বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তপস্যা গহলোত। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ছোটবেলা থেকেই প্রপিতামহ চৌধরি হাজারি লালের কাহিনি শুনে বড় হয়েছিলেন তপস্যা। শুনেছেন, কী ভাবে তাঁর বাবার ঠাকুর্দা হরিয়ানার ঝাজ্জরের খানপুর কালান গ্রামে দঙ্গলে দাপট দেখাতেন। বাবার ইচ্ছে ছিল, তপস্যাও নামকরা কুস্তিগির হবেন। সেই স্বপ্নপূরণ হল বুধবার। অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে বিশ্বসেরা হলেন তপস্যা। বুলগেরিয়ার সামাকভে ৫৭ কেজি বিভাগে ফাইনালে হারালেন নরওয়ের ফেলিসিতাস দোমাজেভাকে।
ঠাকুর্দার গল্প শুনে তপস্যার বাবা পরমেশ গহলোতও কুস্তিগির হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একটা পর্যায়ের পর সফল হননি। চেয়েছিলেন মেয়ে তপস্যাকে কুস্তিগির করে তুলতে। তার জন্য আত্মীয়দের কটাক্ষও শোনেন। তবু থামেননি। সেই আস্থার মান রেখেছেন তপস্যা। উল্লেখ্য, ভারতের দঙ্গলকন্যা বলে পরিচিত ফোগট বোনেদেরও এ রকমই প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল, যখন তাঁদের বাবা মহাবীর সিংহ ফোগত কুস্তি শেখাতে শুরু করেছিলেন।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে পরমেশ বলেছেন, “আমার ঠাকুর্দা চৌধুরি হাজারি লাল খানপুর কালান গ্রামে কুস্তিগির হিসাবে বিখ্যাত ছিলেন। কুস্তির বিভিন্ন প্যাঁচ নিয়ে আমাদের অনেক শিখিয়েছেন। তপস্যা জন্মানোর পর অনেকেই মেয়ে হয়েছে বলে কটাক্ষ করেছিল। আমি স্কুল গেমসে কুস্তিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। কিন্তু চোটের পর কুস্তি ছাড়ি। বরাবর মেয়েকে কুস্তিগির করার চেষ্টা করেছি। সে ছেলে হোক বা মেয়ে। ন’বছর আগে তপস্যাকে কুস্তি শেখাতে যাওয়ার সময় অনেকেই কটাক্ষ করেছিল। আজ তপস্যা বিশ্বসেরা। যারা সমালোচনা করেছিল তাদের উচিত জবাব দিয়েছে।”
২০১৬-য় স্থানীয় অ্যাকাডেমিতে কুস্তি শিখতে শুরু করেন তপস্যা। তবে পরিকাঠামো ভাল ছিল না। তখন পরমেশ মেয়েকে সোনিপত নিয়ে গিয়ে কুলবীর রানার আখড়ায় ভর্তি করান। স্ত্রী নবীনা কুমারি শুরুতে বাধা দিলেও পরে মেনে নেন। তবে পরিবার থেকে দূরে রেখে মেয়েকে কুস্তি শেখানোর কারণে অনেকের সমালোচনা শুনতে হয় পরমেশকে।
তিনি বলেছেন, “দেশের হয়ে কিছু করার তাগিদই তপস্যাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। কোচ কুলবীর বরাবর বলেছেন মেয়েকে নিয়ে চিন্তা না করতে। উনি নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসেন। আমাদের ছেলে দক্ষও কুস্তিগির। তবে তপস্যা যা করেছে তার জন্য কোনও কিছুই যথেষ্ট নয়।”
তপস্যা রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে অনেক ট্রফি জিতেছেন। গত বার অনূর্ধ্ব-২০ বিভাগে এশিয়া সেরা হন। ন্যাশনালসে সোনা জিতেছেন। এ বার সিনিয়র বিভাগেও লড়বেন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি জাপানের সোয়াকা উচিদাকে হারিয়েছেন, যিনি আগের ৪০টা লড়াইয়ে হারেননি। ফাইনালে দোমাজেভাকে হারান, যিনি ১৫ বছর পর নরওয়ের প্রথম কুস্তিগির হিসাবে ফাইনালে উঠেছিলেন।