(বাঁ দিকে) মহম্মদ শামি ও হাসিন জাহান (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মহম্মদ শামির উপর ক্ষোভ এখনও কমেনি হাসিন জাহানের। ভারতীয় পেসারকে আবার নিশানা করেছেন তাঁর বিচ্ছিন্না স্ত্রী। হাসিনের অভিযোগ, শামি কখনওই চাননি তাঁদের মেয়ে আইরা ভাল স্কুলে পড়ুক। মেয়ের জীবন নিয়ে তিনি ছেলেখেলা করেছেন বলেও অভিযোগ হাসিনের। তবে শামির অনেক চেষ্টার পরেও তিনি আইরাকে ভাল স্কুলে ভর্তি করেছেন বলে জানিয়েছেন হাসিন।
স্কুলের পোশাক পরা আইরার একটা ছবি দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে দিয়েছেন হাসিন। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আইরা। সেখানেই হাসিন লিখেছেন, “ওপরওয়ালার আশীর্বাদে আমি খুব খুশি। শত্রুরা চেয়েছিল, আমার মেয়ে যাতে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে না পারে। কিন্তু ওপরওয়ালা সকলের মুখে কালি লাগিয়ে দিয়েছে। আমার মেয়ে খুব ভাল একটা আন্তর্জাতিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে।”
এই কথার পরেই শামিকে নিশানা করেছেন হাসিন। তিনি লিখেছেন, “মেয়ের বাবা অনেক চেষ্টা করেছিল যাতে আমার মেয়ে ভাল স্কুলে ভর্তি হতে না পারে। কিন্তু বাবা ওপরওয়ালা নয়। যে মেয়ের বাবা কোটিপতি সে অন্য মহিলাদের জন্য নিজের মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছিল। বান্ধবীদের সন্তানদের ভাল স্কুলে পড়াচ্ছে। কোনও কোনও বান্ধবীকে বিমানে চড়িয়ে ঘুরছে। কিন্তু মেয়ের লেখাপড়ার জন্য পয়সা খরচ করছিল না। কিন্তু দেশে আইন রয়েছে। নইলে জানি না আমাদের সঙ্গে কী হত।”
হাসিন শামির বিরুদ্ধে মেয়েকে অবহেলার অভিযোগ করলেও গত ১৭ জুলাই আইরার জন্মদিনে পোস্ট করেন শামি। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “এখনও আমার সেই সব রাতগুলো মনে আছে যখন আমরা জেগে থাকতাম, কথা বলতাম, হাসাহাসি করতাম এবং বিশেষ করে তোর নাচ উপভোগ করতাম। বিশ্বাসই হচ্ছে না যে তুই এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছিস। তোর জীবনে সব সময় ভাল কিছু হোক এটাই চাই। ঈশ্বর আজ এবং সারাজীবন তোকে ভালবাসা, শান্তি, সুখ এবং সুস্বাস্থ্য দিক। শুভ জন্মদিন।” ২০১৮-এ হাসিনের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন শামি। মেয়ে আইরা থাকে মায়ের কাছেই। এর আগেও কলকাতার একটি শপিং মলে মেয়ের সঙ্গে ঘোরার ছবি পোস্ট করেছিলেন শামি।
গত ১ জুলাই কলকাতা হাই কোর্ট শামিকে নির্দেশ দেয়, ভরণপোষণের জন্য বিচ্ছিন্না স্ত্রী হাসিনকে মাসে ৪ লক্ষ টাকা দিতে হবে। স্ত্রীর জন্য মাসে দেড় লক্ষ ও মেয়ের জন্য মাসে আড়াই লক্ষ টাকা দিতে হবে। শামির বিরুদ্ধে হাসিনের করা গার্হস্থ্য মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই টাকা দিতে হবে তাঁকে। আদালতের নির্দেশে খুশি হলেও আরও টাকা খোরপোশের দাবি করেছেন হাসিন। তাঁর মতে, মাসে ৪ লক্ষ টাকায় সংসার চালানো কঠিন। মাসে ১০ লক্ষ টাকার দাবি করেছেন তিনি।
২০১৪ সালে মডেল এবং অভিনেত্রী হাসিনের সঙ্গে বিয়ে হয় শামির। ২০১৫ সালে তাঁদের কন্যাসন্তানের জন্ম। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য সুখের হয়নি। ২০১৮ সালে যাদবপুর থানায় শামি এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেন হাসিন। স্ত্রী নির্যাতন, বিষ খাওয়ানো, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগ করা হয় শামির বিরুদ্ধে। বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে আদালতেরও দ্বারস্থ হন হাসিন। প্রোটেকশন অফ উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট ২০০৫ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেন তিনি। মামলার খরচ এবং অন্তর্বর্তিকালীন ভরণপোষণ বাবদ ১০ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। নিজের জন্য মাসে ৭ লাখ এবং মেয়ের জন্য মাসে ৩ লাখ টাকা চান। কিন্তু নিম্ন আদালতে তাঁর এই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। আলিপুর আদালত শুধুমাত্র তাঁর সন্তানকে ৮০,০০০ টাকা প্রতি মাসে দেওয়ার নির্দেশ দেয় শামিকে। পরে জেলা জজ সেই নির্দেশ সংশোধন করে হাসিনকেও মাসে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন হাসিন। সেই মামলায় শামিকে মাসে ৪ লক্ষ টাকা খোরপোশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতের সেই নির্দেশের পর হাসিন অভিযোগ করেন, শামিই তাঁর রোজগারের পথ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘‘বিয়ের আগে মডেলিং করতাম। অভিনয় করতাম। শামি আমাকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। গৃহবধূ হিসাবে জীবনযাপন করতে বাধ্য করেছিল। ওকে খুব ভালবাসতাম। তাই খুশি মনে মেনে নিয়েছিলাম।’’ বাংলার জোরে বোলারের প্রাক্তন স্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘এখন আমার কোনও রোজগার নেই। আমাদের সব খরচের দায়িত্ব শামিকেই নিতে হবে। কিন্তু ও খোরপোশের টাকা দিতে অস্বীকার করেছিল। সে জন্যই আমাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের দেশে এখনও আইন আছে, যা সকলকে নিজের নিজের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়।’’ এ বার আবার শামিকে নিশানা করলেন হাসিন।