Nuanai Winter Destination

পুরীর কাছেই নদী-সাগরের হাতছানি, খেলে বেড়ায় হরিণের দল, খানিক নির্জনতার খোঁজে চলুন নতুন গন্তব্যে

পুরী নয়, অথচ তার কাছেই এমন এক জায়গা আছে যেখানে বন্যপ্রাণ, বনভূমির দেখা মিলবে। নদী-সাগর দুই-ই উপভোগ্য সেখানে। পুরী থেকে বড়জোর ১০ কিলোমিটার দূরে নিরালা সেই স্থান হতে পারে শীতের গন্তব্য।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৪৮
Share:

শীতভ্রমণের নতুন ঠিকানা। সমুদ্র, অরণ্য একইসঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত।

রোম্যান্স-রোমাঞ্চ, দুই-ই আছে। আছ ঘন বন, উতল সাগর আর শান্ত নদীর হাতছানি। পুরীর অদূরে, অথচ এত চরিত্রগত ভাবে এতটাই আলাদা, না গেলে বুঝতে পারবেন না। গাড়ি হোক বা ট্রেন, পৌঁছোতে বেগ পেতে হবে না। পুরী থেকে আর মাত্র মিনিট চল্লিশের পথ পৌঁছে দেবে নতুন এক দুনিয়ায়।

Advertisement

ডিসেম্বর ছুটিতে হইহল্লার আড়ালে নিঃশব্দে প্রকৃতির আলিঙ্গনটুকু পেতে চাইলে চলুন বালুখণ্ড-কোনারক বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে নুয়ানাই। পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের উদ্দেশ্যে সেই জায়গা সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। রয়েছে ওড়িশার সরকার পরিচালিত নেচার ক্যাম্প। সপ্তাহশেষের দু’টি দিন এখানে কাটাতে পারেন নিশ্চিন্তে-আনন্দে।

পুরীর ভিড়ভাট্টা, হইচই, দোকানদারের হাঁকডাক, মদনমোহনের প্রলোভন— কোনওটাই এখানে নেই বটে, তবে প্রকৃতি তার দুই বাহু প্রসারিত করে রেখেছে। অরণ্যপথে পাড়ি দিলে দেখা মিলবে হরিণ, ময়ূরের। রাত-বিরেতে সেই জায়গায় দখল নেয় শিয়াল। স্থানীয় গাইডেরা বলেন, হায়েনাও না কি হানা দেয় মাঝেমধ্যে। তবে এ সবে ভয় নেই। কারণ, থাকার স্থান সুরক্ষিত।

Advertisement

নুয়ানাই নদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এই স্থানে। ছবি: সংগৃহীত।

বরং থাকার স্থান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় নদী-সাগর। কাছ দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে গিয়েছে নুয়ানাই নদী। সবুজ যেন তাকে বেড় দিয়েছে। সুযোগ রয়েছে কায়াকিং, নৌভ্রমণের। শীতের রোদ গায়ে মেখে এমন রোমাঞ্চ-রোম্যান্সের স্বাদ মিলবে কোথায়?

পুরী থেকে কোনার্ক যাওয়ার পথে মেরিন ড্রাইভ ধরে গেলে পৌঁছনো যায় বালুখণ্ড-কোনারক অভয়ারণ্যে। এখানে দেখা মিলবে উপকূলীয় বনভূমির। অরণ্য এখানে বেশি ঘন নয়। বরং সমুদ্রের সান্নিধ্য থাকায় একটু অন্য রকম গাছাগাছালি। রয়েছে ম্যানগ্রোভ।

ব্যাটারিচালিত গাড়ি করেই চলে যেতে পারেন সৈকতে। নিরালা বালুকাবেলা। পড়ন্ত বিকেলে ঝিনুক কুড়োতে কুড়োতে প্রিয় মানুষটির হাত ধরে কিংবা সপরিবারে ভীষণ মজা করতে পারেন সেখানে। পুরীর কাছে বলেই ঢেউয়ের দাপট যথেষ্ট। মুহুর্মুহু ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বালুতটে। শীতের দিনে বেড়াতে গেলে সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশে বেড়িয়ে পড়তে পারেন ৩টে বাজতে না বাজতেই। সূর্য ঝুপ করে ডুব দিলে চারপাশে আঁধার নামবে, তখন আর ঘোরার কিছু নেই।

হরিণের আনাগোনা। ছবি: সংগৃহীত।

এই জায়গা উপভোগ করতে হলে থাকার জায়গা সরকারি পরিবেশ বান্ধব আবাস। সেখানেই তাঁবুতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা। প্রশস্ত গাছগাছালি ঢাকা এই স্থানে মাঝেমধ্যেই গুটি গুটি পায়ে সঙ্গ দিতে আসবে হরিণ।

পর দিন ভোরে বেরিয়ে পড়ুন বন-পথ ধরে নদীর কিনারে। কত রকম গাছগাছালি! মনোরম সকাল, নোনা হাওয়া মন ভাল করে দেবে। হেঁটেই পৌঁছনো যায় নুয়ানাই নদীর কাছে। একটু বেশি হাঁটতে পারলে পৌঁছোতে পারবেন মোহনার কাছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই স্থানগুলি ইদানীং কিছু কিছু পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশেষত পুরী থেকে যাঁরা অন্য কোথাও ভ্রমণের কথা ভাবছেন তাঁদের জন্য বালুখণ্ড, নুয়ানাই হতে পারে আদর্শ।

সৈকতে রয়েছে নজরমিনার। সেখান থেকে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত উপভোগ করা যাবে। ছবি:সংগৃহীত।

দিন দুয়েক এখানে থেকে গেলে খুব ভাল ভাবে প্রকৃতি উপভোগ করা যাবে। তবে চাইলে একটি দিন থাকলেও হবে।

ভ্রমণসূচি স্থির করতে পারেন নিজের মতো করে। পুরী থেকে এই জায়গাটি কাছে। চাইলে ভুবনেশ্বর থেকে গাড়ি ভাড়া করেও কোনারকের দিকে চলে আসতে পারেন। আবার এখানে এক রাত থেকে পর দিন পুরীতে বা কোনারকের কোথাও রাত্রিবাস করতে পারেন। ঘুরে নিতে পারেন চন্দ্রভাগা সৈকত।

কোথায় থাকবেন?

ওড়িশা ইকো ট্যুরিজ়মের নুয়ানাই নেচার ক্যাম্প রয়েছে ঝাঁ চকচকে বড় তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা। আধুনিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধা মিলবে। সরকারি সাইট থেকে অনলাইনে তা বুকিং করতে পারেন। আবার পুরীতে থেকেও এই জায়গাটি ঘুরে যেতে পারেন।

কী ভাবে যাবেন?

পুরী শহর পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের যে কোনও রাজ্যের সঙ্গেই সড়কপথে যুক্ত। কলকাতা থেকে সড়কপথে পুরীর দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার। গন্তব্যস্থলটি আরও ১০ কিলোমিটার দূর হবে। গাড়িতে গেলে ১১-১২ ঘণ্টা সময় লাগবে। হাওড়া বা শালিমার থেকে রাতের ট্রেন ধরলে ভোরে পৌঁছবেন পুরী। সেখান থেকে গন্তব্যস্থল আরও ১ ঘণ্টা। এ ছাড়া বিমানে ভুবনেশ্বর পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়িতে যেতে পারেন। মোট কথা, হাতে ২-৩দিন সময় থাকলেই এই জায়গা ঘোরা যাবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement