হাজার কোটি টাকার চাকরির প্রস্তাব। সেই প্রস্তাব এসেছিল প্রযুক্তি দুনিয়ার মহারথী মার্ক জ়ুকেরবার্গের সংস্থা মেটা থেকে। টেক জায়ান্টের দেওয়া সেই হাতের লক্ষ্মীকেও পায়ে ঠেলতে দ্বিধাবোধ করেননি ২৪ বছরের তরুণ।
স্বয়ং জ়ুকেরবার্গ তাঁর ভক্ত। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি ম্যাট ডেইটকে। জ়ুকেরবার্গের জহুরির চোখ চিনে নিতে ভুল করেনি তাঁকে। এক বার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরও হাল ছাড়েননি জ়ুকেরবার্গ ও তাঁর সংস্থা মেটা। ম্যাটের প্রতিভায় এতটাই মুগ্ধ তিনি যে নিজে সাক্ষাৎ করেছেন এই তরুণ তুর্কির সঙ্গে।
এআইয়ের দুনিয়ায় মেটার শ্রেষ্ঠত্বের আসন পাকা করার লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন জ়ুকেরবার্গ ও তাঁর সংস্থা। বিশ্ব জুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সেরার সেরা কর্মীদের বাছাই করে নিয়োগের প্রক্রিয়া আরম্ভ করে দিয়েছে মেটা। মেটাকে এআই দৌড়ে সামনের সারিতে আনার জন্য এআই সেক্টরে কর্মরত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব রেখেছেন তিনি।
তেমনই প্রস্তাব গিয়েছিল ম্যাটের কাছেও। মেটা তাঁকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে, যা পেলে যে কেউই হয়তো দু’বার ভাববেন না। কিন্তু স্রোতের প্রবাহে না ভেসে হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ম্যাট। এর পর জ়ুকেরবার্গ নিজেই ছেলেটির সঙ্গে দেখা করতে যান।
দ্বিতীয় বার মেটার সিইও যখন ম্যাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান তখন তাঁর নিয়োগের প্রস্তাবের পরিমাণ একেবারে দ্বিগুণ হয়ে যায়। চার বছরের জন্য ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেতন দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হন স্বয়ং মেটাকর্তা। সেই প্রস্তাব পেয়েও গলে যাননি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বিস্ময়কর প্রতিভা।
জ়ুকেরবার্গকে তিনি জানান এই বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুমহলে আলাপ-আলোচনা করে নিতে চান। বলা বাহুল্য, জ়ুকেরবার্গও সেই শর্ত মেনে নেন। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে পরে মেটার প্রস্তাবে সম্মত হন ম্যাট। ব্যক্তিগত আলাপচারিতার পর মেটার নয়া সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাবস ইউনিটে যোগ দিয়েছেন তিনি।
কে এই ম্যাট ডেইটকে? কেনই বা তাঁর জন্য উপযাচক হয়ে নিজে সাক্ষাৎ করে তাঁর ‘ভক্ত’ হয়ে উঠেছেন জুকারবার্গ?
ম্যাট ডেইটকে কৃত্রিম মেধার জগতে একটি সুপরিচিত নাম। ম্যাট পেশায় এক জন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষক। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে যান তিনি। কিন্তু পরে মাঝপথে তা ছেড়ে চলে আসেন।
সিয়াটলের অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর এআই-তে কাজ করেন ম্যাট। এখানে কাজ করার সময় ‘মোলমো’ নামে একটি এআই চ্যাটবট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এই চ্যাটবটটি ছবি, কণ্ঠস্বর এবং লেখা ডিকোড করতে সক্ষম। কৃত্রিম মেধার ক্ষেত্রে মেটার যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ম্যাটের আবিষ্কৃত চ্যাটবটটি।
ম্যাট এবং অ্যালেন ইনস্টিটিউটের আরও কয়েক জন সহকর্মী ‘ভার্সেপ্ট’ নামে একটি এআই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার লক্ষ ছিল এআই এজেন্ট তৈরি করা। সংস্থাটিতে জনা দশেক কর্মচারী রয়েছেন। গুগ্লের প্রাক্তন সিইও এরিক স্মিথ-সহ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১.৬ কোটি ডলার বা ১৪৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছে ‘ভার্সেপ্ট’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠত্বের তীব্র প্রতিযোগিতায় মেটা সবেমাত্র সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করেন বহু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ম্যাট ডেইটকের উপর মেটার ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বাজি ধরা প্রমাণ করে দিয়েছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুদ্ধে কিঞ্চিৎ আক্রমণাত্মক কৌশলই নিতে চলেছে মেটা।
এআইয়ের বাজার দখলের প্রতিযোগিতার রণনীতিতে শঙ্কিত হয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অর্থনীতিবিদ ডেভিড অটোর নিউ ইয়র্ক পোস্টকে জানিয়েছেন, কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের পেশাদার ক্রীড়াবিদদের মতো বেতন দেওয়া হচ্ছে।
ম্যাটকে নিয়োগের জন্য মেটার এই প্রচেষ্টা এআইয়ের দুনিয়ায় একছত্র আধিপত্য কায়েম করার মহাযজ্ঞেরই অংশমাত্র বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। মেটা তাদের এআইয়ের নিত্যনতুন পণ্য তৈরিতে ১০০ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি তারা রুমিং প্যাংকে নিয়োগ করেছে, যিনি পূর্বে অ্যাপ্লের কৃত্রিম মেধার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁকেও আড়াই হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মেটা ২০২৫ সালের মধ্যে এআইয়ের মূলধন বৃদ্ধির জন্য ৭২০ কোটি ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে বলে খবর।
মেটার সর্বেসর্বা জ়ুকেরবার্গ বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছেন, বিশ্বের সেরা প্রতিভাবানদের নিয়ে একটি দল গঠন করবে মেটা। যদি কম্পিউটারে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে এবং একাধিক গিগাওয়াট ক্লাস্টার তৈরি করতে হয় তা হলে কঠোর প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। ৫০ জন বা ৭০ জন অথবা সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, শীর্ষ গবেষকদের দল তৈরি করার জন্য যা যা করা দরকার তা করা এ ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত।