ভারতে ফিরে আসছে চিনা সমাজমাধ্যম টিকটক? বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দেশ জুড়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু সত্যিটা কী? আদৌ কি ভারতের বাজারে ফিরে আসবে জনপ্রিয় চিনা অ্যাপ?
বিষয়টি নিয়ে আবার জল্পনার ঝড় উঠেছে সমাজমাধ্যমে। নেটাগরিকদের একাংশ গত কয়েক দিন ধরে দাবি করতে শুরু করেছেন যে, ভারতে আবার ফিরতে চলেছে টিকটক।
শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প তথা আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বিরোধ এবং নয়াদিল্লি ও বেজিঙের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক আলোচনার আবহে সম্প্রতি কিছু সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী সেই দাবি করেছিলেন। কয়েক জন এ-ও দাবি করছিলেন যে, ভিপিএন ব্যবহার না করেই টিকটকের হোমপেজ খুলতে পারছেন তাঁরা।
এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চিন সফরের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। চলতি মাসের শেষে আন্তর্জাতিক জোট ‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন’ (এসসিও)-এর রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক রয়েছে চিনে। ওই বৈঠকে যোগ দিতে চিন সফরে যেতে পারেন মোদী। ২০২০ সালে লাদাখে ভারত-চিন সংঘর্ষের পরে এই প্রথম বার চিন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই খবরের পর টিকটক ভারতে ফেরার জল্পনার পালে ফের হাওয়া লেগেছিল। দাবি ওঠে, প্রধানমন্ত্রী চিন সফর থেকে ফেরার পর টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা উঠবে।
তবে বাস্তব জল্পনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, চিনা সংেস্থা ‘বাইটড্যান্স’-এর মালিকানাধীন এই সমাজমাধ্যম ভারতে এখনও নিষিদ্ধ। টিকটক সম্পর্কে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা-ও সম্পূর্ণ ভুয়ো বলেও জানানো হয়েছে।
আপাতত সরকারের তরফে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা তোলার কোনও পরিকল্পনা নেই বলেও মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট করা হয়েছে।
ভারত ও চিনের সীমান্ত নিয়ে সমস্যা শুরু হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯-এ ধারার অধীনে ২০২০ সালে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে টিকটক-সহ ৫৯টি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে কেন্দ্রীয় সরকার।
দেশের নিরাপত্তা এবং তথ্য গোপনীয়তার জন্য হুমকি হিসাবেও বিবেচনা করা হয়েছিল টিকটককে। সহজ কথায়, অ্যাপগুলি ভারতীয় ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখছে না বলেই সন্দেহ জেগেছিল সরকারের মনে। এর পরেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ভারতের জনপ্রিয় টিকটকারদের ভাগ্য।
তখন জল্পনা তৈরি হয়েছিল, পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভারতের মাটিতে আবার পা রাখতে পারে টিকটক। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়েও নিষেধাজ্ঞা তোলার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, সরকার টিকটকের উপর এখনও নিষেধাজ্ঞা তোলেনি। এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ করার বিষয়ে ভাবাও হয়নি।
পাশাপাশি, টিকটকের মূল সংস্থার তরফেও একটি বিবৃতি জারি করে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ভারত সরকার তাদের পরিষেবা চালু করেনি। ভারত সরকারের নির্দেশ এখনও বহাল রয়েছে। সংস্থার তরফে ভারতে পরিষেবা পুনরায় চালু করার কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলেও জানানো হয়েছে।
তা হলে কিছু সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী ভিপিএন ছাড়া কী ভাবে টিকটকের হোমপেজ দেখতে পেলেন? বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই ওই ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, নেটওয়ার্ক স্তরে কোনও সমস্যার কারণে ওয়েবসাইটটি অল্প সময়ের জন্য খোলা গিয়েছিল, ঠিক যেমনটা ২০২২ সালে হয়েছিল।
উল্লেখ্য, টিকটক অ্যাপটি বর্তমানে ভারতীয় ব্যবহারকারীদের জন্য গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে উপলব্ধ নেই।