India’s Fifth Generation Jets

মোদীর আহ্বানে ঘরের মাটিতে লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরির তোড়জোড়! বড় প্রস্তাব নিয়ে ভারতের পাশে ‘বন্ধু’ ফ্রান্স

লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরির জন্য ভারতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে ফ্রান্স। এ ব্যাপারে ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি আছে ‘রাফাল’ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নির্মাণকারী সংস্থা সাফরাঁ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৪:৪১
Share:
০১ ২০

ভারত-মার্কিন সম্পর্কের টানাপড়নে বিপাকে তেজ়স ফাইটার জেট। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সরবরাহে গড়িমসি করছে আমেরিকা। এ-হেন পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ ফ্রান্স। এ দেশের মাটিতেই জেট ইঞ্জিন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে তারা। সাবেক সেনাকর্তাদের অনেকেই একে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘গেম চেঞ্জার’ বলে উল্লেখ করেছেন।

০২ ২০

সম্প্রতি, ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এ দেশের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে ফরাসি সংস্থা সাফরাঁ। এর জন্য ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তরে রাজি তারা। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার শেষ পর্যন্ত এতে অনুমোদন দিলে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিওর (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে দেখা যাবে ওই ফরাসি সংস্থাকে।

Advertisement
০৩ ২০

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন ডিআরডিওর এক পদস্থ কর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘১২০ কিলোনিউটন ক্ষমতা সম্পন্ন জেট ইঞ্জিনের নকশা থেকে উৎপাদন, গোটা প্রক্রিয়াতেই আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইছে সাফরাঁ। সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাও যৌথ ভাবে করার ব্যাপারে দু’তরফে আলোচনা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে ওই ফরাসি সংস্থার।’’

০৪ ২০

লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরিতে ডিআরডিও-সাফরাঁ গাঁটছড়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি। সূত্রের খবর, সেই অনুমোদন পেতে খুব দ্রুত আবেদন জানাবে এ দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির আনুমানিক খরচ ৭০০ কোটি ডলার বা তার কিছু বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

০৫ ২০

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ফরাসি সংস্থা দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের তৈরি সাড়ে চার প্রজন্মের লড়াকু জেট রাফালে রয়েছে সাফরাঁর ইঞ্জিন। বর্তমানে এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ডিআরডিওর দিক থেকে জেট ইঞ্জিনের জন্য ফরাসি সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তি করতে চাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রকে এই প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

০৬ ২০

ডিআরডিওর কর্তাব্যক্তিদের দাবি, সাফরাঁর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জেট ইঞ্জিন তৈরি করলে সেটির বৌদ্ধিক স্বত্ব (ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি) পাবে ভারত। এর বাণিজ্যিক উৎপাদনের লাইসেন্সও থাকবে নয়াদিল্লির হাতে। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা যাবে যুদ্ধবিমান ইঞ্জিনের বাস্তুতন্ত্র, যা প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ‘আত্মনির্ভর’ হয়ে উঠতে অনেকাংশেই সাহায্য করবে।

০৭ ২০

বর্তমানে সামরিক হেলিকপ্টার নির্মাণে সাফরাঁর তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যাল। ফরাসি সংস্থাটির পাশাপাশি বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাণকারী ব্রিটিশ কোম্পানি রোলস রয়েস ভারতের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু, এই দৌড়ে শেষ পর্যন্ত তারা ছিটকে গিয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

০৮ ২০

চলতি বছরের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণে ঘরের মাটিতে জেট ইঞ্জিন তৈরির আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত ২২ অগস্ট একটি অনুষ্ঠানে এই নিয়ে বড় ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাফরাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতে পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেটের ইঞ্জিন নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পর ফরাসি সংস্থাটির যে ভাগ্য খুলতে চলেছে, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।

০৯ ২০

প্রযুক্তিগত দিক থেকে লড়াকু জেটের ইঞ্জিন তৈরি করা বেশ জটিল। বিশ্বের মাত্র চারটি দেশ এ ব্যাপারে সাফল্য পেয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। গত ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে এই নিয়ে গবেষণা চালিয়েও চূড়ান্ত সফলতা পায়নি চিন। জেট ইঞ্জিন প্রকল্পে ইতিমধ্যেই দু’হাজার কোটি ডলারের বেশি খরচ করে ফেলেছে বেজিং। বর্তমানে মস্কোর তৈরি ইঞ্জিনের নকল বানিয়ে প়ঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির লড়াকু জেটে ব্যবহার করছেন ড্রাগনের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

১০ ২০

সাবেক বায়ুসেনাকর্তাদের কথায়, জেট ইঞ্জিন নির্মাণ কঠিন হওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওড়ে যুদ্ধবিমান। হিমাঙ্কের প্রায় ৫০ ডিগ্রি নীচে থাকে সেখানকার তাপমাত্রা। ওই পরিবেশে লড়াকু জেটকে দ্রুত গতিতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জ্বালানি পুড়িয়ে এর ইঞ্জিনকে শক্তি উৎপন্ন করতে হয়। সেই কারণে জেট ইঞ্জিন নির্মাণকে প্রযুক্তির ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ ছুঁয়ে ফেলার শামিল বলে মনে করেন তাঁরা।

১১ ২০

যাত্রিবাহী বিমানের মতো লড়াকু জেট কখনওই একটি সুনির্দিষ্ট গতিতে ওড়ে না। যুদ্ধের সময় ঘন ঘন এর গতি বাড়াতে এবং কমাতে থাকেন বায়ুসেনার পাইলট। তা ছাড়া মাঝ-আকাশের ‘ডগ ফাইট’-এর সময় শত্রুর জেট ধ্বংস করতে যুদ্ধবিমান নিয়ে ডিগবাজি খেতে হয় তাঁদের। তার মধ্যেই সুযোগ বুঝে আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে মাটিতে নিখুঁত নিশানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে হয়।

১২ ২০

বিশ্লেষকদের দাবি, যুদ্ধবিমানের এই যাবতীয় কসরতের বিষয়টি নির্ভর করে ইঞ্জিনের উপর। আর তাই এত দিন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি কোনও দেশ। শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে ফরাসি সংস্থা সাফরাঁ এগিয়ে আসায় সমস্যা অনেকটাই মিটল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটিতে কোনও চ্যালেঞ্জই নেই, তা ভাবা ঠিক নয়।

১৩ ২০

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, ডিআরডিও-সাফরাঁ যৌথ উদ্যোগে তৈরি জেট ইঞ্জিন ব্যবহার হবে প়ঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির ‘অ্যাডভান্স মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট’ বা অ্যামকায়। ক্ষমতার নিরিখে এটি রাফালের চেয়ে আরও আধুনিক হওয়ার কথা। কারণ, ফরাসি যুদ্ধবিমানটি সাড়ে চার প্রজন্মের। সে দিক থেকে দেখতে গেলে পঞ্চম প্রজন্মের জেট ইঞ্জিন তৈরির পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই সাফরাঁর।

১৪ ২০

দ্বিতীয়ত, ১৯৮৬ সালে আত্মপ্রকাশ করে ফরাসি যুদ্ধবিমান রাফাল। তার পর থেকে গত প্রায় ৪০ বছরে আমূল বদলে গিয়েছে রণকৌশল। আধুনিক যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা’ (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) ও ড্রোন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাফরাঁ কিন্তু জেট ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে বিরাট কোনও বদল এনেছে এমনটা নয়।

১৫ ২০

গত মে মাসে অ্যামকার নমুনা তৈরির অনুমোদন দেয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটির ওজন ২৫ টন হবে বলে জানা গিয়েছে। এর নির্মাণকাজের দায়িত্ব পেতে পারে কোনও বেসরকারি সংস্থা। সে ক্ষেত্রে জেট ইঞ্জিন নির্মাণের ক্ষেত্রে সাফরাঁ তাদের সঙ্গে কী ভাবে যোগাযোগ রেখে কাজ করবে, তা স্পষ্ট নয়। তা ছাড়া, এ দেশের মাটিতে পঞ্চম প্রজন্মের জেট ইঞ্জিন তৈরি হলে তার স্বত্ব পাওয়ায় শর্ত দিতে পারে ফ্রান্সও।

১৬ ২০

বর্তমানে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানের ঘাটতি পূরণ করতে ‘তেজ়স মার্ক ১’ লড়াকু জেট দ্রুত সরবরাহের মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হ্যাল। এর ইঞ্জিনের জন্য ২০২১ সালে মার্কিন সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে ৫,৩৭৫ কোটি টাকার চুক্তি করে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। মোট ৯৯টি ‘এফ-৪০৪’ ইঞ্জিন হ্যালকে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে তাদের। কিন্তু, প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা করেনি ওই আমেরিকান সংস্থা।

১৭ ২০

‘তেজ়স মার্ক ২’তে জিই-র তৈরি ৯৮ কিলোনিউটন শক্তির ‘এফ-৪১৪’ ইঞ্জিন ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে হ্যালের। এর জন্য সংশ্লিষ্ট মার্কিন সংস্থাটির সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করতে পারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। জেট ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ প্রযুক্তি সরবরাহে রাজি আছে ওই আমেরিকান সংস্থা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণে তা ভেস্তে যেতে পারে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১৮ ২০

সাবেক বায়ুসেনাকর্তাদের দাবি, সাফরাঁ ও ডিআরডিওর যৌথ উদ্যোগে জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে সাত থেকে আট বছর সময় লাগতে পারে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে সাত স্কোয়াড্রন অ্যামকা হাতে পাবে ভারতীয় বিমানবাহিনী। অর্থাৎ, ঘরের মাটিতে তৈরি অন্তত ১২৬টি যুদ্ধবিমান শামিল হবে ফৌজের বহরে।

১৯ ২০

এ বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠানিক ভাবে অবসর নেবে ভারতীয় বায়ুসেনার ‘মিগ-২১’ যুদ্ধবিমান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) তৈরি ওই লড়াকু জেট বাতিল হলে বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রনের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ২৯। যেটা প্রায় পাকিস্তানের সমান। আর তাই জরুরি ভিত্তিতে বিদেশ থেকে কিছু পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান আমদানি করতে পারে নয়াদিল্লি।

২০ ২০

এ ব্যাপারে দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়ার তৈরি ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’। সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটির প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে মস্কো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে সফরে আসতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি এলে এ ব্যাপারে দু’তরফে প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement