১২ বছর বয়সেই মাধ্যমিকে বসছে সাইফা!

শুক্রবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সাইফা কখনও প্রথাগত স্কুলে পড়েনি। হাওড়ার সালকিয়ার এএস হাইস্কুলের বহিরাগত ছাত্রী হিসেবে ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:২৬
Share:

মনোযোগী: মায়ের কাছে পড়ায় ব্যস্ত সাইফা। ছবি: সুব্রত জানা

তিন বছর বয়সেই ‘দুই বিঘা জমি’ মুখস্থ। গড়গড়িয়ে পড়ে ফেলে ইংরেজি ও বাংলা সংবাদপত্র। হাওড়ার আমতার মেয়ে সাইফা খাতুনের বয়স এখন ১২। এই বয়সেই বসতে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষায়!

Advertisement

শুক্রবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানান, সাইফা কখনও প্রথাগত স্কুলে পড়েনি। হাওড়ার সালকিয়ার এএস হাইস্কুলের বহিরাগত ছাত্রী হিসেবে ২০১৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে সে।

আমতা থানার কাষ্ঠসাংরা গ্রামের সাইফার এই কীর্তির কথায় মনে পড়ছে ২৭ বছর আগে ৮ বছর ৭ মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ‘অবাক মেয়ে’ মৌসুমী চক্রবর্তীর কথা। পুরুলিয়া জেলার আদ্রার মৌসুমী তখন গোটা রাজ্যে আলোড়ন ফেলেছিল।

Advertisement

সাইফা জানিয়েছে, শুধু পরীক্ষায় বসা নয়, তার লক্ষ্য প্রথম হওয়া। স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করেনি বলে তার আফশোস নেই। তার কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ, আশাপূর্ণা দেবী, কেউই স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করেননি। তাই বলে কি তাঁরা অজ্ঞ ছিলেন?’’

আরও পড়ুন: সাধারণ থাকাই ভাল, উপলব্ধি সে দিনের ‘বিস্ময় বালিকা’ মৌসুমির

সাইফার বাবা শেখ মহম্মদ আইনুল গ্রামীণ চিকিৎসক। তিনিও মৌসুমীর কথা জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ছোট বয়স থেকে মেয়ের এই চমকে দেওয়ার ক্ষমতা দেখেই মনে হয়েছিল আমাদের মেয়েও মৌসুমীর মতোই।’’ শুক্রবারই তিনি পর্ষদ থেকে খবর পান, সাইফা টেস্টে ভাল নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

কেন মেয়েকে কোনও স্কুলে ভর্তি করাননি? আইনুল বলেন, ‘‘পাঁচ বছর বয়সেই চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করে ফেলেছিল সাইফা। তার পরে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে গেলে স্কুল জানিয়ে দেয়, দশ বছরের বেশি বয়স না-হলে ভর্তি করানো যাবে না।’’ এতে জেদ চেপে যায় আইনুলের। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সাহানারা বেগম বাড়িতেই মেয়েকে পড়াতে শুরু করেন। আইনুল বলেন, ‘‘তখনই ভেবেছিলাম, বাড়িতে পড়েই মেয়ে মাধ্যমিক দেবে। তাই মাধ্যমিক স্তরের বইও কিনে দিয়েছিলাম। ৮ বছর বয়সেই মাধ্যমিকের বই শেষ করে ফেলে সাইফা।’’ তার পর থেকে শুরু হয় মাধ্যমিকে বসার চেষ্টা। ২০১৭ সালে পর্ষদের কাছে আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। এর পরে তিনি যোগাযোগ করেন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীকেও। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগেই আমার মেয়ে মাধ্যমিক দিতে পারছে। পরীক্ষায় বসার সমস্ত নিয়ম পালন করা হয়েছে।’’

মেয়েকে পড়াশোনাতে উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন তার মা সাহানারাও। মেয়েকে তিনিই পড়ান। অভাবের সংসারে মেয়ের জন্য রাখা যায়নি কোনও গৃহশিক্ষক। সাইফার ছোট দুই ভাইয়ের এক জন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে, অন্য জন এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। বাঁশ, মাটি, প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা দেওয়াল ও টালির ছাউনির এক চিলতে ঘরে লালিত হচ্ছে ১২ বছরের সাইফার স্বপ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন