গত ১৫ অগস্ট ইউক্রেন যুদ্ধে রাশ টানতে আলাস্কার অ্যাঙ্কারেজ়ে মুখোমুখি বৈঠক করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের পরেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছিল একটি রিপোর্টে।
সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের সময় পুতিনের দেহরক্ষীরা তাঁর মলমূত্র সংগ্রহের জন্য একটি ‘পুপ স্যুটকেস’ নিয়ে গিয়েছিলেন।
অদ্ভুত মনে হলেও সেই প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। এর পরেই জল্পনা ওঠে, রাশিয়ার সুপ্রিমোর স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাতে বিদেশি শক্তির হাতে না চলে যায়, তার জন্যই নাকি ছিল ওই বন্দোবস্ত।
পুতিনের পর এ বার খানিকটা একই রকম কাণ্ড ঘটালেন ডেমোক্র্যাটিক পিপল্স রিপাবলিক অফ কোরিয়ার (উত্তর কোরিয়া) অবিসংবাদী নেতা কিম জং উন। তা-ও আবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরেই।
জানা গিয়েছে, বেজিংয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর কিমের উপস্থিতি সংক্রান্ত সব চিহ্ন মুছে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
অর্থাৎ, বৈঠক চলাকালীন কিম যে চেয়ারে বসেছিলেন, যে গ্লাসে পান করেছিলেন, সে সবই পরিষ্কার করে মুছে দিয়ে বেজিং ছেড়েছে উত্তর কোরিয়ার একনায়কের দল। কিন্তু কেন?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং জাপানের বিরুদ্ধে চিনের যুদ্ধজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে বুধবার বেজিঙে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল পুতিন এবং কিমকে।
বেজিঙে সামরিক কুচকাওয়াজের পর একান্তে ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠকে বসেন পুতিন এবং কিম। কিন্তু সেই বৈঠকশেষে দেখা যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য।
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার স্পর্শ করা জিনিসপত্র সাবধানে মুছে ফেলেন তাঁর দলের কর্মীরা। তিনি যে গ্লাসে পান করেছিলেন, তা-ও অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাসায়নিকের সাহায্যে পরিষ্কার করে মুছে দেওয়া হয় চেয়ারও।
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, কিমের কোনও তথ্য যাতে বিদেশি চরদের হাতে না পড়ে, তার জন্যই ওই ব্যবস্থা। কারণ, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা নাকি চান না যে তাঁর ডিএনএ সংক্রান্ত কোনও তথ্য বিদেশি শক্তির হাতে চলে যাক।
সাম্প্রতিক সময়ে কিম এবং পুতিনের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব’ গাঢ় হয়েছে। কিন্তু সেই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরেও কিমের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলার যে চেষ্টা উত্তর কোরিয়াকে করতে দেখা গিয়েছে, তা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আন্তর্জাতিক মহলের।
পুতিনের সঙ্গে কিমের বৈঠক শেষ হওয়ার পর কিমের দলের অতিসক্রিয়তার একটি ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় কিম যে চেয়ারে বসেছিলেন, কী ভাবে তা অতি সাবধানে মুছে দিচ্ছেন তাঁর সহচরেরা। তাঁর গ্লাসও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
প্রথমে চেয়ারের পিছনের অংশ এবং হাতল পরিষ্কার করা হয় সতর্কতা অবলম্বন করে। তার পর কিমের চেয়ারের পাশে একটি কফি টেবিলও পরিষ্কার করা হয়। কিমের পানীয়ের গ্লাসও কৌশলে নিয়ে বেরিয়ে যান কিমের এক কর্মী।
দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানি গোয়েন্দা সংস্থাকে উদ্ধৃত করে জাপানি সংবাদপত্র নিক্কেইয়ের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, পূর্ববর্তী বিদেশ ভ্রমণের মতো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য গোপন রাখতে বেজিং সফরেও কিমের মলমূত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। যেমনটা ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে পুতিনের মলমূত্রও সংগ্রহ করেছিলেন তাঁর দেহরক্ষীরা।
তবে পুতিনের মতো কিমের ক্ষেত্রে কোনও ‘পুপ স্যুটকেস’ বহন করা হয়নি। বরং, নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আস্ত একটি শৌচাগার। তেমনটাই খবর ছড়িয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যাডেন জানিয়েছেন, কিমের পূর্বসূরি, তাঁর বাবা কিম জং ইলের সময়েও নাকি এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল। ম্যাডেনের কথায়, ‘‘বিশেষ শৌচালয় এবং মানববর্জ্য যাতে কোনও বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা, এমনকি কোনও বন্ধু দেশের গোয়েন্দা সংস্থার হাতেও না পড়ে, তার জন্যই ওই বন্দোবস্ত।’’
কিমের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও তথ্য যাতে বিদেশিদের হাতে না পড়ে তার জন্যই তেমনটা করা হয়। এমনকি, তাঁর চুল এবং ত্বকের ছাপও মুছে ফেলা হয় বলে ম্যাডেন জানিয়েছেন।
২০১৯ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হ্যানয়ের শীর্ষ সম্মেলনের পর, হোটেলের ঘর আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তা পরিষ্কার করতে দেখা গিয়েছিল কিমের রক্ষীদের।
২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে বৈঠকের সময়, উত্তর কোরিয়ার নিরাপত্তারক্ষীরা চেয়ার এবং টেবিল স্যানিটাইজ়ার দিয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিলেন।
২০২৩ সালে পুতিনের সঙ্গে আর একটি শীর্ষ সম্মেলনে বসার আগে কিমের নিরাপত্তারক্ষীরা উত্তর কোরিয়ার একনায়কের চেয়ার জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলেন। চেয়ারটি নিরাপদ কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হয়।