CCD

CCD: সাত হাজার ২০০ কোটির ঋণ রেখে আত্মহত্যা স্বামীর, ডুবন্ত সিসিডি-কে বাঁচান ‘হিরো’ মালবিকা

অতিমারির আগে থেকেই বিপুল অঙ্কের ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছিল নতুন প্রজন্মের পছন্দের সিসিডি।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:২৮
Share:
০১ ১৭

অতিমারির ধাক্কায় ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছে দেশ-বিদেশের বহু সংস্থা। তবে কোটি কোটি টাকার ঋণের বোঝা সত্ত্বেও সে সময় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ক্যাফে কফি ডে। শুধু ঘুরে দাঁড়ানোই নয়। বাড়িয়ে নিয়েছে মুনাফাও। অথচ অতিমারির আগে থেকেই বিপুল অঙ্কের ঋণের ভারে নুয়ে পড়েছিল নতুন প্রজন্মের অনেকের পছন্দের সিসিডি। কী ভাবে হাল ফিরল দেশের বৃহত্তম কফি বার চেনের?

ছবি: সংগৃহীত।

০২ ১৭

‘এ লট ক্যান হ্যাপেন ওভার এ কাপ অব কফি’! সংস্থার প্রতিটি আউটলেটেই সংস্থার এই ট্যাগলাইন চোখে পড়ে। অনেকের মতে, ট্যাগলাইনের মতোই আকর্ষণীয় সংস্থার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। বাস্তবে সেটাই সম্ভব করেছেন মালবিকা হেগড়ে। সিসিডি-র প্রয়াত কর্ণধার ভি জি সিদ্ধার্থের স্ত্রী!

ছবি: সংগৃহীত।

Advertisement
০৩ ১৭

২০১৯ সালের জুলাইয়ে সিদ্ধার্থের আত্মহত্যার খবরে চমকে উঠেছিল গোটা দেশ। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল সিসিডি-র ভবিষ্যৎ। একে প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধারের অকালপ্রয়াণ। তায় সিসিডি-র কাঁধে সাত হাজার ২০০ কোটির ঋণের বোঝা। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা কাটিয়ে নিজেকে বাঁচানোই দায় হয়েছিল সংস্থার। সে সময়ই সংস্থার হাল ধরেন মালবিকা।

ছবি: সংগৃহীত।

০৪ ১৭

সিদ্ধার্থের মৃত্যু ছিল রহস্যে মোড়া। ৩১ জুলাই কর্নাটকের মেঙ্গালুরুর কাছে নেত্রাবতী নদী থেকে উদ্ধার হয়েছিল সিদ্ধার্থের দেহ। তার দিন দুয়েক আগেই বেঙ্গালুরু থেকে সকলেশপুরের দিকে গাড়িতে করে রওনা হয়েছিলেন তিনি। মাঝপথে মেঙ্গালুরুর দিকে গাড়ি নিয়ে যেতে বলেছিলেন চালক বাসবরাজ পাটিলকে। নেত্রাবতী নদীর উপরে একটি সেতুতে গাড়ি থামানোর পর চালককে বলেছিলেন, ‘‘একটু হেঁটে আসছি।’’ আর কখনও ফেরেননি সিদ্ধার্থ!

ছবি: সংগৃহীত।

০৫ ১৭

রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ার পর দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণের জামাই সিদ্ধার্থের খোঁজে নেত্রাবতী নদীতে চিরুনিতল্লাশি চলেছিল। অবশেষে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। তার আগেই পাওয়া গিয়েছিল একটি টাইপ করা চিঠি। তাতে ছিল সিদ্ধার্থের স্বাক্ষর।

ছবি: সংগৃহীত।

০৬ ১৭

তদন্তকারীরা ওই চিঠি থেকে জানতে পারেন, ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সংস্থার ঋণ সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা। সংস্থায় বিনিয়োগকারী একটি প্রাইভেট ইকুইটি পার্টনার-সহ অন্যান্যরা যে সিদ্ধার্থের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করছেন, তা-ও লেখা ছিল চিঠিতে। পাশাপাশি আয়কর দফতরের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ ছিল তাতে।

ছবি: সংগৃহীত।

০৭ ১৭

সিদ্ধার্থের স্বাক্ষরিত চিঠিতে সিসিডি-র পরিচালন পর্ষদ ও কর্মীদের উদ্দেশে লেখা, ‘৩৭ বছর ধরে আমি কঠিন পরিশ্রম করেছি। সিসিডি-র মাধ্যমে ৩০ হাজার এবং একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু লাভজনক ব্যবসার উপযুক্ত মডেল তৈরি করতে পারিনি।’

ছবি: সংগৃহীত।

০৮ ১৭

ওই চিঠিতে আরও লেখা ছিল, ‘একটি প্রাইভেট ইক্যুইটি পার্টনারের প্রবল চাপের ফলে মাস ছয়েক আগে এক বন্ধুর কাছ থেকে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়ে বাজার থেকে শেয়ার ফেরাতে হয়েছিল। এই চাপ আর সহ্য করতে পারছি না। অন্য ঋণদাতারাও প্রবল চাপ দিচ্ছেন। আয়কর দফতরও আমাকে অন্যায় ভাবে হেনস্থা করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইন্ডট্রি-র সঙ্গে আমাদের চুক্তি আটকানোর জন্য আয়কর দফতরের প্রাক্তন ডিজি দু’বার আমাদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। তার পরে সিসিডি-র শেয়ারেরও দখল নিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা নিয়ম মেনেই সংশোধিত আয়কর রিটার্ন পেশ করেছিলাম। আয়করের এই পদক্ষেপের ফলে প্রবল আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।’

ছবি: সংগৃহীত।

০৯ ১৭

ব্যক্তিগত জীবনের শোকের আবহেই সিসিডি-র হাল ধরেছিলেন মালবিকা। ২০২০ সালে সিসিডি-র মূল সংস্থা কফি ডে এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড (সিডিইএল)-এর সিইও হন তিনি। যদিও ঋণগ্রস্ত সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ছিল ব্যবসায়িক মহল। সিইও হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে সংস্থার কর্মীদের উদ্দেশে একটি চিঠি লেখেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

১০ ১৭

চিঠিতে মালবিকা লিখেছিলেন, ‘সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী। বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ করা অংশ বিক্রি করে ঋণের বোঝা নিয়ন্ত্রণযোগ্য স্তরে নামিয়ে আনতে আমরা কাজ করব।’

প্রতীকী ছবি।

১১ ১৭

দু’বছরের মধ্যে সংস্থার ঋণ কমানোর পাশাপাশি ব্যবসাও বাড়িয়েছেন মালবিকা। কাকতালীয় ভাবে, এই চিঠি লেখার কয়েক ঘণ্টা আগেই সিসিডি-র অন্তর্বর্তী তদন্তে জানা গিয়েছিল, সিদ্ধার্থের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে ২ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা!

ছবি: সংগৃহীত।

১২ ১৭

২০২০ সালে সিইও হওয়ার আগে থেকেই সিডিইএল-এর নন-এগ্‌জিকিউটিভ বোর্ড সদস্য হিসাবে কাজ করছিলেন মালবিকা। রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা মালবিকার জন্ম ১৯৬৯ সালে। বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভের পর ১৯৯১ সালে সিদ্ধার্থকে বিয়ে করেছিলেন। দুই ছেলে ঈশান এবং অমর্ত্যকে সামলে কফি ব্যবসার খুঁটিনাটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতেন।

ছবি: সংগৃহীত।

১৩ ১৭

লকডাউন চলাকালীন ঋণদাতাদের বিপুল অঙ্কের টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন মালবিকা। সিইও হিসাবে প্রথম বছরেই সাফল্য! ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সংস্থার ঋণ ছিল সাত হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরের আর্থিক বর্ষে অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে তা তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

ছবি: সংগৃহীত।

১৪ ১৭

২০২১ সালের ৩১ মার্চে সিডিইএল-এর প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি, এক হাজার ৭৩১ কোটি টাকার ঋণ মেটানো বাকি রয়েছে সংস্থার। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে মোট ঋণের তহবিলে এক হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা হয়েছে। তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এক হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। ৫১৬ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদী ঋণ রয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

১৫ ১৭

ঋণদাতাদের টাকা মেটানোর ফাঁকেই ব্যবসা সম্প্রসারণে মন দিয়েছে সিসিডি। এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে ৩৩৩টি সিসিডি ভ্যালু এক্সপ্রেস কিয়স্ক-সহ ৫৭২টি ক্যাফের মালিকানা রয়েছে সংস্থার। সব মিলিয়ে ৩৬ হাজার ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে কফিপ্রেমীদের টানছে সিসিডি।

ছবি: সংগৃহীত।

১৬ ১৭

আপাত অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে প্রয়াত স্বামী সিদ্ধার্থের স্বপ্ন সফল করতে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মালবিকা। তিনি বলেন, ‘‘গত ১২ মাস ধরে আমার লক্ষ্যই ছিল সিদ্ধার্থের উত্তরাধিকার বজায় রাখা। আমার জন্য একটা কাজ বাকি রেখে গিয়েছে সিদ্ধার্থ। প্রত্যেক ঋণদাতার প্রতিটি পাইপয়সা ফেরত দেওয়া। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তা-ই করতে চেয়েছি। সেই সঙ্গে ব্যবসা বাড়ানো এবং আমাদের কর্মীদের স্বার্থরক্ষাও করার চেষ্টা করেছি।’’

ছবি: সংগৃহীত।

১৭ ১৭

কর্মীদের দেওয়া কথা রেখেছেন ৫১ বছরের মালবিকা। সিইও হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দু’বছরের মধ্যেই সিসিডি-র ৭৫ শতাংশ ঋণ মিটিয়ে দিয়েছেন। আক্ষরিক অর্থেই তিনি যেন গুণে সরস্বতী!

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement