কিছুটা স্বস্তিতে শুভমনেরা। ছবি: পিটিআই।
মহম্মদ সিরাজ, আকাশদীপদের বিরুদ্ধে যে ভাবে ‘বাজ়বল’ খেলা শুরু করেছিলেন জ়াক ক্রলি এবং বেন ডাকেট, তাতে একসময় মনে হয়েছিল ম্যাঞ্চেস্টারের মতো ওভালেও বোধহয় একটাই ইনিংস ব্যাট করতে চায় ইংল্যান্ড। তবে সেই আশা পূরণ হল না। ভারতকে ম্যাচে ফেরালেন সিরাজ এবং প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। দু’জনেই চার উইকেট নিলেন। ফলে দ্বিতীয় দিনের শেষে কিছুটা স্বস্তিতে ভারত। পুরোপুরি স্বস্তি থাকল না দু’উইকেট হারিয়ে ফেলায়।
দ্বিতীয় দিনেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামল ভারত। দিনের শেষে তাদের স্কোর ৭৫/২। এগিয়ে ৫২ রানে। অবস্থা যা, তাতে চার দিনের বেশি এই টেস্ট গড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। প্রথম ইনিংসে ভারতের তোলা ২২৪-এর জবাবে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৪৭ রানে। ছিটকে যাওয়ায় ক্রিস ওকস ব্যাট করতে পারেননি। দ্বিতীয় বার ফিল্ডিং করতে নেমে ভারতকে বার বার সুযোগ দিল ইংল্যান্ড। দু’বার যশস্বী জয়সওয়ালের ক্যাচ পড়ল, এক বার সাই সুদর্শনের।
ওভাল টেস্টে বার বার যে ভাবে নাটক দেখা গিয়েছে, তা অব্যাহত দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলাতেও। এমনিতেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেড় ঘণ্টা বেশি খেলানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.২০ (ভারতীয় সময় রাত ১১.৫০) নাগাদ আলো বেশ কমে এসেছিল। আম্পায়ারেরা ইংরেজ অধিনায়ক অলি পোপকে জানিয়েছিলেন, বাকি ১০ মিনিট স্পিনারদের দিয়ে করানো যেতে পারে। জোরে বোলারদের ব্যবহার করা যাবে না। পোপ রাজি হননি। ফলে তখনই খেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হওয়ার সময় ভারতের হাতে ছিল চার উইকেট। ক্রিজ়ে ছিলেন করুণ নায়ার এবং ওয়াশিংটন সুন্দরের মতো জমে যাওয়া দুই ব্যাটার। সকালের একটা ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়ার মতো ধৈর্য দু’জনেই দেখাতে পারলে প্রথম ইনিংসে ভারতের রান আরও বেশি হত। কিন্তু সেটাই কেউ পারলেন না।
প্রথম ওভারে জশ টংকে দুটো চার মেরে শুরুটা খারাপ করেননি করুণ। সেই আগ্রাসনটা ধরে রাখতে পারলেন না। দিনের তৃতীয় ওভারেই টংয়ের একটি সোজা আসা বলের লাইন বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হলেন। ভারতের ভরসা বলতে শুধু ছিলেন ওয়াশিংটন। তিনিও ধৈর্য দেখাতে পারেননি। ফলে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় মাত্র ২০ রান যোগ করে। ২৭ মিনিটের মধ্যে পড়ে যায় বাকি চার উইকেট।
চলতি সিরিজ়ে ইংল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার ব্যাটারেরা যেখানে বার বার দলের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, সেখানে কেন ভারতের লোয়ার অর্ডার কেবলই ব্যর্থ হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। লর্ডসে শেষ দিন জসপ্রীত বুমরাহ এবং মহম্মদ সিরাজের ওই ইনিংস বাদ দিলেন, ভারতের লোয়ার অর্ডারের দ্রুত পতনের ইতিহাস বেশ লম্বা। এই টেস্টেও ইংরেজদের লোয়ার অর্ডার দিব্যি কয়েকটা ওভার খেলে দিল। ভারত সেখানে খেলতেই নামে শেষ তিন উইকেট হিসাবের বাইরে রেখে।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর সময় ভারত ‘লাইট রোলার’ নিয়েছিল। ইংল্যান্ড নিল ‘হেভি রোলার’। সিরাজ, আকাশদীপকে শুরু থেকেই ছিঁড়ে খেলেন দুই ইংরেজ ওপেনার। ‘বাজ়বল’-এর প্রকৃত রূপ দেখাতে কসুর করলেন না জ়াক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। রান উঠছিল ঝড়ের বেগে। কেউ কেউ তখন বুমরাহের অভাবের কথা বলছিলেন বটে। কিন্তু বুমরাহকে ছাড়াই দ্বিতীয় টেস্টে জিতেছিল ভারত। সেখানে ওভালে এমন খারাপ অবস্থা হল কী করে? সিরাজ শুরু থেকেই মার খাচ্ছিলেন। আকাশদীপ তবু লাইন-লেংথে বল করছিলেন। তিনিও একটা সময়ের পর আর প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।
অফস্টাম্পে বেশির ভাগ ফিল্ডার রেখেও কেন ভারতের বোলারেরা লেগস্টাম্পে বল করেন তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কেনই বা শুভমন বোলারদের উপযুক্ত নির্দেশ দেন না? ইংল্যান্ড ১৫ ওভারেই ১০০-র বেশি তুলে ফেলেছিল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যখন সাজঘরে দুই ইংরেজ ব্যাটার ফিরছেন তখন ভারতের রানের অর্ধেক তুলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। দুর্ভাগ্যবশত সেই সময়ে ঝকঝকে রোদ উঠেছিল, যা সেই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং আরও সহজ করে দিয়েছিল। তখনও বোঝা যায়নি ম্যাচের রাশ ভারতের হাতেই যেতে চলেছে।
ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের স্কোরকার্ড। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারতের বোলারেরা ম্যাচে ফিরলেন দ্বিতীয় সেশনে। কাণ্ডারি সেই সিরাজ। প্রথমে অলি পোপকে ফেরালেন। এর পর জো রুট এবং জেকব বেথেলকেও তুলে নিলেন। তিন জনই এলবিডব্লিউ। এর মধ্যে রুটের বলটা সেরা। অফস্টাম্পের বাইরে পড়া বল এতটাই দ্রুত ভেতরে ঢুকে এল যে রুট ঠেকাতেই পারলেন না। ওই সময়ে সেই উইকেট ইংল্যান্ডের জন্য বড় ধাক্কা ছিল।
রুট যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের আর কোনও ব্যাটারই সে ভাবে দাঁড়াতে পারেননি। হ্যারি ব্রুক শেষ উইকেট পর্যন্ত ক্রিজ়ে থেকে অর্ধশতরান না করে ইংল্যান্ডের পক্ষে লিড নেওয়া সম্ভব হত না।
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা খারাপ করেননি যশস্বী জয়সওয়াল এবং কেএল রাহুল। যশস্বী (অপরাজিত ৫১) আগ্রাসী খেলেছেন। সেই তুলনায় রাহুল অনেক ধীরগতির। রাহুলের খেলার মধ্যে একটা অস্বস্তি প্রথম থেকেই দেখা যাচ্ছিল। বল ছাড়ার সময় ইতস্তত, দোনোমোনো ভাব লক্ষ করা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত টংয়ের বলে সাত রানে ফেরেন।
সুদর্শন প্রথম ইনিংসে লড়াকু অর্ধশতরান করেছিলেন। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক কিছু শেখা বাকি আছে তাঁর। দ্বিতীয় দিনের বাকি সময়টা যেখানে দাঁত কামড়ে কাটাতে হত, সেখানে তিনিও শেষ বেলায় আউট হলেন। যাওয়ার আগে নষ্ট করে গেলেন একটি রিভিউও। শেষ বেলায় শুভমন আর নামেননি। পাঠিয়েছেন নৈশপ্রহরী আকাশদীপকে (অপরাজিত ৪)। এখন দেখার, তৃতীয় দিনে ভারত কতটা প্রতিরোধ গড়তে পারে।