Veg Recipes

ঘণ্ট থেকে চচ্চড়ি! শীতের বাহারি সব্জির সঙ্গে মিশুক গ্রামবাংলার অচেনা স্বাদ

বিট, গাজর থেকে শুরু করে পেঁয়াজকলি, শিম, মুলো— শীতের মরসুমে বাজারে গেলেই থলি ভর্তি করে সব্জি আসে। তবে চেনা স্বাদের বাইরে কতটা যেতে পারি আমরা?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১১
Share:

পাঁচফোড়ন দিয়ে পাঁচমিশেলি তরকারির স্বাদ চেখে দেখতেও মন্দ লাগে না। ছবি: পিক্স্যাবে।

শীতের মরসুম মানে বাহারি রঙের সব্জির হাট। না, এমনটা নয় যে, সারা বছর বাজারে ভাল সব্জি পাওয়া যায় না। এখন তো বারো মাস সব সব্জিই পাওয়া যাচ্ছে। তবে শীতকালীন টাটকা সব্জির স্বাদই আলাদা।

Advertisement

সারা বছর বরফ-জমানো মটরশুঁটি দিয়ে রান্না করলেও শীতকালে টাটকা কড়াইশুঁটি দিয়ে কচুরি বানালে তার স্বাদ হয় অতুলনীয়। বিট, গাজর থেকে শুরু করে পেঁয়াজকলি, শিম, মুলো— এই মরসুমে বাজারে গেলেই থলি ভর্তি করে সব্জি আসে। বছরের আর পাঁচটা সময়ের তুলনায় এই সময়ে সব্জির দামও কম। তাই মন ভরে সব্জি খাওয়ার সেরা সময় শীতকাল।

Advertisement

শীতের রাতে গাজর, বিন্‌স, পেঁপে দিয়ে গরমাগরম স্যুপ অনেকের বাড়িতেই হয়। পাঁচফোড়ন দিয়ে পাঁচমিশেলি তরকারির স্বাদ চেখে দেখতেও মন্দ লাগে না। সরস্বতী পুজোর পরের দিন ঘটি বাড়িতে গোটা সেদ্ধ রান্নার চল রয়েছে। বিভিন্ন সব্জি গোটা রেখে অনেক ক্ষণ ধরে সেদ্ধ করে কেবল নুন ও সর্ষের তেল দিয়ে গোটা সেদ্ধর স্বাদ যে কী অপূর্ব তা বলার নয়! বাঙালরাও পিছিয়ে নেই। চৈত্র মাসের সংক্রান্তির দিনে অনেক বাঙাল বাড়িতে পাঁচন রান্না হয়। খুব বেশি মশলার আধিক্য নেই অথচ গন্ধরাজ লেবুর সঙ্গে অপূর্ব লাগে তার স্বাদ। কেবল বাঙাল-ঘটি নয়, পশ্চিমবঙ্গের এক এক জেলার তরকারির স্বাদ এক এক রকম। কিছু চেনা স্বাদ আর অনেকটা অচেনা স্বাদের ভান্ডার। ফোড়নের হেরফেরেই বদলে যায় চেনা রান্নার ছক! হোম শেফ শমিতা হালদারের সঙ্গে আড্ডার আসরে জানা গেল এমন কিছু হারিয়ে যাওয়া রান্নার কথা।

শমিতা বললেন, ‘‘আমার বড়মা নদীয়া জেলার মানুষ। শীতে একফালা জমিতে ধনেপাতা আর লাল শাক চাষ করতেন। বাজার থেকে সীম, বেগুন, মুলো, যা-ই আসুক না কেন সব তরকারিতেই ধনেপাতা দিয়ে নামানো হত! বাড়ির ধনেপাতার সুবাস বাজারের সঙ্গে মেলে না। শীতের দিনে সব্জি বাজারের কান পাতলেই শোনা যায় নানা গল্প। সেই গল্পে শোল মাছ কিনলে, সীম নেবেন না কি মুলো, পোড়ার বেগুন কিনলে সঙ্গে টাটকা ধনেপাতা আর ঝাল লঙ্কাটা নিতে ভুলবেন না বাবু— এমন সব হাঁক আকছার কানে আসে।

শিস পালংয়ের ঘণ্ট। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

শীতে বড়মার বাড়িতে ছোট পালং আসলেই বাজারের থলিতে সঙ্গে শিম, বেগুন, রাঙা আলু, নতুন আলু আর মুলো চাই-ই চাই। বড়মা বলতেন, বড়ি আর মুলো ছাড়া পালং নাকি তাদের বাড়িতে হত না। তেলে পাঁচফোড়ন, শুকনো লঙ্কা দিয়ে বড়ি ভেজে তুলে একে একে সব সব্জি সাঁতলানোর পর কড়াইতে পড়ত কাঁচা লঙ্কা, আদা বাটা, নুন, হলুদ। সব ভাল করে মিশে গেলে পালং শাক আর অল্প চিনি। এ বার শাকের জলে সব্জি সেদ্ধ হয়ে নরম হয়ে এলে আগে থেকে ভেজে রাখা বড়ি আর ভাজা মশলা অল্প ছড়িয়ে তৈরি হত শীতের অনবদ্য রেসিপি। গরম ভাতের সঙ্গে সেই শিস পালংয়ের আহা কী স্বাদ!’’

শিলে বাটা ধনেপাতা-তেঁতুলের চাটনি। ছবি: নিজস্ব চিত্র।

শমিতার মনে পড়ে গেল বছর কুড়ি আগে মালদহে তাঁর বাড়িতে কাজ করতে আসা এক বয়স্ক মাসির কথা। শমিতা বললেন, ‘‘সারা দিন তিনি থাকতেন আমার কাছে, অনেক গল্প করতেন। কথায় কথায় জানাতেন, কী দিয়ে আগের রাতে ভাত খেয়েছিলেন। বলতেন পেঁয়াজ, রসুন, শুকনো লঙ্কা কড়ায় ভেজে শিলে বেটে চাটনি দিয়ে ভাতে খাওয়ার কথা! শুধু কি তাই, এক বার সেই মাসি আমার বাড়িতে ধনেপাতা, কাঁচা তেঁতুল আর লঙ্কা একসঙ্গে শিলে বেটে চাটনি বানিয়েছিলেন। সর্ষের তেল মেখে গরম ভাতে সেই চাটনির স্বাদ এমন যে, নজর ও দিক করতেই এক থালা ভাত সাবাড় হয়ে যাবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন