মঙ্গলের কাছে আসবে সেই ‘অদ্ভুত অতিথি’। — ফাইল চিত্র।
গত জুলাই মাসে তাকে প্রথম দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তার রূপ, রং, চরিত্র নিয়ে ছিল নানা জল্পনা। পৃথিবী যে সৌরমণ্ডলে রয়েছে, তাতে ঢুকে পড়ে ক্রমে সব গ্রহের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সেই ‘অদ্ভুত অতিথি’ এসে পড়েছে মঙ্গলের কাছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুক্রবার মঙ্গলের খুব কাছে আসবে ‘৩আই/অ্যাটলাস’। আর সেই সুবাদে পৃথিবী থেকেও খুব ভাল ভাবে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই ধূমকেতুকে। যদিও বাদ সাধছে মেঘলা আকাশ আর এই ধূমকেতুর অবস্থান।
এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর বয়স আমাদের সৌরমণ্ডলের থেকেও বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে ভবঘুরের মতো আমাদের সৌরমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে সে। তাকে নিয়ে রয়েছে অনেক বিস্ময়। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, শুক্রবার এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’ থাকবে মঙ্গলের তিন কোটি কিলোমিটার দূরে। মঙ্গল আমাদের পৃথিবী থেকে ৩৫ কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে। সেই হিসেবে এই ধূমকেতু শুক্রবার পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৮ কোটি কিমি দূরে থাকবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শুক্রবারই একে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে ভাল দেখা যেতে পারে অন্যান্য দিনের তুলনায়। কারণ, পৃথিবী থেকে ওই ধূমকেতু দূরে থাকলেও মনে রাখতে হবে, তা সূর্য থেকেও ১১ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে রয়েছে। তাই সূর্য ডুবলেও তাকে ভাল দেখা যাবে। কিন্তু সেই ধূমকেতু যদি সূর্যের কাছে চলে যায়, তা হলে তাকে পৃথিবীর কোনও জায়গায় দেখা যাবে না। সূর্যের রশ্মিতে সে ঢাকা পড়ে যাবে।
সৌরমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ‘৩আই/অ্যাটলাস’ সূর্যের কাছে যাবে ২৯ অক্টোবর। পৃথিবী সূর্যের যে দিকে রয়েছে, ৩১ অক্টোবর তার উল্টো দিকে থাকবে ধূমকেতুটি। তার পর সেই অবস্থান থেকে সে বেরিয়ে আসবে বটে, কিন্তু পৃথিবী থেকে আর খুব বেশি দিন দেখা যাবে না। ১৯ ডিসেম্বর সেই ধূমকেতু আবার পৃথিবীর কাছে দিয়ে যাবে। তবে সেই দূরত্ব নেহাত কম নয়। পৃথিবীর প্রায় ২৭ কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে যাবে ‘৩আই/অ্যাটলাস’। তার পরে এই সৌরমণ্ডল থেকে ক্রমেই বেরিয়ে যাবে সে। সেই কারণে, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শুক্রবারই পৃথিবী থেকে সবচেয়ে ভাল দেখা যেতে পারে ওই ‘অদ্ভুত অতিথি’কে। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার থাকবে না। তা ছাড়া দিগন্তের খুব কাছে থাকবে সেই ধূমকেতু। সে কারণে তাকে দেখা একটু সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই ধূমকেতু কোনও ভাবেই পৃথিবীবাসীর কোনও উদ্বেগের কারণ হতে পারবে না। কারণ পৃথিবী থেকে অনেকটাই দূরে থাকবে সে।
ভিন্গ্রহীদের মহাকাশযান?
কয়েক জন বিজ্ঞানী আপাত ভাবে ‘৩আই/অ্যাটলাস’কে ভিন্গ্রহীদের মহাকাশযান বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু ক্রমেই বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, এটি নেহাতই ধূমকেতু। এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’ অন্য সৌরমণ্ডল থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। তার পরে ভবঘুরের মতো ঢুকে পড়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলে।
কেন একে ‘অদ্ভুত অতিথি’ বলা হচ্ছে?
এক, বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে যে দূরত্বে রয়েছে, সেই দূরত্বে কোনও ধূমকেতুর লেজ দেখা যায় না। কিন্তু ‘৩আই/অ্যাটলাস’ যখন বৃহস্পতির কাছে ছিল, তখন তার লেজ দেখা গিয়েছিল। তার লাগোয়া রয়েছে বড় বায়ুমণ্ডল বা অ্যাটমোস্ফিয়ার। দুই, সেই বায়ুমণ্ডলের স্পেকটোগ্রাফ নিয়ে দেখা গিয়েছে, লেজ থেকে জলের বদলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বার হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়নি। তিন, সৌরজগতের যে সমতলে সব গ্রহ রয়েছে, সেই সমতল দিয়ে আসছে ধূমকেতুটি। যেন বহু দূরের তারা থেকে সে সব গ্রহের সঙ্গে দেখা করতে আসছে। প্রথমে বৃহস্পতি, তার পরে মঙ্গল, বুধ, শুক্রের পাশ দিয়ে সূর্যের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসবে সে। গ্রহগুলির এত কাছ দিয়ে সে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন চিন্তাভাবনা করে গতিপথ ঠিক করেছে ধূমকেতুটি।