত্ব পান এ দেশের ৮৭ হাজার বাসিন্দা। ফলে উত্তর আমেরিকার দেশটিতে বৃহত্তম গোষ্ঠী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তাঁরা।

০৫ ২০

২০২২ সালে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৫ জন ভারতীয়কে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃতি দেয় কানাডার সরকার। এই অঙ্ক সেখানকার নতুন বিদেশি নাগরিকদের ২৭ থেকে ৩০ শতাংশ। কার্নির ঘোষণার পর এই সংখ্যা আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ।

০৬ ২০

ট্রাম্পের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার আগেই অবশ্য বিদেশি প্রতিভার খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। সূত্রের খবর, এর জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে তাঁর সরকার। সংশ্লিষ্ট বাহিনীটির সদস্যদের দুনিয়ার সেরা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং ডিজ়িটাল বিশেষজ্ঞদের খুঁজে বার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদেরই ইংল্যান্ডে টেনে আনতে চাইছেন স্টার্মার। এর জন্য ভিসা ফি বাতিলের প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে তাঁর সরকার।

০৭ ২০

বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন ব্রিটিশ সরকারের এক পদস্থ কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্বের সেরা পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন অথবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ভিসা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলেছে। ডিজিটাল ক্ষেত্রে নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরাও এই সুবিধা পেতে পারেন।’’ শেষ পর্যন্ত স্টার্মার সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলে ভারতীয় পেশাদাররা যে লাভবান হবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

০৮ ২০

কানাডার মতো কয়েক দিন আগে দক্ষ ভারতীয়দের কাজ করার জন্য খোলাখুলি ভাবে আহ্বান জানান নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ফিলিপ অ্যাকারম্যান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে স্থানীয় কর্মীদের তুলনায় একজন ভারতীয় গড়ে বেশি অর্থ আয় করেন। জার্মানির অর্থনীতিতে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। আর তাই এখানকার কঠোর পরিশ্রমী ও সেরা ব্যক্তিদের আমরা চাকরি দিতে চাই।’’

০৯ ২০

সম্প্রতি এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত নতুন নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প। এর পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন জানিয়ে দেয়, সংশ্লিষ্ট নথিটির জন্য আগামী দিনে মার্কিন সংস্থাগুলিকে বছরে দিতে হবে এক লক্ষ ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যেটা প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা। ফলে আমেরিকার কোম্পানিগুলির কাছে বিদেশি কর্মীর নিয়োগ যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল হচ্ছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শুধু তা-ই নয়, সেখানকার সংস্থাগুলি ভিন্‌রাষ্ট্রের কর্মীদের সংখ্যা উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমাতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

১০ ২০

এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে সই করার পর কত বার ফি দিতে হবে, তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। মার্কিন বাণিজ্যসচিব হোয়ার্ড লুটনিক বলেন, প্রতি বছর এক বার করে দিতে হবে টাকা। নতুন ভিসার পাশাপাশি ভিসা পুনর্নবীকরণের আবেদনকারীদের ক্ষেত্রেও এই মূল্য প্রযোজ্য হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কর্মীদের মধ্যে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়।

১১ ২০

লুটনিকের মন্তব্যের এক দিনের মাথায় নতুন ভিসানীতির নিয়মকানুন খোলসা করেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। কিছুটা আশ্বাসের সুরে তিনি বলেন, ‘‘গ্রাহকদের থেকে কোনও বার্ষিক মূল্য নেওয়া হবে না। নতুন ভিসার আবেদন করতে গেলে এককালীন মূল্য হিসাবে এই টাকা দিতে হবে।’’ হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে এই টাকা শুধুমাত্র নতুন ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভিসা পুনর্নবীকরণের ক্ষেত্রে লাগবে না কোনও টাকা।

১২ ২০

গত ২৩ সেপ্টেম্বর আবার এইচ-১বি ভিসা নিয়ে আরও একটি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। বিজ্ঞপ্তি জারি করে আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে, প্রচলিত লটারির পরিবর্তে এখন থেকে নতুন পদ্ধতিতে বিদেশি কর্মীদের বাছাই করে ভিসা দেবে মার্কিন প্রশাসন। আপাতত ভিসা সংক্রান্ত নিয়মকানুন সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে। উপরমহলের সবুজসঙ্কেত মিললেই চালু হবে নয়া নিয়ম।

১৩ ২০

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের যুক্তি, নতুন নিয়ম চালু হলে এইচ-১বি ভিসার টোপ দিয়ে উচ্চ দক্ষতা এবং উচ্চ বেতনের বিদেশি কর্মীদের আমেরিকায় নিয়ে আসতে পারবে বিভিন্ন সংস্থা। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে সুবিধা হবে নিয়োগকারী সংস্থাগুলিরও। কারণ, এর ফলে সব বেতনস্তরে এইচ-১বি ভিসাধারী কর্মীদের নিয়োগ করতে পারবে তারা।

১৪ ২০

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, কর্মীদের নির্ধারিত বেতনস্তরের ভিত্তিতে ভিসা দেওয়ার জন্য বাছাই করা হবে। চারটি বেতন কাঠামোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে থাকা কর্মীরা, অর্থাৎ যাঁদের বার্ষিক বেতন ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫২৮ মার্কিন ডলার বা তার বেশি, তাঁরা চার বার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। সর্বনিম্ন স্তরে থাকা কর্মীরা সেই সুযোগ পাবেন কেবলমাত্র এক বার। অর্থাৎ, উচ্চ বেতনের অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অন্য দিকে, সদ্য স্নাতক হওয়া কিংবা নবাগত কর্মীরা সুযোগ পাবেন কম।

১৫ ২০

আমেরিকার এইচ-১বি এক ধরনের অ-অভিবাসী ভিসা। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীরা সাময়িক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে সেখানকার সংস্থার হয়ে কাজ করতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ থাকে তিন বছর। সর্বোচ্চ ছ’বছর পর্যন্ত তা বৃদ্ধি করা যায়। এই সময়ের মধ্যে আমেরিকার গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন কর্মীরা।

১৬ ২০

গ্রিন কার্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে এইচ-১বি ভিসার মেয়াদ ইচ্ছামতো বৃদ্ধি করা যায়। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে এইচ-১বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ যে জটিল হল, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এইচ-১বি ভিসায় সেখানে গিয়ে কাজ করা বিদেশিদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছেন ভারত এবং চিনের নাগরিকেরা।

১৭ ২০

মার্কিন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এইচ-১বি ভিসার সর্বাধিক সুবিধা পান ভারতীয়েরা। গত বছর এ দেশের ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর করেছে আমেরিকা। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিন। সেখান থেকে ১১.৭ শতাংশ ভিসার আবেদনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে ট্রাম্পের নয়া নীতিতে সবচেয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন ভারতীয়রাই।

১৮ ২০

অন্য দিকে ট্রাম্পের ভিসা নীতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদেশি মেধাবী কর্মীদের নিজেদের দেশে আনতে সরিয়া হয়ে উঠেছে চিন। আর তাই ১ অক্টোবর থেকে ‘কে ভিসা’ চালু করছে বেজিং। গত অগস্টেই অবশ্য এই বিষয়ে চড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

১৯ ২০

বেজিঙের ‘কে ভিসা’র জন্য আবেদনের পদ্ধতি অনেকটা আমেরিকার এইচ-১বি ভিসার মতোই। বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেধাবীরা, যাঁরা চিন বা বিশ্বের যে কোনও প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই এই ভিসার জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। শিক্ষকতা কিংবা গবেষণামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও এর মাধ্যমে ড্রাগনভূমিতে পা রাখতে পারবেন।

২০ ২০

চিন, ব্রিটেন, জার্মানির পর এ বার কানাডা। ট্রাম্পের ভিসা নীতির সুযোগ নিয়ে মেধাবীদের ঘরে ডাকা শুরু করে দিয়েছে অটোয়া। ফলে আগামী দিনে বিদেশ কাজ করতে চাওয়া পেশাদার ভারতীয়দের সেরা ঠিকানা কোনটা হয়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement