What is thorium

মাটি-বালির মধ্যে লুকিয়ে অফুরান শক্তি! ইউরেনিয়ামের যুগ কি শেষ? ভারতের পরমাণু শক্তির চাকা ঘোরাবে নতুন ইন্ধন?

এক টন থোরিয়াম ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উত্‍পন্ন করার ক্ষমতা রাখে। এক কেজি থোরিয়াম থেকে ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, যা হাজারটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:১২
Share:
০১ ১৬

পারমাণবিক বিদ্যুতের খরচ এক ধাক্কায় কমে যেতে পারে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ভারতের প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম চুল্লিগুলিতে (লেভেলাইজ়ড কস্ট অফ ইলেক্ট্রিসিটি) বিদ্যুত তৈরির খরচ প্রায় ৬ টাকা প্রতি কিলোওয়াট। পরমাণু শক্তি ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ উত্‍পাদনের মাধ্যম।

০২ ১৬

সরকার দেশে পরমাণু বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে চাইছে। লক্ষ্য, ২০৪৭-এ স্বাধীনতার একশো বছরে তা বর্তমানের তুলনায় ১২ গুণ বৃদ্ধি করা। পরিকল্পনা সফল হলে ভারতের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৫ শতাংশ হবে পরমাণু বিদ্যুৎ। তথ্য বলছে, ভারতে প্রায় ৭৬ হাজার টন ইউরেনিয়াম মজুত আছে, যা ১০ হাজার মেগাওয়াটের পরমাণুকেন্দ্রে ৩০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাজে লাগানো সম্ভব।

Advertisement
০৩ ১৬

সেই ভান্ডার ফুরোলে কী হবে? ইউরেনিয়ামের মজুতও সীমিত হওয়ায় ভারত দীর্ঘ দিন ধরেই বিকল্প জ্বালানির সন্ধানে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে থোরিয়ামের নাম উঠে এসেছে বিকল্প শক্তির তালিকায়। ভবিষ্যতের একটি সম্ভাবনাময় ও নিরাপদ জ্বালানি হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে থোরিয়াম।

০৪ ১৬

ভারতের উপকূলীয় রাজ্যগুলি, বিশেষ করে কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা থোরিয়ামে সমৃদ্ধ। বৈশ্বিক থোরিয়াম রিজ়ার্ভের প্রায় ২৫% ভারতেই রয়েছে। ফলে ইউরেনিয়ামের পরিবর্তে দেশকে একটি স্বনির্ভর পরমাণু শক্তির উৎস হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে পারে থোরিয়াম, মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

০৫ ১৬

এক টন থোরিয়াম ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উত্‍পন্ন করার ক্ষমতা রাখে। এক কেজি থোরিয়াম থেকে ৮০ থেকে ৯০ লক্ষ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, যা হাজারটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। থোরিয়াম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ পড়তে পারে বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ ডলার।

০৬ ১৬

পৃথিবীতে ইউরেনিয়ামের তুলনায় থোরিয়াম অনেক বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। এর সুবিধা হল এটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য। পারমাণবিক চুল্লিতেও ব্যবহার করা যায়। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী থোরিয়াম প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন একটি তেজস্ক্রিয় ধাতু, যা দেখতে ঠিক রুপোর মতো।

০৭ ১৬

বালি, মাটি, পাথর এবং জলে, বিশেষ করে মোনাজ়াইটের মতো খনিজ পদার্থে উপস্থিত থাকে থোরিয়াম। তেজস্ক্রিয়তার কারণে এটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি সম্ভাব্য জ্বালানির উৎস হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ইউরেনিয়াম-২৩৩ আইসোটোপে রূপান্তরিত হতে পারে। কম শক্তির নিউট্রন শোষণ করে বিভাজনের মাধ্যমে এই আইসোটোপে পরিণত হয়।

০৮ ১৬

ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ৮.২ গিগাওয়াট। ২০৩২ সালের মধ্যে ২২ গিগাওয়াটের লক্ষ্যে পৌঁছোনোর চ্যালেঞ্জ নেওয়া হয়েছে। ভারতের পারমাণবিক জ্বালানি প্রযুক্তির নাম অ্যাডভান্সড নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর এনরিচড লাইফ (এএনইইএল)। এটি তৈরির চুক্তি হয়েছে ক্লিন কোর থোরিয়াম এনার্জি নামক সংস্থাটির সঙ্গে।

০৯ ১৬

থোরিয়ামের সঙ্গে স্বল্পমাত্রায় ইউরেনিয়ামের (ইউরেনিয়াম-২৩৫) মিশ্রণে নতুন এক জ্বালানি সমাধান খুঁজে দিয়েছে সংস্থাটি। ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট ইতিমধ্যেই থোরিয়াম জ্বালানি নিয়ে কাজ করার জন্য আলোচনায় বসেছে ক্লিন কোর থোরিয়াম এনার্জির সঙ্গে।

১০ ১৬

থোরিয়ামনির্ভর জ্বালানি চক্রে দীর্ঘমেয়াদি বর্জ্য কম উৎপাদন হয়। পারমাণবিক বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৮৫ শতাংশ কম করা সম্ভব বিকল্প ব্যবস্থায়। বর্তমান ইউরেনিয়ামভিত্তিক ব্যবস্থার তুলনায় এটি আরও বেশি নিরাপদ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তার ক্ষতিকর প্রভাব কমতে ইউরেনিয়ামের তুলনায় কম সময় লাগে।

১১ ১৬

প্রতি টন থোরিয়াম ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি উত্‍পন্ন করতে পারে। থোরিয়াম-ইউ-২৩৩ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে তা ৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। থোরিয়াম থেকে তৈরি ইউ-২৩৩ ব্যবহার করে পারমাণবিক বোমা তৈরি তুলনামূলক ভাবে কঠিন। থোরিয়াম জ্বালানিচক্র ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়ামের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কম দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন করে।

১২ ১৬

বর্তমানে ভারত তার পারমাণবিক শক্তির চাহিদা মেটাতে ইউরেনিয়াম আমদানি করে। তবে থোরিয়াম ব্যবহার করে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করা সম্ভব নয়। জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের আগে থোরিয়ামকে চুল্লিতে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে ইউরেনিয়াম-২৩৩-এ রূপান্তর করতে হয়। ভারত এখন পর্যন্ত সরাসরি থোরিয়াম ব্যবহার করতে পারেনি।

১৩ ১৬

সম্ভাবনার কথা উঠলেও সম্পূর্ণ রূপে থোরিয়ামনির্ভর শক্তিতে রূপান্তরে তিন-চার দশক সময় লাগবে ভারতের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৬ সাল থেকে অ্যাডভান্সড নিউক্লিয়ার এনার্জি ফর এনরিচড লাইফ প্রযুক্তির জ্বালানি সরবরাহের কাজ শুরু হতে পারে এ দেশে।

১৪ ১৬

যদি সরকার ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকে, তা হলে থোরিয়াম আংশিক ভাবে শীঘ্রই ইউরেনিয়ামের বিকল্প হিসাবে কাজ শুরু করতে পারে বলে মনে করছেন পারমাণবিক খাতে জড়িত বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৫ ১৬

ভারতে থোরিয়াম পারমাণবিক শক্তির সম্ভাবনা ১৯৫০-এর দশকে ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচির স্থপতি হোমি জাহাঙ্গির ভাবার নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। তিন পর্যায়ের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কর্মসূচি প্রস্তাব করেছিলেন পারমাণবিক গবেষণার প্রাণপুরুষ।

১৬ ১৬

প্রথম পর্যায়ে প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে রিয়্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্লুটোনিয়াম প্রস্তুত করা। দ্বিতীয় ধাপে ফাস্ট ব্রিডার রিয়্যাক্টরে প্লুটোনিয়াম ব্যবহার করে ইউ-২৩৩ উৎপাদন। অন্তিম ধাপে থোরিয়াম এবং ইউ-২৩৩ ব্যবহার করে চালু করে পূর্ণ ভাবে থোরিয়ামভিত্তিক শক্তি উৎপাদন। ভারত বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে এবং ধীরে ধীরে তৃতীয় ধাপের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement