Durga Puja 2023

পুজোয় ঠাকুরকে দেওয়া হয় পাঁঠার মাংস আর অন্নভোগ, সুদীপা শেখালেন নিজের বাড়ির গোপন রেসিপি

টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে নেতা-মন্ত্রী, পুজোয় চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে যান অনেকেই। কয়েক বছর ধরে অগ্নিদেব ও সুদীপার উদ্যোগে কলকাতাতে শুরু হয়েছে এই পুজো। মায়ের বেশ থেকে ভোগ, সবেতেই থাকে চমক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৩৮
Share:

সুদীপার বাড়ির পুজোর ভোগে চমকের শেষ নেই। ছবি: সংগৃহীত।

প্রতি বছরই অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপা চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো ঘিরে বেশ হইচই হয় শহর জুড়ে। টলিপাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে নেতা-মন্ত্রী— পুজোর ক’দিন চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে যান অনেকেই। অগ্নিদেবের আদি বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। সেখানে প্রায় ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পুজো হত। তবে গত ৯ বছর ধরে অগ্নিদেব ও সুদীপার উদ্যোগে কলকাতাতেই শুরু হয়েছে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুদীপা বললেন, ‘‘বাড়ির সকলের মুখে শুনেছি, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দুর্গা মায়ের গয়নার বাক্স থেকে গয়না নিয়ে বিপ্লবীদের দান করে দেওয়া হয়েছিল। তাই প্রতি বছর আমরা মাকে একটি করে নতুন গয়নায় সাজিয়ে তুলি। আমাদের মায়ের হাতে রুপোর অস্ত্র থাকে। মায়ের ডান হাতে ত্রিশূল থাকলে ডান হাতে থাকে পদ্ম। আমি স্বপ্নে মাকে ওই রূপেই দেখছিলাম। মা যেন এক দিকে দুষ্টের দমন করছেন, অন্য দিকে শান্তির বার্তাও দিচ্ছেন।’’

Advertisement

চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় মায়ের সাজে যেমন বৈচিত্র আছে, তেমনই পুজোর ভোগেও কিন্তু বেশ চমক থাকে প্রতি বারেই। সুদীপার বাড়ির পুজোতে অন্নভোগ দেওয়া হয় মাকে। সুদীপা বললেন, ‘‘পুজোর সময়ে আমাদের মা অন্ন এবং আমিষ আহার গ্রহণ করেন। অষ্টমীর সন্ধিপুজোর পর থেকেই মাকে সাজিয়েগুছিয়ে মাংস আর নানা রকমের মাছ পরিবেশন করা হয়। মায়ের ভোগে থাকে গঙ্গা ও পদ্মার ইলিশ। এ বাড়ির পুজোয় মাকে এক এক দিন এক এক রকম চাল দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। রায়গঞ্জের তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ, এ ছা়ড়া ঢাকা থেকে আনানো হয় বিশেষ চিনিগুড়া চাল। নবমীতে মাকে দেওয়া হয় পদ্মার ইলিশ আর দশমীর দিন গঙ্গার ইলিশ খেয়ে মা বিদায় নেন। মায়ের বিদায়ের পর থেকে আমাদের বাড়িতে আর ইলিশ ঢোকে না, আবার সরস্বতী পুজোতে ইলিশ রান্না হয় বাড়িতে।’’

সুদীপার বাড়ির মহাভোগের বিশেষ পদ নিরামিষ মাংস। ছবি: সংগৃহীত।

সুদীপার বাড়িতে পুজোর ভোগে নিরামিষ মাংস আর কাজরীরি মাছের চচ্চড়ি হবেই হবে। সুদীপা নিজেই ভাগ করে নিলেন সেই বিশেষ দু’টি রেসিপি। সুদীপা বললেন, ‘‘আমাদের মায়ের ভোগে কোনও রকম বিদেশি উপকরণ যেমন কেওড়া জল, গোলাপ জল হিং, আতর ব্যবহার করা হয় না। ভোগের জন্য আমরা পাঁঠার মাংস ব্যবহার করি, খাসির ব্যবহার করা হয় না। কচি পাঁঠার মাংসে নুন, হলুদ, দই আর সর্ষের তেল দিয়ে প্রথমে ঘণ্টা খানেক মাখিয়ে রাখা হয়। এ বার কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে তেজপাতা, গোটা জিরে, গোটা গরমমশলা ফোড়ন দেওয়া হয়। তার পর আদা বাটা, জিরে বাটা, শুকনো লঙ্কা বাটা, কাঁচা হলুদ বাটা দিয়ে ভাল করে কষানো হয়। মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে আগে থেকে মেখে রাখা মাংস দিয়ে ভাল করে কষানো হয়। কষানোর সময়ে বেশ খানিকটা ঘি আর গোলমরিচ বাটা দিয়ে আরও বেশ কিছু ক্ষণ কষিয়ে নেওয়া হয়। তার পর গরম জল দিয়ে মাংস সেদ্ধ করে নেওয়া হয়। নামানোর আগে বেশ খানিকটা ঘি আর গোবিন্দভোগ চাল বাটা দিয়ে দেওয়া হয়। মিনিট দশেক পরেই ভোগ পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে যায় নিরামিষ মাংস।’’ মাংসে হঠাৎ চাল বাটা কেন? প্রশ্নের জবাবে সুদীপা বলেন, ‘‘ভোগের মাংসে যেহেতু পেঁয়াজ, রসুন কিছুই ব্যবহার করা হয় না, তাই মাংসের গন্ধ দূর করার জন্য সুগন্ধি হিসাবে আমরা গোবিন্দভোগ চাল বাটা ব্যবহার করি। এতে মাংসের ঝোলটাও বেশ গাঢ় আর রগরগে হয়।’’

Advertisement

কাজরী মাছের চচ্চড়িও পরিবেশন করা হয় মায়ের ভোগের থালায়। ছবি: সংগৃহীত।

মাছের বিভিন্ন রকম পদ সুদীপার বাড়ির মায়ের ভোগে পরিবেশন করা হয়। ইলিশ, ট্যাংরা, পাবদা আর কত কী! সুদীপা বললেন, ‘‘কাজরী মাছের চচ্চড়িটা কী যে ভাল লাগে বলতে পারব না। ভাজা নয়, কাঁচা মাছ দিয়েই পদটি বানানো হয়। সাদা তেল গরম করে তাতে ধনেপাতা বাটা, রসুন বাটা আর কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে কষানো হয়। তার পর নুন আর চিনি দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করে মশলা থেকে তেল ছেড়ে এলে কাঁচা মাছগুলি মশলার উপর ছড়িয়ে রাখা হয়। তার পর মাছটা এ পিঠ-ও পিঠ করে অল্প গরম জলের ছিটে দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। নামানোর সময় চেরা কাঁচা লঙ্কা আর সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যায় কাজরী মাছের চচ্চড়ি।’’

চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় মাকে ছানা দিয়ে তৈরি কোনও মিষ্টি দেওয়া হয় না। সব মিষ্টিই তৈরি করা হয় ক্ষীর দিয়ে। সুদীপা বললেন ‘‘বাড়ির পুজোতে মিষ্টির ভোগে লবঙ্গলতিকা থাকবেই থাকবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন