US vs China Fighter Jets

তাড়া করতেই লেজ গুটিয়ে দৌড়! চিনা লড়াকু জেটের গর্জনে ‘নাকের জলে চোখের জলে’ জোড়া মার্কিন যুদ্ধবিমান

আমেরিকার গর্বের পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির এফ-২২ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানকে নিয়ে বড় দাবি করল চিন। বেজিঙের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাঝ-আকাশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জোড়া জেটকে নাকানি-চোবানি খাইয়েছে তাদের সাড়ে চার প্রজন্মের জে-১৬ যুদ্ধবিমান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:১৩
Share:
০১ ১৯

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার আকাশে মার্কিন-চিন লড়াকু জেটের ‘ডগফাইট’? বেজিঙের যুদ্ধবিমানের তাড়া খেয়ে ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের এফ-২২ র‌্যাপ্টর এবং এফ-৩৫ লাইটনিং টু? ড্রাগনভূমির সরকারি গণমাধ্যমে এই খবর সম্প্রচারিত হতেই দুনিয়া জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেয়নি আমেরিকার যুদ্ধ দফতর। তবে ঘটনা সত্যি হলে ওয়াশিংটনের পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির জোড়া লড়াকু জেটের গুণগত মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠবে, তা বলাই বাহুল্য।

০২ ১৯

চলতি বছরের ৩ অক্টোবর তথ্যচিত্রভিত্তিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে চিনের সরকারি গণমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন’। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ এবং এফ-৩৫ লড়াকু জেট নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বেজিঙের ‘পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি’ বা পিএলএ বিমানবাহিনীর এক পাইলট। তাঁর দাবি, ধারে ও ভারে অনেক কম ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসে জোড়া মার্কিন জেটকে ‘লক’ করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ফলে কোনও মতে পালিয়ে বাঁচে মার্কিন জেট।

Advertisement
০৩ ১৯

‘গ্লোবাল টাইমস চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশন’ জানিয়েছে, গত বছর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘটে ওই ঘটনা। তথ্যচিত্রভিত্তিক প্রতিবেদনটিতে অবশ্য সরাসরি কোনও মার্কিন লড়াকু জেটের নাম করা হয়নি। তবে যে দু’টি যুদ্ধবিমানের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আমেরিকার বিখ্যাত প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর তৈরি এফ-২২ র‌্যাপ্টর এবং এফ-৩৫ লাইটনিং টু-র হুবহু মিল রয়েছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটিতে পিএলএ বিমানবাহিনীর পাইলট লি চাওয়ের সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছে বেজিঙের সরকারি গণমাধ্যম।

০৪ ১৯

চিনা লড়াকু পাইলটের বয়ান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মহড়ার সময় মাঝ-আকাশে হঠাৎই জোড়া মার্কিন জেটের মুখোমুখি হন তিনি। ওই সময় দেশীয় ভাবে তৈরি জে-১৬ যুদ্ধবিমান ওড়াচ্ছিলেন লি। তাঁর কথায়, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের জেটগুলি আমাদের দু’টি বিমানকে ঘিরে ধরে। ক্রমাগত দিতে থাকে যুদ্ধের উস্কানি। তীব্র গতিতে তারা আমাদের উপকূল ভাগের দিকে ছুটে আসছিল। ফলে বাধ্য হয়ে আমেরিকার জেটগুলিকে তাড়া করি আমরা।’’

০৫ ১৯

লি-র দাবি, এর পরই মাঝ-আকাশে শুরু হয় যুদ্ধবিমান নিয়ে কসরত। ওই সময় একটি মার্কিন জেটকে নিশানার মধ্যে পেয়েও যান তিনি। কিন্তু, তত ক্ষণে তাঁর বিমানটিকে ‘লক’ করে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের আর একটি জেট। ফলে উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে দু’বার পাক খেয়ে তাদের চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসেন বেজিঙের ওই যোদ্ধা পাইলট। এর জন্য জে-১৬র ককপিটে বসে ‘ব্যারেল রোল’ করতে হয় তাঁকে। শুধু তা-ই নয়, শত্রুর জোড়া যুদ্ধবিমানের মাথার উপর দিয়ে নিজের জেট উড়িয়ে নিয়ে যেতেও নাকি সক্ষম হন তিনি।

০৬ ১৯

সাক্ষাৎকারে পিএলএ বিমানবাহিনীর পাইলট বলেছেন, ‘‘যখন এই ঘটনা ঘটছে তখন মার্কিন বিমান থেকে আমরা মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরে ছিলাম। চক্রব্যূহ থেকে বেরিয়ে আসার পর দু’টি মার্কিন জেটকেই চিহ্নিত করে তাদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু, যুদ্ধবিমান দু’টি গতি বাড়িয়ে উল্টো দিকে পালিয়ে যায়। ফলে আমাদের তরফ থেকে কোনও রকমের হামলা করা হয়নি।’’ গ্লোবাল টাইম্স জানিয়েছে, ওই ঘটনার পর থেকে নাকি চিনা উপকূলের ধারেকাছে ঘেঁষার সাহস পাচ্ছে না আমেরিকা।

০৭ ১৯

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ র‌্যাপ্টর এবং এফ-৩৫ লাইটনিং টুকে পঞ্চম প্রজন্মের বিশ্বের অন্যতম সেরা ‘স্টেল্‌থ’ জেট বললে অত্যুক্তি হবে না। দুনিয়ার যে কোনও রেডারকে ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এই দুই যুদ্ধবিমানের। কারণ, এদের আরসিএস (রেডার ক্রস সেকশন) হল মাত্র ০.০০১৫ বর্গমিটার বা তার চেয়েও কিছুটা কম। ফলে সংশ্লিষ্ট জেটগুলি উড়লে রেডারে ছোট পাখির মতো একটা বিন্দু ভেসে ওঠে মাত্র। এর জেরে একরকম অদৃশ্য থেকে হামলা চালাতে পারে এফ-২২ এবং এফ-৩৫।

০৮ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কথায়, চিনা যোদ্ধা পাইলটের কথা সত্যি হলে ককপিটে বসে রেডারে জোড়া মার্কিন জেটকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন তিনি। শুধু তা-ই নয়, মাঝ-আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সেগুলির উপর নিশানা লাগান তিনি। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আগে বায়ুসেনা পাইলটদের যেটা করা বাধ্যতামূলক। বিমানবাহিনীতে একেই বলে ‘টার্গেট লকিং’।

০৯ ১৯

দ্বিতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল জে-১৬র সক্ষমতা। এফ-২২ এবং এফ-৩৫র মতো এটি পঞ্চম নয়, সাড়ে চার প্রজন্মের লড়াকু জেট। লির বয়ান অনুযায়ী, ধারে ও ভারে কম শক্তিসম্পন্ন হয়েও চক্রব্যূহে পড়ে গিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি ডিগবাজি খেতে কোনও অসুবিধা হয়নি চিনা যুদ্ধবিমানের। এরই পোশাকি নাম ‘ব্যারেল রোল’। এককথায় মাঝ-আকাশের লড়াইয়ে মার্কিন যোদ্ধা পাইলটদের তিনি ঘোল খাইয়েছেন, তা বলা যেতে পারে।

১০ ১৯

চিনা সরকারি গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ঘুরেফিরে এসেছে একটিই প্রশ্ন। সেটা হল, এফ-২২ বা এফ-৩৫র মতো ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির জেটগুলির চিহ্নিতকরণ আদৌ কি সম্ভব? তা-ও আবার চতুর্থ বা সাড়ে চার প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসে? সাবেক সেনাকর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, ব্যাপারটা কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব নয়। কারণ চতুর্থ শ্রেণির জেটে যে রেডার ব্যবস্থা থাকে, তা যথেষ্ট উন্নত এবং শক্তিশালী।

১১ ১৯

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ যুদ্ধবিমান যদি অনেক দূরে থাকে, তা হলে রেডারে তার আরসিএস কম ধরা পড়বে। কিন্তু কাছে চলে এলে একে চিহ্নিত করা মোটেই কঠিন নয়। তা ছাড়া রেডার ছাড়াও শত্রুর জেট শনাক্তকরণে ইনফ্রারেড পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। এর জন্য জে-১৬তে ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল সেন্সর থাকা মোটেই আশ্চর্যের নয়।

১২ ১৯

এগুলি ছাড়া আরও একটি ভাবে এফ-২২ এবং এফ-৩৫র মতো যুদ্ধবিমানকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। সুনির্দিষ্ট একটি কৌণিক বিন্দু থেকে রেডার সঙ্কেত পাঠালে এই দুই মার্কিন জেটের উপস্থিতি টের পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১২ সালে আমেরিকার আলাস্কায় মহড়ার সময় এই পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি র‌্যাপ্টর বিমানকে ‘লক’ করে ফেলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তৈরি ইউরোফাইটার টাইফুন।

১৩ ১৯

পরবর্তী সময়ে ফিনল্যান্ডে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা নেটোর (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) মহড়া চলাকালীন আরও এক বার মুখ পোড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর। সে বার ফরাসি জেট রাফালের রেডারে ধরা পড়ে যায় আমেরিকার একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। যুদ্ধাভ্যাসে সম্পূর্ণ ভাবে পরাস্ত হয়েছিল ওয়াশিংটনের ওই জেট। কারণ রাফাল থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর মতো জায়গাতেই ছিল না সেটি।

১৪ ১৯

চিনের তৈরি জে-১৬ জেটে রয়েছে অতি শক্তিশালী ‘অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্টিয়ার্ড অ্যারে’ রেডার। তা ছাড়া লি-র বয়ান অনুযায়ী, মার্কিন জোড়া যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক ফুট দূরে ছিলেন তিনি। ফলে তাঁর ককপিটের রেডারে এফ-২২ এবং এফ-৩৫ ধরা পড়ার দাবিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। তবে এ ব্যাপারে উল্টো যুক্তিও রয়েছে।

১৫ ১৯

বিশ্লেষকদের দাবি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে, সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়ে কোনও বিবৃতি কেন দিল না চিন? এ ব্যাপারে কূটনৈতিক ভাবে কোনও পদক্ষেপ করতেও দেখা যায়নি বেজিংকে। তা ছাড়া একসঙ্গে দুটো মার্কিন জেটকে লক করে ফেলা মোটেই সহজ নয়। লি-র ওই মন্তব্যকে তাই অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

১৬ ১৯

চলতি বছরের ১৪ জুন আরব সাগরে ভারতীয় নৌসেনার সঙ্গে মহড়ার সময় কেরলের তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির একটি এফ-৩৫বি যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ওই জেটটিতে ওই সময় যান্ত্রিক গোলযোগ ধরা পড়েছিল। কিন্তু সেটিকে ফের সক্রিয় করতে ইংরেজ নৌবাহিনীর কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। শেষে মেরামতির পর ২১ জুলাই দেশে ফেরে ওই জেট। এই এক মাস কেরলের বিমানবন্দরে খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমান।

১৭ ১৯

গত বছর আবার এফ-৩৫ জেট নিয়ে চা়ঞ্চল্যকর দাবি করে বসে একটি জার্মান সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটিতে রয়েছে একটি ‘কিল সুইচ’। যুক্তরাষ্ট্র এটি ব্যবহার করে যখন-তখন একে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারে। আর তাই কোনও দেশের আমেরিকার থেকে এফ-৩৫ কেনা উচিত নয়। যদিও জার্মান গণমাধ্যমের ওই দাবি উড়িয়ে পাল্টা বিবৃতি দেয় ওয়াশিংটন। সেখানে ‘কিল সুইচ’ থাকার বিষয়টিকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছিল মার্কিন প্রশাসন।

১৮ ১৯

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্কেরও এফ-৩৫ লড়াকু জেটটিকে নিয়ে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তাঁর কথায় এটা মোটেই খুব শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নয়। তবে গত দু’বছর ধরে চলা পশ্চিম এশিয়ার সংঘর্ষে ইজ়রায়েলি বিমানবাহিনীকে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়েছে এফ-৩৫। এর জেরে চিনা পাইলটের দাবি ঘিরে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

১৯ ১৯

বর্তমানে যুদ্ধবিমানের স্বল্পতায় ভুগছে নয়াদিল্লি। এ বছরের গোড়ার দিকে ভারতকে এফ-৩৫ কেনার সরাসরি প্রস্তাব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেন্দ্র অবশ্য তাতে সে ভাবে সাড়া দেয়নি। উল্টে রাশিয়ার থেকে পঞ্চম প্রজন্মের এসইউ-৫৭ বা ফ্রান্সের সাড়ে চার প্রজন্মের রাফাল আমদানির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, খবর সূত্রের।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement