ডাগ আউটে বসে সঞ্জু স্যামসন। ছবি: সমাজমাধ্যম।
এশিয়া কাপে যে সঞ্জু স্যামসন ওপেন করতে পারবেন না তা প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে যে মিডল অর্ডারেও দেখা যাবে না, তা বোঝা যায়নি। সুপার ফোরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাত নম্বরেও নামলেন না তিনি। তবে কি সঞ্জুর উপর ভরসা করতে পারছেন না ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর?
বাংলাদেশ ম্যাচের আগের দিন ভারতের ফিল্ডিং কোচ রায়ান টেন দুশখাতে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছিলেন, সঞ্জুকে আর ওপেন করতে দেখা যাবে না। তাঁর জায়গা পাঁচ নম্বরে। দুশখাতে বলেন, ‘‘যে ভাবে ওপেনিংয়ে শুভমন এবং অভিষেক ব্যাট করছে এবং দলের অধিনায়ক তিনে আর তিলক চারে খেলছে, তাতে পাঁচ নম্বরে আমরা এমন একজনকে চাই যে দ্রুত গতিতে রান তুলতে পারে। সঞ্জুর প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমাদের মনে হয় পাঁচ নম্বরে খেলার জন্য ও-ই সেরা। আশা করি দ্রুত ও বুঝে যাবে কী ভাবে তাড়াতাড়ি রান তুলতে হবে।’’
কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেটাও দেখা গেল না। দুই ওপেনার শুভমন গিল ও অভিষেক শর্মা আউট হওয়ার পর যখন পর পর উইকেট পড়ছে তখনও সঞ্জুর দিকে তাকালেন না গম্ভীর। নামিয়ে দেওয়া হল শিবম দুবে, অক্ষর পটেল, হার্দিক পাণ্ড্যদের। শিবম (৩ বলে ২) ও অক্ষর (১৬ বলে ১০) খারাপ খেললেন। বল নষ্ট করলেন। তাতে দলের চাপ বাড়ল। সেখানেও কি সঞ্জুকে নামানো যেত না? আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সঞ্জু ভাল খেলতে পারেননি। মিডল অর্ডারে নেমে ১৭ বলে ১৩ করেন। অক্ষরেরাও তো সেটাই করলেন। তা হলে আর সঞ্জুর দোষ কোথায়? সঞ্জুকে না নামানোয় অবাক ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকরও। তাঁর মতে, শিবমের জায়গায় সঞ্জুকে নামাতে পারতেন গম্ভীর।
সঞ্জু টপ অর্ডারের ব্যাটার। ঘরোয়া ক্রিকেট হোক, বা আইপিএল, বরাবর টপ অর্ডারেই খেলেছেন তিনি। নতুন বলের বিরুদ্ধে ভাল খেলেন তিনি। পরের দিকে বল পুরনো হলে তাঁর পক্ষে খেলা কঠিন। সেই সঞ্জুকেই ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতে বলা হচ্ছে। যদি সঞ্জুর উপর গম্ভীরের আস্থা না-ই থাকে তা হলে তাঁর বদলে জিতেশ শর্মাকে খেলানো যেত। তিনি ফিনিশারের ভূমিকাতেই বরাবর খেলে এসেছেন। ফলে সঞ্জুর বদলে জিতেশের খেলা সুবিধা।
সঞ্জু অবশ্য ভারতের হয়ে যে কোনও জায়গায় খেলতে তৈরি। সম্প্রচারকারী চ্যানেলে ধারাভাষ্যকার মঞ্জরেকর সঞ্জুকে প্রশ্ন করেন, ব্যাটিং অর্ডারে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা কোনটি? জবাবে সঞ্জু টেনে আনেন দক্ষিণ ভারতের তারকা মোহনলালের নাম। কয়েক দিন আগে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সঞ্জু বলেন, “আমাদের অভিনেতা মোহনলাল কয়েক দিন আগে ভারত সরকারের কাছে বড় পুরস্কার পেয়েছেন। উনি ২০ বছর ধরে অভিনয় করছেন। উনি সব ধরনের অভিনয় করেছেন। নায়কের পাশাপাশি খলনায়কের চরিত্রও করেছেন। আমি তাঁর কথা মাথায় রাখি।”
কেন মোহনলালের নাম তিনি বললেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সঞ্জু। তিনি বলেন, “মোহনলাল যেমন সব ছবিতে নায়কের চরিত্র করতে পারেননি, তেমনই আমিও পারব না। আমি ১০ বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলছি। আমি দলে এসে বলতে পারি না, সব সময় আমাকে নায়কের চরিত্র দিতে হবে। আমি দেশের জন্য খলনায়ক বা জোকারের চরিত্রও করতে পারি। খলনায়ক বা জোকার হয়েও আমি দেশের হয়ে খেলতে চাই।”
দেশের হয়ে যে কোনও জায়গায় খেলার কথা বললেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যখন শিবম, অক্ষরেরা রান করতে পারছেন না তখন ডাগ আউটে বসে থাকা সঞ্জুর মুখ অন্য কথা বলছিল। হাতে দু’টি বল নিয়ে বসেছিলেন তিনি। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হতাশ হয়ে পড়েছেন। বার বার অবহেলার শিকার হতে হতে কি আত্মবিশ্বাসও কমতে শুরু করেছে সঞ্জুর? তেমনটা হলে কিন্তু আখেরে ক্ষতি ভারতীয় ক্রিকেটেরই।