সূর্যের আলো দেখেছেন এক মাস আগে। হাতে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়ে যাচ্ছে। জামাকাপড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর একটি আদালতে তেমনটাই দাবি করে তাঁকে বিষ দেওয়ার আবেদন জানালেন খুনের মামলায় অভিযুক্ত কন্নড় অভিনেতা দর্শন থুগুদীপা।
রেণুকা স্বামী হত্যা মামলার অভিযুক্ত দর্শন। বর্তমানে পারাপ্পানা অগ্রহারা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তিনি। মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর ওই আদালতে তাঁকে বল্লারি কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছিলেন দর্শন। কিন্তু বিচারক তা খারিজ করে দেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর ৫৭তম সিসিএইচ আদালতে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানির সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন দর্শন। বিচারককে বলেন, “প্রায় এক মাস হয়ে গেল আমি শেষ বার সূর্যের আলো দেখেছি। আমার হাতে ছত্রাকের সংক্রমণ হচ্ছে। এখানকার জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আমি কারও জন্য কিছু চাই না। দয়া করে আমায় বিষ দিন।’’
বিষ দেওয়ার ‘অনুরোধ’ জানিয়ে বিচারকের ধমকও খান কন্নড় অভিনেতা। বিচারক তাঁকে বলেন, ‘‘আপনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না।” এর পর মাথা নাড়িয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকেন কন্নড় সিনেমার ‘চ্যালেঞ্জিং স্টার’ দর্শন। আর কোনও কথা বলেননি তিনি।
তাঁর কারাগার স্থানান্তরের আবেদনও খারিজ করা হয়। তবে তাঁকে কারাগার চত্বরে হাঁটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁকে অতিরিক্ত বিছানা, অতিরিক্ত বালিশ এবং বিছানার চাদর দেওয়ারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
আদালত আরও পর্যবেক্ষণ, যে হেতু কারাগারের নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি, তাই অভিনেতাকে বেঙ্গালুরু কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা যেতে পারে।
বেঙ্গালুরুতে ওষুধের দোকানের কর্মীকে খুনের অভিযোগে গত বছরের ১২ জুন গ্রেফতার হয়েছিলেন জনপ্রিয় কন্নড় অভিনেতা দর্শন। গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী পবিত্রা গৌড়াকেও।
পেশায় ওষুধের দোকানের কর্মী রেণুকা স্বামী নামে এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছিল দর্শন এবং পবিত্রার বিরুদ্ধে। রেণুকা চিত্রদুর্গের বাসিন্দা ছিলেন। সেখানেই স্থানীয় এক ওষুধের দোকানে কাজ করতেন তিনি।
৮ জুন হঠাৎই উধাও হয়ে যান রেণুকা। তাঁর পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। এর পর বেঙ্গালুরুর সুমনাহাল্লি সেতুর কাছে রেণুকার দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, সেতুর কাছে একটি নর্দমায় একটি কুকুর রেণুকার মৃতদেহ টানাটানি করার সময় বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। তদন্তে নামে পুলিশ।
এই ঘটনায় প্রথমে তিন জনকে আটক করেছিল পুলিশ। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, রবিবার অনেক রাত পর্যন্ত অভিনেতা দর্শনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল অভিযুক্তদের।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা খুনের কথা স্বীকার করে জানান, অভিনেতা দর্শনের নির্দেশেই এই কাজ করেছেন। ধৃতদের কাছ থেকে রেণুকার পরিচয় উদ্ঘাটিত হয়।
এর পর মাইসুরুর বাগানবাড়ি থেকে আটক করা হয় দর্শন এবং পবিত্রাকে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এ ছাড়াও আরও ১০ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।
তদন্তে উঠে আসে, দর্শনের অনুরাগী ছিলেন রেণুকা। কিন্তু পবিত্রার সঙ্গে দর্শনের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক তিনি মেনে নিতে পারেননি। আর তাই ইনস্টাগ্রামে একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি প্রায়ই পবিত্রাকে আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতেন। দর্শনের সংসার ভাঙার অভিযোগ এনে পবিত্রাকে ইনস্টাগ্রামে আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এর পরেই নাকি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন দর্শন। অভিযোগ, প্রথমে তাঁর ফ্যানক্লাবের সদস্যদের দিয়ে রেণুকাকে অপহরণ করান অভিনেতা। এর পর তাঁকে একটি জায়গায় আটকে রেখে মারধর করা হয়। পরে দর্শনও সেখানে পৌঁছোন। অভিযোগ, তিনিও বেল্ট দিয়ে মারধর করেন রেণুকাকে।
দর্শন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর তাঁর ফ্যানক্লাবের সদস্যেরা রেণুকাকে আবার মারধর করেন বলে অভিযোগ। তখনই রেণুকার মৃত্যু হয়। এর পর রেণুকার দেহ ফেলে আসা হয় ওই নর্দমায়।
সেই ঘটনায় দর্শন, পবিত্রা-সহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩১ দিন কারাগারে কাটিয়েছিলেন দর্শন। এর পর গত বছরের ৩০ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তি পান। এর পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দর্শন এবং পবিত্রের জামিন মঞ্জুর করে কর্নাটক হাই কোর্ট, যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। গত ১৪ অগস্ট শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে।
কারাগারে থাকার সময়ও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দর্শন। অভিযোগ ওঠে, খুনের আসামি অভিনেতাকে জেলে ‘ভিআইপি’ সমাদর দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়েই শীর্ষকর্তাদের তলব করেন জেল কর্তৃপক্ষ। বদলে যায় দর্শনের কারাগার।
নতুন সংশোধনাগারেও দর্শনকে টিভি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ বার জেল সংশোধনাগারে তাঁর জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে দাবি করে স্থানান্তরের আবেদন জানিয়েছিলেন কন্নড় অভিনেতা।