Ukraine

Volodymyr Zelenskyy: পর্দার প্রেসিডেন্টই সামলাচ্ছেন কিভকে, রুশ আগ্রাসনেও দেশ ছাড়েননি প্রাক্তন কৌতুকশিল্পী

সাত বছর আগেকার সেই অভিনেতা যে বাস্তবেও দেশের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে উঠবেন, তা বোধ হয় কল্পনাও করতে পারেননি রাজনৈতিক পণ্ডিতরা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৩০
Share:
০১ ১৯

সাত বছর আগে একটি কমেডি সিরিজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ৩৮ বছরের সেই অভিনেতা যে বাস্তবেও দেশের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে উঠবেন, তা বোধ হয় কল্পনাও করতে পারেননি রাজনৈতিক পণ্ডিতরা। এককালের জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী থেকে প্রেসিডেন্ট— কী ভাবে ইউক্রেনের সর্বেসর্বা হয়ে উঠলেন ভোলোদিমির জেলেনস্কি?

০২ ১৯

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে ইউক্রেনকে ‘একা’ই নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৪৪ বছরের জেলেনস্কি। পুতিনবাহিনীর এক নম্বর লক্ষ্য যে তিনি এবং তাঁর পরিবার, তা-ও ভাল মতোই জানেন। বৃহস্পতিবার (স্থানীয় সময় ভোর ৬টা নাগাদ) থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী। ইউক্রেনের রাজধানী কিভের মাটিতেও ঢুকে পড়েছে তারা। পালাননি তো বটেই, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে একাই গড় সামলাচ্ছেনে জেলেনস্কি।

Advertisement
০৩ ১৯

অভিনেতা থেকে রাষ্ট্রনেতা হয়ে উঠলেও জেলেনস্কির রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। তবে রাশিরায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা এই নেতার সাহসী মনোভাবকে অগ্রাহ্য করতে পারছেন না তাঁর সমালোচকরাও।

০৪ ১৯

কাকতালীয় ভাবে, এককালে রাশিয়ার শিল্পীদের ইউক্রেনে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনায় বাধ সেধেছিলেন জেলেনস্কি। তৎকালীন ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন। সে সময় অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে শতহস্ত দূরে ছিলেন তিনি। তবে অভিনেতা তথা ইউক্রেনের নাগরিক হিসাবে নিজের রাজনৈতিক মতামত জানাতে কসুর করেননি। ২০১৪ সালে শিল্পকে হাতিয়ার করেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী বার্তা দিতেন জেলেনস্কি।

০৫ ১৯

দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের ক্রাইভিই রিহ অঞ্চলে ১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম। ওই অঞ্চলেই বেড়ে ওঠা ভোলোদিমির ওলেকজান্দ্রোভিজ জেলেনস্কির। ঘটনাচক্রে, তাঁর বাড়ির আশপাশে রাশিয়াভাষীদের বসতিই বেশি। বাবা ক্রাইভিই রিহ ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক্স-এ সাইবারনেটিক্স এবং কম্পিউটিং হার্ডওয়্যারের অধ্যাপক। মা ছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার।

০৬ ১৯

লড়াইটা বোধহয় জেলেনস্কির রক্তবাহিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জেলেনস্কির ঠাকুরদা রেড আর্মির হয়ে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিলেন। এককালে নাৎসি বাহিনীর হাতে ঠাকুরদার পরিবারের অনেকে নিহত হয়েছিলেন। সে সব কাহিনি শুনেই বড় হয়েছেন জেলেনস্কি।

০৭ ১৯

১৬ বছর বয়সে ইজরায়েলে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল তাঁর। সদ্য ইংরেজি ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে বাবার অনুমতি না মেলায় ইজরায়েল যাওয়া আর হয়নি। স্কুলের পড়াশোনার শেষে ভর্তি হতে হয়েছিল ক্রাইভিই রিহ ইনস্টিটিউট অব ইকনমিক্স-এ। সেখান থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনার পর ডিগ্রি লাভ। তবে আইনজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছে ছিল না জেলেনস্কির।

০৮ ১৯

প্রথাগত পড়াশোনার শেষে জেলেনস্কি অভিনয়ের দিকে ঝুঁকেছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে একটি কমেডি শোয়ে দলবল নিয়ে যোগ দেন। সেই প্রতিযোগিতামূলক কমেডি শো থেকে নজরে পড়ে যান জাতীয় স্তরে।

০৯ ১৯

১৯৯৭ সালে সেই কমেডি প্রতিযোগিতাও জিতে ফেলেন জেলেনস্কিরা। সে বছরেই ‘কিভারতাল ৯৫’ নামে একটি দল খুলে ফেলেন জেলেনস্কি। ১৯৯৮ থাকে ২০০৩ সালে নিজের দল নিয়ে মস্কো-সহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একাধিক দেশে দলের সঙ্গে শো করতে গিয়েছেন তিনি।

১০ ১৯

২০০৩ সালে জেলেনস্কির পেশাদার জীবনে বড় মোড় আসে। সে বছর থেকেই টেলিভিশনের জন্য কমেডি শো তৈরি করতে শুরু করেন জেলেনস্কি।

১১ ১৯

২০০৮ সালে অভিনেতা জেলেনস্কির আরও ব়ড় সুযোগ পেয়ে যান। টেলিভিশনের পর্দায় থেকে সিনেমায় লাফ দেন তিনি। সে বছর ‘লভ ইন দ্য বিগ সিটি’ দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক করেন জেলেনস্কি। বছর দুয়েক পর এর সিক্যুয়েল এল ‘লভ ইন দ্য বিগ সিটি-২’। তাতেও ছিলেন জেলেনস্কি। এর পর ‘অফিস রোম্যান্স’, ‘আওয়ার টাইম’ বা ‘এইট ফার্স্ট ডেটস’-এর মতো ছবিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত রুপোলি পর্দায় বেশ কয়েকটি ছবি করেছিলেন জেলেনস্কি।

১২ ১৯

পেশাদার অভিনেতার জীবনে এক সময় প্রেমও এসেছিল। এককালে স্কুলের সহপাঠী ওলেনা জেলেনস্কাকে জীবনসঙ্গী করেন জেলেনস্কি। সেটি ছিল ২০০৩ সাল। তবে একই স্কুলে পড়াশোনা করলেও পরিচয় ছিল না তাঁদের।

১৩ ১৯

পরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তাঁদের আলাপ হয়েছিল। বিয়ের আগে প্রায় আট বছর ডেটিং করেন ওলেনা এবং ভোলোদিমির।

১৪ ১৯

সিনেমায় অভিনয় করলেও জেলেনস্কির কেরিয়ারে খ্যাতি এনে দিয়েছিল একটি টেলিভিশন শো। ২০১৫ সালে ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপ্‌ল’ নামে কমেডি শোয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল জেলেনস্কিকে। খানিকটা বাঁকা চোখে দেখে সেই শোয়ের মাধ্যমে রাজনীতির বিষয়গুলিকে আক্রমণ করেছিলে ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপ্‌ল’। তাতে রাতারাতি তারকা হয়ে যান জেলেনস্কি।

১৫ ১৯

‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপ্‌ল’-এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন জেলেনস্কি। ইউক্রেন সরকারের সমালোচকের ভূমিকায় জেলেনস্কির জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে। টেলিভিশনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ওই সিরিজে মেতেছিলেন ইউক্রেনবাসী।

১৬ ১৯

কমেডি শোয়ের প্রতিবাদী চরিত্রই এক সময় দেশের প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে নাম লেখান। ২০১৮ সালে ‘কিভারতাল ৯৫’ নামেই রাজনৈতিক দল খোলেন।

১৭ ১৯

পরের বছর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ছ’মাসের মধ্যেই জনমত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে জেলেনস্কি। জিতেও যান তিনি। ২০১৯ সালে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী পেত্রো পোরোশেঙ্কোকে হারান। প্রায় ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন জেলেনস্কি।

১৮ ১৯

বিপুল ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হলেও প্রচারের সময় রাজনীতির গুরুগম্ভীর বিষয় তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন বলে জেলেনস্কির নিন্দকদের দাবি। মূলত ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউবের মতো নেটমাধ্যম ব্যবহার করেই জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন বলেও দাবি তাঁদের।

১৯ ১৯

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টই সাম্প্রতিক যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছেন। তবে জেলেনস্কির পাল্টা দাবি, ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’, ‘উষ্ণ যুদ্ধ’ বা ‘হাইব্রিড ওয়ার’— কোনওটিরই পক্ষে নন তিনি। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার জনগণের কাছে ‘আসল সত্য প্রত্যক্ষ’ করার আর্জি জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। সেই সঙ্গে তাঁর আরও আবেদন, বেশি দেরি হওয়ার আগে যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত!

ছবি: পিটিআই, রয়টার্স এবং সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement