What is Johatsu

বছরে লক্ষাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় ‘উধাও’ হয়ে যান এশিয়ার ছোট্ট দেশ থেকে! নেপথ্যে রয়েছে হাড়হিম করা কারণ

প্রতি বছরই উদীয়মান সূর্যের দেশে লক্ষাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় ‘নিখোঁজ’ হতে পছন্দ করেন। জাপানের বহু মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের জীবন, চাকরি, বাড়িঘর এবং পরিবার ত্যাগ করে উধাও হয়ে যান।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৫ ১৩:৩৯
Share:
০১ ১৭

মাথায় চেপেছে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা। অথবা সাংসারিক চাপে বীতশ্রদ্ধ অবস্থা। কেউ আবার প্রেমে আঘাত পেয়ে হতাশ হয়ে জীবন শেষ করে দিতে চান। মনে হয় যদি সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে ‘নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে’ নেওয়া সম্ভব হত! কিন্তু চাইলেই তো আর হারিয়ে যাওয়া যাবে না। আইনরক্ষাকারীদের কবল এড়িয়ে উধাও হওয়া কি সম্ভব?

০২ ১৭

সম্ভব। পৃথিবীতে এমন একটি দেশ আছে যেখানে হারিয়ে যেতে মানা নেই। এশিয়ার বুকেই আছে সেই দেশ। সেখানে গাঁটের কড়ি ফেললে ইচ্ছামতো উধাও হয়ে যাওয়ার ‘পাসপোর্ট’ পাওয়া যায়। পরিষেবার আকারে, অর্থের বিনিময়ে ‘গুম’ করে দেওয়া হয় ইচ্ছুক ব্যক্তিদের।

Advertisement
০৩ ১৭

প্রতি বছরই উদীয়মান সূর্যের দেশে লক্ষাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় ‘নিখোঁজ’ হতে পছন্দ করেন। জাপানের বহু মানুষ আছেন যাঁরা তাঁদের জীবন, চাকরি, বাড়িঘর এবং পরিবার ত্যাগ করে উধাও হয়ে যান। জাপানে এমন কিছু সংস্থা রয়েছে, যারা এই ব্যক্তিদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

০৪ ১৭

জাপানে এই পরিষেবা বা ব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ। এই ধরনের মানুষকে অভিহিত করা হয় ‘জোহাৎসু’নামে। এই জাপানি শব্দের অর্থ সম্পূর্ণ উবে যাওয়া বা উধাও হয়ে যাওয়া। যাঁরা বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে লুকোতে চান, তাঁদের বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

০৫ ১৭

এঁরা তাঁদের নিজস্ব জীবন থেকে হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝরাতে কাউকে কিছু না বলেই তাঁদের বাড়িঘর, চাকরি এবং পরিবার ছেড়ে দ্বিতীয় জীবন শুরু করেন। প্রায়শই তাঁরা আর পিছনে ফিরে তাকাতে চান না। প্রথম জীবনের সমস্ত পরিচয়ের খোলস ছেড়ে তাঁরা প্রবেশ করেন জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে।

০৬ ১৭

সম্প্রতি একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছর এক লক্ষেরও বেশি মানুষ এ ভাবে নিখোঁজ হন। যে সংস্থাগুলি নিখোঁজ হওয়ার জন্য সহায়তা করে তাদের জাপানি ভাষায় ‘ইয়োনিগেয়া’ বলা হয়। ইংরেজিতে এদেরই নাম ‘নাইট মুভার্স’। পারিবারিক নির্যাতন বা ঋণের বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাওয়া মানুষদের শেষ আশা এই সংস্থাগুলি।

০৭ ১৭

হঠাৎ করে উধাও হয়ে যেতে চাওয়া মানুষগুলি কোথায় আছেন বা কী করছেন, সেই সমস্ত তথ্য গোপন রাখার সমস্ত বন্দোবস্ত করে সংস্থাগুলি। এই অ়জ্ঞাতবাস পর্ব চলতে পারে এক বছর থেকে শুরু করে কয়েক দশক পর্যন্ত। গোপন স্থানে থাকারও ব্যবস্থা করে দেয় সংস্থাটি।

০৮ ১৭

ইচ্ছুক ব্যক্তিদের কাছে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সংস্থাটি। তাঁদের চাহিদা জানার পর খরচ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। সেই খরচ ২ লক্ষ টাকা থেকে ১৮ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। কার সমস্যা কতটা গভীর বা উধাও হওয়ার পদ্ধতি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে তার উপর খরচ নির্ভর করে।

০৯ ১৭

এর পরে গ্রাহক ও সংস্থার একটি মুখোমুখি বৈঠক হয়। তার পর দু’পক্ষের সম্মতিতে স্থির হয় পরবর্তী কার্যপ্রণালী। কী ভাবে আত্মগোপন করবেন ও কোথায় থাকবেন, সবই সংস্থার ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন হয়। নতুন পরিচয়পত্র পেতে সাহায্য করে ‘নাইট মুভার্স’ নামে পরিচিত সংস্থাগুলি।

১০ ১৭

‘‘সম্পর্কের প্রতি আমার বিরক্তি এসে গিয়েছিল। আমি একটি ছোট স্যুটকেস নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলাম”— বলেন ৪২ বছর বয়সি সুগিমোতো (নাম পরিবর্তিত)। নিজের অজ্ঞাতবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, ছোট্ট শহরে সবাই তাঁকে চিনত। তাঁর পরিবার ছিল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবার।

১১ ১৭

সুগিমোতোর উপর পরিবারের সকলের প্রত্যাশা ছিল, তিনি পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেবেন। কিন্তু তিনি এই পেশায় আসতে চাননি। তাঁকে জোর করে ব্যবসায় নামানোর চেষ্টা করেন পরিবারের সদস্যেরা।

১২ ১৭

এই সিদ্ধান্ত তাঁকে এতটাই কষ্ট দেয় যে তিনি তার থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন। হঠাৎ করেই সুগিমোতো চিরতরে তাঁর পরিবার ও শহর ছেড়ে উধাও হয়ে যান। তিনি কোথায় যাচ্ছেন সে সম্পর্কে কোনও আভাস পাননি তাঁর আত্মীয়-পরিজনেরাও।

১৩ ১৭

৯০-এর দশকে শো হাতোরি নামের জাপানি ব্যক্তি অজ্ঞাতবাসে সাহায্য করে এই রকম একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময়ে জাপানের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধস নেমেছিল। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন জাপানিরা হয়তো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণেই তাঁদের সমস্যা জর্জরিত জীবন থেকে পালিয়ে যেতে চাইছেন।

১৪ ১৭

খুব শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে শুধু আর্থিক নয়, আরও কিছু সামাজিক কারণও রয়েছে এর নেপথ্যে। হতাশা, নেশায় আসক্তি, অথবা বিবাহবিচ্ছেদের মতো সমস্যাগুলিও হঠাৎ অন্তর্ধানের অন্যতম কারণ বলে উঠে আসে।

১৫ ১৭

জাপানে, গোপনীয়তা অত্যন্ত মূল্যবান। অন্য কোনও কারণ না থাকলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে না। অপরাধঘটিত কারণ খুঁজে না পেলে অথবা দুর্ঘটনা না ঘটলে সরকারি ভাবে কোনও তত্ত্বতালাশ করা হয় না। যাঁরা ‘জোহাৎসু’, পুরনো জীবন পিছনে ফেলে চলে এসেছেন তাঁদের সিসিটিভি ক্যামেরা বা এটিএম-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিয়ে সমস্যা নেই। কারণ প্রশাসনের নজরদারি বা অনুসরণ করা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

১৬ ১৭

যাঁরা সফল ভাবে ‘জোহাৎসু’ হন তাঁরা প্রায়শই শান্তিপূর্ণ এলাকায় চলে গিয়ে বসবাস করেন। কম জনবসতিপূর্ণ এলাকা বেছে নেন নতুন জীবনের জন্য। এমন ছোট ছোট চাকরি গ্রহণ করেন যেখানে তাঁদের পূর্বজীবনের পটভূমি পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয় না।

১৭ ১৭

‘জোহাৎসু’দের সকলেই যে দ্বিতীয় জীবন বা অজ্ঞাতবাসে গিয়ে সুখী হন তা নয়। কেউ কেউ সামাজিক চাপ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবনে স্বস্তি খুঁজে পান। আবার অনেকে একাকীত্বের অনুভূতিকে মেনে নিতে কষ্ট পান। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে সেই আবর্তের মধ্যেই পড়ে যান তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement