এশিয়া কাপ ট্রফির লড়াইয়ে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
খেলাধুলোয় সব সময় হার-জিত দিয়ে বিচার করা যায় না। তবে রবিবার এশিয়া কাপ ফাইনাল ভারত এবং পাকিস্তান দুই দল একটাই লক্ষ্য নিয়ে নামবে, যে কোনও মূল্যে জয়। গত দুই সপ্তাহে এই দুই দলের ম্যাচ যে ভাবে ঘটনাবহুল হয়েছে, তাতে রবিবারের ফাইনালে যে উত্তেজনার কমতি থাকবে তা এখন থেকেই বলে দেওয়া যায়। শুধু মাঠ নয়, মাঠের বাইরের লড়াইয়ের দিকেও নজর থাকবে। আমেরিকার রাজনীতিবিদ মাইক মারকুসিকে উদ্ধৃত করে বলা যায়, রবিবারের ম্যাচ আসলে ‘ওয়ার মাইনাস শুটিং’। অর্থাৎ, গোলাগুলি ছাড়াই যুদ্ধ।
বছরের পর বছর ধরে এই ম্যাচে উত্তেজনার কোনও অভাব থাকে না। তবে এ বার যে প্রেক্ষাপটে ম্যাচটি খেলা হচ্ছে, তা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। মাঠের বাইরের লড়াই এ বার বাইশ গজের লড়াইয়ের থেকে বেশি উত্তেজক হয়ে উঠেছে। মাঠে দু’টি ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। রবিবার তৃতীয় লড়াই। তবে বাহ্যিক ঘটনাবলী সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছে।
গ্রুপের ম্যাচে ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের হাত না মেলানোর সিদ্ধান্ত থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। দ্বিতীয় ম্যাচে হ্যারিস রউফের টিটকিরি, খারাপ কথা এবং ‘প্লেন ক্র্যাশ সেলিব্রেশন’, সাহিবজ়াদা ফারহানের ‘একে৪৭ সেলিব্রেশন’ বিতর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে। হ্যারিস এবং সূর্যকে ৩০ শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা করা হয়েছে। এর মাঝে পাকিস্তানের মন্ত্রী তথা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহসিন নকভি একের পর এক প্ররোচনামূলক ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
খাতায়-কলমে, ভারত এগিয়ে থেকেই নামছে। প্রতিযোগিতায় ছ’টি ম্যাচেই তারা জিতেছে। একমাত্র শ্রীলঙ্কা বাদে কোনও ম্যাচেই তাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়নি। পাকিস্তান ফাইনালে উঠেছে হোঁচট খেতে খেতে। ভারতের কাছে দু’টি ম্যাচ তো হেরেছেই। বাংলাদেশকে কোনও মতে হারিয়েছে সুপার ফোরে। সমস্যায় পড়েছে ওমান, আমিরশাহির মতো দলের কাছেও।
বাংলাদেশকে হারানোর পর কোচ মাইক হেসন বলেছেন, “ফাইনালে জেতাই আসল।” ভারতের কথাতেও একই সুর। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বোলিং কোচ মর্নি মরকেল বলেছেন, “জয় ব্যাপারটাই খুব কুৎসিত। কিন্তু জয় জয়ই।”
ভারতের অপরাজিত থাকার দৌড় পুরোপুরি মসৃণ নয়। শ্রীলঙ্কা ম্যাচে এক ওভার বল করেই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরায় মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান হার্দিক পাণ্ড্য। পেশিতে টান ধরে অভিষেক শর্মার। দুবাইয়ের গরমের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে দুই ক্রিকেটারকে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী মরকেল। বলেছেন, “হার্দিককে শনিবার সকালে পরীক্ষা করা হবে। অভিষেক ভালই আছে।”
দুই ক্রিকেটারই ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অভিষেক। শেষ তিনটি ম্যাচে অর্ধশতরান করা এই ওপেনার পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। সাধেই কি ওয়াসিম আক্রম বা শোয়েব আখতার বলেছেন, “শুরুতেই অভিষেককে আউট করো।”
প্রশ্ন হল, অভিষেক ব্যর্থ হলে বাকিদের কি দলকে জেতানোর ক্ষমতা আছে? শুভমন গিল ছন্দে নেই। একই হাল সূর্যকুমারের। সঞ্জু স্যামসন এবং তিলক বর্মা শ্রীলঙ্কা ম্যাচে রান পেলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের বোলিংয়ের তুলনা করা যায় না। তা ছাড়া, নিয়মরক্ষার ম্যাচ এবং ফাইনাল এক নয়।
পাকিস্তানের চিন্তাও কম নয়। তাদেরও ব্যাটিং নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সাহিবজ়াদা একটি ম্যাচ ছাড়া এখনও বলার মতো রান পাননি। ব্যাটে খরা সাইম আয়ুবেরও। হুসেন তালাত এবং সলমন আঘা আগের ম্যাচে ভারতের স্পিনারদের সামলাতে পারেননি। রবিবারের ম্যাচেও নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে হবে কুলদীপ যাদব এবং বরুণ চক্রবর্তীকে।
এ সব তো গেল ক্রিকেটীয় কথা। মাঠে কী হয় তা জানার জন্য দুই দেশের সমর্থকেরাই মুখিয়ে থাকবেন। সূর্যকুমার কি হাত মেলাবেন? মাঠে কি আবার ঝামেলা হবে? খলনায়কের চরিত্রে কি নতুন কেউ আসবেন? নকভি যে মঞ্চে থাকবেন, সেই মঞ্চে কি উঠবেন সূর্য? ট্রফি জয় নয়, বিতর্কই ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সুর বেঁধে দিতে চলেছে।
কথায় আছে, ‘সব ভাল যার শেষ ভাল’। সূর্যকুমার নাকি সলমন, কার মুখে রবিবার এই কথা শোনা যাবে, অপেক্ষা তারই।