গত ১৫ অগস্ট ইউক্রেন যুদ্ধে রাশ টানতে আলাস্কার অ্যাঙ্কারেজ়ে মুখোমুখি বৈঠক করেন রাশিয়া ও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাতে ইতি টানতেই এই পদক্ষেপ তাঁর।
দুই রাষ্ট্রনেতা ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের কথা জানালেও সেখানে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কোনও রফাসূত্র মেলেনি। আলাস্কার বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টের পাঁচটি দাবি শুনে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিনিময়ে বেশ কিছু বিষয়ে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছে রাশিয়াও।
আপাতত তাদের পাঁচটি দাবি নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের দর কষাকষির পালা। অনেকের মতে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার পাঁচ দাবি মানতে রাজি করাতে পারলেই ইতি পড়তে পারে দুই দেশের মধ্যে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে।
তবে সে সব তো হল কঠিন ব্যাপার। আন্তর্জাতিক মহলের আলোচনা-সমালোচনার বিষয়। সেই আবহেই পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক নিয়ে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে এক রিপোর্টে।
‘দ্য এক্সপ্রেস ইউএস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনের সময় পুতিনের দেহরক্ষীরা তাঁর মলমূত্র সংগ্রহের জন্য একটি ‘পুপ স্যুটকেস’ নিয়ে গিয়েছিলেন।
অদ্ভুত হলেও সেই প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন ওই স্যুটকেস বহন করছিলেন পুতিনের দেহরক্ষীরা?
রাশিয়ার একনায়কের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাতে বিদেশি শক্তির হাতে না চলে যায়, তার জন্যই নাকি ওই বন্দোবস্ত।
‘দ্য এক্সপ্রেস ইউএস’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এই প্রথম নয়, রুশ প্রেসিডেন্ট যেখানেই যান, তাঁর মলমূত্র সংগ্রহের জন্য দেহরক্ষীরা ওই স্যুটকেস সঙ্গে করে নিয়ে যান। পুতিনের মলমূত্র সংগ্রহ করে আবার তা রাশিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়।
এমনিতেই পুতিনের সুরক্ষার জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সব সময় তাঁকে ঘিরে রাখেন দেহরক্ষীরা। নেওয়া হয় বিশেষ কিছু ব্যবস্থা। তার মধ্যেই একটি ওই ‘পুপ স্যুটকেস’।
ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘প্যারিস ম্যাচ’-এর তদন্তমূলক সাংবাদিক রেজিস জেন্টে এবং মিখাইল রুবিনকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য এক্সপ্রেস ইউএস’ জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দল ‘ফেডারেল প্রোটেকশন সার্ভিস (এফপিএস)’-এর সদস্যেরা পুতিনের মল-সহ সমস্ত মানববর্জ্য সংগ্রহ করে।
ওই দুই সাংবাদিক আরও জানিয়েছেন যে, পুতিনের শরীর নিঃসৃত সেই বর্জ্য বিশেষ ব্যাগে সংরক্ষণ করেন তাঁরা। এর পর সেটিকে একটি স্যুটকেসে রেখে দেওয়া হয়।
‘দ্য এক্সপ্রেস ইউএস’ জানিয়েছে, ২০১৭ সালের মে মাসে পুতিনের ফ্রান্স সফরের সময়ও তেমনটা করেছিলেন তাঁর দেহরক্ষীরা। জল্পনা, বিদেশি শক্তি পুতিনের মানববর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করে যাতে তাঁর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে কিছু জানতে না পারে, তার জন্যই ও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অন্য এক সাংবাদিক ফরিদা রুস্তমোভাও জানিয়েছেন, পুতিনের ভিয়েনা সফরের সময়ও এই ধরনের ব্যবস্থা ছিল। ওই সফরের সময় একটি ‘বহনযোগ্য শৌচালয় (পোর্টেবেল টয়লেট)’ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষীরা।
তিন বছর আগে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়া ইস্তক ৭২ বছর বয়সি রুশ প্রেসিডেন্টের ‘শারীরিক অসুস্থতা’ নিয়ে নানা খবর প্রচারিত হয় পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমে।
পুতিনের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা নতুন নয়। কয়েক বছর ধরেই পুতিনের অসুস্থতা নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হয়েছে। কখনও দাবি করা হয়েছে তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। কখনও প্রকাশ্যে এসেছে মাথায় টিউমার, কিডনির সমস্যায় দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, পার্কিনসন্সে আক্রান্ত হয়ে জিভে জড়তার কারণে বাক্শক্তি রহিত হওয়ার ‘খবর’।
এমনকি, পুতিনের ক্যানসার হয়েছে বলেও প্রচার চলেছে পশ্চিমি কিছু সংবাদমাধ্যমে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল।
বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকের সেই ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছিল, ঠিক ভাবে পা ফেলতে পারছেন না পুতিন। পায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই তাঁর।
সমাজমাধ্যমে সেই ভিডিয়ো দেখে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন পুতিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে। যদিও ক্রেমলিনের তরফে বার বার পুতিনের অসুস্থতা নিয়ে যাবতীয় ‘খবর’ খারিজ করা হয়েছে জোর গলায়।
এর পর গত নভেম্বরে কাজাখস্তানে এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের পা কাঁপার ভিডিয়ো ছড়িয়েছিল। ছড়িয়েছিল জল্পনা। এ বার সেই আবহেই প্রকাশ্যে এল এই অদ্ভুত তথ্য। যদিও এই বিষয়ে মুখ খোলেনি মস্কো।