America-China

‘চায়না প্লাস ওয়ান’ থেকে ‘ব্যাক টু চায়না’! ট্রাম্পের শুল্কবাণের জেরে কি আখেরে লাভের গুড় খাবে বেজিং?

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, কড়া শুল্কনীতি আরোপ করে পরোক্ষে চিনকে সাহায্য করছেন ট্রাম্প। না চাইতেও আরও শক্তিশালী বানাচ্ছেন চিনকে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের আবার চায়নামুখী করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫০
Share:
০১ ২১

৬০টিরও বেশি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই শুল্কযুদ্ধ শুরুর কারণে নানা মহলে সমালোচিত হচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

০২ ২১

কিন্তু সেই সব সমালোচনা গায়ে মাখতে নারাজ ট্রাম্প। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত একদম ‘সঠিক’। শেয়ার বাজারের ‘রেকর্ড-ভাঙা’ লাভ এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য অনুঘটকের কাজ করেছে শুল্ক আরোপের বিষয়, এমনই মনে করেন ট্রাম্প। যদিও আমেরিকার শেয়ার বাজার ট্রাম্পের ভবিষ্যদ্বাণীকে এখনও পর্যন্ত সত্যি করেনি।

Advertisement
০৩ ২১

ভারতের সঙ্গেও শুল্কযুদ্ধে নেমেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। বুধবার ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।

০৪ ২১

এর ফলে আগামী ২৭ অগস্ট থেকে ভারতকে আমেরিকায় পণ্য রফতানি করতে হলে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এই ঘোষণার পর আমেরিকাকে সর্বোচ্চ শুল্ক দেওয়া দেশগুলির তালিকায় চলে এসেছে ভারতের নাম। ভারত ছাড়া ব্রাজ়িলের পণ্যের উপরেও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া, ব্রাজ়িলের পণ্যের উপরেও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

০৫ ২১

ট্রাম্পের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। এই ‘অপরাধে’ই ভারতের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

০৬ ২১

যদিও নয়াদিল্লি আগেই এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের কথা মাথায় রেখে ভারত তার বাণিজ্যনীতি নির্ধারণ করে থাকে। অর্থাৎ, বাজারে কে কত দাম নিচ্ছে, সেই বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। রাশিয়া সস্তায় তেল বিক্রি করে বলেই ভারত তা কিনে থাকে।

০৭ ২১

শুধু ভারত নয়, ট্রাম্পের শুল্কবাণের মুখে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ। ফলে বাণিজ্যিক দিক থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। তবে সেই আবহে যে দেশ পরোক্ষ ভাবে লাভবান হতে পারে — তা হল চিন। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৮ ২১

ওই বিশেষজ্ঞদের দাবি, কড়া শুল্কনীতি আরোপ করে পরোক্ষে চিনকে সাহায্যই করছেন ট্রাম্প। না চাইতেও আরও শক্তিশালী বানাচ্ছেন চিনকে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ নীতি থেকে সরিয়ে আবার চায়নামুখী করে তুলতে পারে বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু কী ভাবে?

০৯ ২১

সম্প্রতি বাণিজ্যচুক্তি হয়েছে চিন-আমেরিকার মধ্যে। সেই চুক্তিতে কিছু শর্ত থাকলেও এখন আমেরিকার বাজারে পণ্য বিক্রিতে বাধা নেই বেজিঙের। অন্য দিকে, ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশকেই এই সুবিধা দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

১০ ২১

অন্য দিকে, ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যচুক্তি নেই। ফলে বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে নয়াদিল্লির পণ্য আমেরিকায় ঢোকা বন্ধ করতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য চুক্তি থাকার কারণে লাভবান হবে চিন। বিনিয়োগকারীদের অনেকের ‘প্রিয় পাত্র’ও হয়ে উঠতে পারে বেজিং।

১১ ২১

দ্বিতীয়ত, শুল্ক যুদ্ধের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (২৭টা দেশ), পশ্চিম এশিয়ার আরব দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করেছে আমেরিকা। চিন অনায়াসে সেই বাজারেও ঢুকে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে ড্রাগনভূমিতে পণ্য তৈরি করলে আখেরে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা।

১২ ২১

তৃতীয়ত, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থাকা চিন এমন একটি দেশ যে চাইলেই দেশের শ্রমিকদের টাকা কমিয়ে ‘শ্রম খরচ’ কমাতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্যও আকর্ষণীয়। অন্য দিকে, বেজিঙের ‘চিনা কমিউনিস্ট পার্টি’র মতো অন্য দেশের সরকার অত সহজ ‘শ্রম খরচ’ কমাতে পারবে না।

১৩ ২১

সে ক্ষেত্রে চিনের শুল্ক বেশি হলেও তুলনামূলক কম দামেই অন্য দেশে পণ্য বিক্রি করতে পারবে বেজিং। আর সেই বিষয়টিই বিনিয়োগকারীদের নতুন করে চিনমুখী হওয়ার জন্য ইন্ধন জোগাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

১৪ ২১

বিশেষজ্ঞেরা এ-ও আলোকপাত করেছেন যে, চিনা ঋণের জালে ‘ফেঁসে’ রয়েছে অনেক দেশই। ফলে বিনিয়োগকারী টেনে সেই দেশগুলিকে পণ্য কিনতে বাধ্য করতে পারে চিন। ফলে লগ্নিকারীদেরও ভরসা বজায় থাকবে ড্রাগনের উপর। তাতে আমেরিকার বাজার চিনের না পেলেও চলবে।

১৫ ২১

‘ব্রিক্‌স’ দেশগুলিকেও শুল্ক নিয়ে চাপে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্পের কড়া শুল্কনীতির কারণে ব্রাজ়িল, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশ বিরক্ত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৬ ২১

ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রাজ়িল, রাশিয়া, সাউথ আফ্রিকার মতো দেশগুলির বাজার কুক্ষিগত করার চেষ্টা করতে পারে বেজিং। আর যদি তা সম্ভবপর হয়, তা হলে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও ফুলেফেঁপে উঠতে পারে চিন।

১৭ ২১

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি অনুযায়ী, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির পণ্যেও চড়া হারে শুল্ক নেবে মার্কিন প্রশাসন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই পণ্য রফতানির জন্য বিনিয়োগকারীরা অন্য বিকল্পের কথা ভাবতে পারেন। তুলনামূলক ভাবে বেজিঙের পণ্যে শুল্কের অঙ্ক কম। আর সে ক্ষেত্রে লগ্নিকারীরা নতুন করে চিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

১৮ ২১

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর লগ্নিকারীদের একাংশ চিনের পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনের পরিকাঠামো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে সরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, বাণিজ্যিক ভাবে পণ্য তৈরির পরিকাঠামো এখনও ওই এলাকার দেশগুলিতে পুরোপুরি তৈরি হয়নি। আর তাই ফের বেজিঙের দিকেই ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছেন তাঁরা।

১৯ ২১

আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ওই দেশগুলির সঙ্গে চিনের তেমন সুসম্পর্ক না থাকলেও ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য তাদের সঙ্গে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বেজিং। একই সঙ্গে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান আরও পোক্ত করতে পারে চিনের শি জিনপিং সরকার।

২০ ২১

বাণিজ্যের জন্য চিনের বিকল্প খোঁজার ক্ষেত্রে এক সময় বিনিয়োগকারীদের ইন্ধন জুগিয়েছিল আমেরিকা। চিনা রফতানিতে রাশ টানতে দিয়েছিল ‘চায়না প্লাস ওয়ান’-এর বার্তা।

২১ ২১

তবে ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবার সেই বিনিয়োগকারীদের ভরসার পাত্র হয়ে উঠতে পারে চিন। নতুন নতুন ব্যবসা ঢুকতে পারে চিনে। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement