Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সাধারণ থাকাই ভাল, উপলব্ধি সে দিনের ‘বিস্ময় বালিকা’ মৌসুমির

শিরোনামে আর ফিরতে চান না মৌসুমি। এখন তিনি ঝাড়খণ্ডের একটি বেসরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষা। পুরুলিয়া শহরে থাকেন। স্বামী আর ফুটফুটে কন্যাসন্তানকে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর। আর পাঁচ জনের মতোই। 

মৌসুমি চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

মৌসুমি চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
আদ্রা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৪১
Share: Save:

আজ থেকে সাতাশ বছর আগের কথা। সেবার তিনি বসেছিলেন মাধ্যমিকে। বয়স তখন মোটে ৮ বছর ৭ মাস। আদ্রার সেই মৌসুমি চক্রবর্তী কেমন আছেন এখন? কী করছেন? প্রশ্নগুলি তুলে দিচ্ছে সাইফা খাতুন। হাওড়ার কাষ্ঠসাংরা গ্রামের সাইফা এ বার ১২ বছর বয়সে বসতে চলেছে মাধ্যমিকে।

শিরোনামে আর ফিরতে চান না মৌসুমি। এখন তিনি ঝাড়খণ্ডের একটি বেসরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষা। পুরুলিয়া শহরে থাকেন। স্বামী আর ফুটফুটে কন্যাসন্তানকে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর। আর পাঁচ জনের মতোই।

মৌসুমি জানাচ্ছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করে বেরোন, তখন তাঁর বয়স বছর ষোলো। ডিগ্রির পাওয়ার সঙ্গে আর একটা ব্যাপারও বুঝেছিলেন সেই অল্প বয়সে। সহপাঠী, শিক্ষক— তাঁর জন্য সবার চোখে বিস্ময়।

আরও পড়ুন: ১২ বছর বয়সেই মাধ্যমিকে বসছে সাইফা!

পরে বিএড করেছেন। এমএড করেছেন। আর বুঝেছেন, বিস্ময়ের খোরাক হয়ে ওঠা কোনও শিশুর স্বাভাবিকের বিকাশের জন্য মোটেও কাজের কথা নয়। তিনি বলেন, ‘‘একটু বড় হওয়ার পরে আমি সাধারণ হতে চেয়েছি। আর সবার মতো সাধারণ। সেটাই হয়েছি। আমি খুশি।’’

মৌসুমি জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার বিজ্ঞানী বাবা ছোটবেলাতেই বুঝেছিলেন তিনি আর পাঁচ জনের থেকে আলাদা। স্কুলে ভর্তি করাননি। বাড়িতে মায়ের কাছে পড়েছেন মৌসুমি। মাধ্যমিকে বসেছিলেন পুরুলিয়ার নেতাজি স্কুলের বহিরাগত ছাত্রী হিসাবে। ছাড়পত্র পেতে বিস্তর ছোটাছুটি করতে হয়েছে। তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের মন্ত্রী। তাঁর দ্বারস্থ হয়েছিলেন মৌসুমির বাবা। মাধ্যমিকে বসার আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আলাদা একটি পরীক্ষায় উতরোতে হয়েছিল তাঁকে।

পরে নিস্তারিণী কলেজ। ইংরেজি অনার্স। মৌসুমি বলেন, ‘‘এই সমস্ত ক্ষেত্রে সহপাঠীরা বয়সে অনেকটাই বড় হয়। মেলামেশার সময়ে সেই ব্যাপারটা চেয়ে বা না চেয়ে সামনে চলে আসে। সব সময়ে মনে হয়, আর পাঁচ জনের থেকে আমি বুঝি আলাদা। একা।’’

এখন শিক্ষক গড়ার ফাঁকে ডক্টরাল গবেষণায় মজে রয়েছেন সে দিনের ‘বিস্ময় বালিকা’। বলেন, ‘‘আশ্চর্য নয়, সুন্দর করে মানুষ করে তোলাটাই তো শিক্ষার লক্ষ্য।’’ তিনি চান, সাইফা সফল হোক। বড় হোক। আর সুন্দর ভবিষ্যত হোক তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Wonder girl Normal Woman Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE