ওভালে ব্যাট করতে নামার মুহূর্তে ওকস। ছবি: পিটিআই।
ওভাল টেস্টের শেষ দিনে দলের প্রয়োজনে ভাঙা হাত নিয়েই ব্যাট করতে নেমেছিলেন। এক হাতে ব্যাট ধরেছিলেন, অপর হাত ছিল সোয়েটারের ভিতরে স্লিংয়ে ঝোলানো। তবু ক্রিকেটে পরিবর্ত খেলোয়াড় নামানোর পক্ষে নন ক্রিস ওকস। ইংরেজ বোলার জানিয়েছেন, ম্যাচের পর শুভমন গিল, ঋষভ পন্থের বার্তা পেয়ে তিনি আপ্লুত।
বার্মিংহামে নিজের বাড়ি ফিরে ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওকস। সেখানে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পরিবর্ত ক্রিকেটার প্রসঙ্গে অধিনায়ক বেন স্টোকসকে সমর্থন করছেন তিনি। ম্যাঞ্চেস্টারে ঋষভ পন্থ ভাঙা পায়ে ব্যাট করতে নামার পরেই ক্রিকেটমহলে পরিবর্ত ক্রিকেটার নামানোর নিয়ম চালু করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। স্টোকস তার বিরোধিতা করেছিলেন।
ওকস বলেছেন, “আমি স্টোকসের পাশে। ১৮ বছর ধরে খেলছি। তাই ক্রিকেট খেলাটা কেমন সেটা জানি। একজন ক্রিকেটার হঠাৎ ছিটকে গেলে দলকে নিজে থেকেই অন্য পথ খুঁজে নিতে হয়। এতে দলও শক্তিশালী হয়। বুঝতে পারছি আমার মতো চোট অন্য কোনও দলের ক্রিকেটারেরা পেতেই পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিবর্ত ক্রিকেটারের নিয়মে অনেক ফাঁক রয়েছে।”
টেস্ট শেষ হওয়ার পরেই ভারতীয় ক্রিকেটারেরা গিয়ে ওকসকে শুভেচ্ছাবার্তা দেন। সেই প্রসঙ্গে ওকসের মন্তব্য, “শুভমন বলল, ‘অসাধারণ সাহসের কাজ করেছ’। আমি বললাম, ‘সিরিজ়টা তোমার কাছে অবিশ্বাস্য গিয়েছে। ভাল খেলেছ। তোমার দলেরও কৃতিত্ব প্রাপ্য’। আসলে দু’দলের ক্রিকেটারেরাই নিজের সেরাটা দিয়েছে সিরিজ়ে। তাই সকলের প্রশংসা প্রাপ্য। দুটো দলই জিততে চেয়েছে।”
ওকসের সংযোজন, “আমি দেখলাম ইনস্টাগ্রামে স্যালুটের ইমোজি দিয়ে ঋষভ আমার একটা ছবি পোস্ট করেছে। আমিও উত্তর দিয়ে লিখেছিলাম, ‘এই ভালবাসার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি তোমার পা ঠিক আছে’। এর পর পন্থ একটা ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে বলল, ‘আশা করি সব ঠিক আছে। তোমার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। আবার একদিন দেখা হবে’। ওর পায়ের ওই অবস্থার জন্য আমি ক্ষমা চাইলাম।” উল্লেখ্য, ওকসের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েই পন্থের পায়ের হাড়ে চিড় ধরে।
এক হাতে ব্যাট করতে নেমেও দলকে জেতাতে না পেরে হতাশ ওকস। তবে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ক্রিজ়ে নামার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ওকসের কথায়, “আমি শুধু নিজের জন্য খেলতে নামিনি। সতীর্থ এবং দলের জন্য খেলতে নেমেছিলাম, যারা এত দিন ধরে এত আত্মত্যাগ করেছে। সমর্থকদের জন্য খেলতে নেমেছিলাম। ওটা আমার কর্তব্য। তবে এখনও হতাশ যে একটা রূপকথা লিখতে পারলাম না। ব্যাট করতে নামব না, এটা কখনও ভাবিইনি। ১০০ রানও যদি বাকি থাকত তা হলেও নামতাম।”
তাঁকে ব্যাট করতে নামতে হতে পারে এটা আগেই বুঝেছিলেন ওকস। তাই চতুর্থ দিন থেকেই এক হাতে ব্যাট করার অনুশীলনে করেছিলেন। ওকসের কথায়, “বল আটকাতে পারছিলাম। তখনই বুঝলাম, বাঁহাতিদের মতো স্টান্স নিলে কাঁধটা আড়ালে রাখতে পারব। অন্তত এক হাতে ব্যাটটা ভাল করে করতে পারব। কয়েকটা বল মেরেছি, কয়েকটা ফস্কেছি। কিন্তু টিকে থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম।”
তবু ব্যাট করতে নেমে যে মহম্মদ সিরাজের বল খেলতে হয়নি, এটা ভেবেই খুশি ওকস। বলেছেন, “প্রথম রান নেওয়ার পর ভেবেছিলাম বাঁ হাত সোয়েটারের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। তাই হেলমেট খুলে, দাঁত দিয়ে গ্লাভস খুলে দেখছিলাম সব ঠিকঠাক আছে কি না। এটাও ভাবছিলাম, একটা বল খেলতে পারলে ভাল হত। হয়তো চারও মেরে দিতে পারতাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে ৯০ মাইল গতির বাউন্সার এক হাতে সামলাতে হয়নি।”