সব্জি শুকিয়ে কাঠ, রেহাই নেই পাটেও

দুপুরের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪১-৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি। বৃষ্টি কার্যত উধাও। গরম হাওয়া আর টানা তাপে মুশকিলে পড়েছেন চাষিরা। জেলার চাষিদের দাবি, পাট, তিল হোক বা সব্জি মাঠে ফসল বাঁচানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার উপর পর্যাপ্ত জল নেই ডিভিসি বা অন্য জলাধারেও। সবমিলিয়ে বহু জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, বাড়ছে রোগপোকার সংক্রমণও।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

দুপুরের তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৪১-৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি। বৃষ্টি কার্যত উধাও। গরম হাওয়া আর টানা তাপে মুশকিলে পড়েছেন চাষিরা।

Advertisement

জেলার চাষিদের দাবি, পাট, তিল হোক বা সব্জি মাঠে ফসল বাঁচানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার উপর পর্যাপ্ত জল নেই ডিভিসি বা অন্য জলাধারেও। সবমিলিয়ে বহু জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, বাড়ছে রোগপোকার সংক্রমণও।

অগস্টের অতিবৃষ্টির পর থেকেই জলাভাব শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত জল না থাকায় ডিভিসি চাষের জল দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে বহু দিন আগে। ধীরে ধীরে শুকিয়েছে জলের টান দেখা দিচ্ছে ভাগীরথী, খড়ি, গুরজোয়ানি, বাঁকা নদীতেও। খাল-বিল-পুকুরের অবস্থাও তথৈবচ। অকেজো হয়ে পড়েছে নদী সেচ প্রকল্পগুলিও। একমাত্র শ্যালো পাম্প মাটির গভীরে ঢুকিয়ে যেটুকু জল মিলছে তাই ভরসা চাষির। তবে এ পরিস্থিতি আরও বেশ কিছুদিন চললে সে জোগানও কমার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

Advertisement

নাদনঘাটের চাষি নিজামুদ্দিন মণ্ডল জানান, জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। অথচ নদী সেচ প্রকল্প অকেজো হয়ে পড়ায় জল মিলছে না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে বৃষ্টি হলে ধান বাঁচানো যাবে, না হলে মাঠেই গাছ শুকিয়ে যাবে বলেও তাঁর দাবি। মেমারির চাষি প্রদ্যুৎ দত্তেরও দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় জলস্তর নামছে। শ্যালো পাম্প ৩০ থেকে ৩৫ মিটার গর্ত করে নামিয়ে জল তুলতে হচ্ছে। দ্রুত বৃষ্টি না মিললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’ এরসঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ফসল বাঁচাতে যত বেশি জলের প্রয়োজন হচ্ছে ততই এক শ্রেণীর অগভীর নলকূপের মালিক দাম বাড়াচ্ছে জলের।

ধানের পাশাপাশি সব্জি, পাট, তিল ও নানা রকম ডালশস্যও জমিতে রয়েছে এই সময়। তাপপ্রবাহে জ্বালা সেখানেও। পূর্বস্থলীর সব্জি চাষিদের দাবি, সকাল থেকে টানা দাবদাহে ঢ্যাঁড়শ, পটল, ঝিঙে, উচ্ছে, করলা, লাফা, বরবটির মতো বেশির ভাগ গাছ ঝিমিয়ে পড়ছে। বহু গাছ শুকিয়ে মরেও যাচ্ছে জমিতে। কমছে উৎপাদন। স্বাভাবিক ভাবেই এমনটা চললে সব্জির দাম আকাশ ছোঁবে বলেও চাষিদের দাবি। এখনই খোলা বাজারে পটল মোটামুটি কেজি প্রতি ৩৫ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, লঙ্কা ৪০, করলা ২০, কুমড়ো ১৫, টমেটো ৩৫ টাকায় বিকোচ্ছে।

জমিতে পাট গাছের উচ্চতাও এখন হাতখানেক। তার মধ্যেই কালনা, পূর্বস্থলীর বহু পাট খেতে ঘোরাপোকার সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে চাষিদের দাবি। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বার পাটের ভাল দাম মেলায় এ বার চাষের এলাকা বাড়িয়েছেন চাষিরা। কিন্তু গরমে লাভের মুখ দেখা য়াবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পূর্বস্থলী, কালনার চাষিদের দাবি, কালবৈশাখীর বৃষ্টি থেকেই পাট গাছের বৃদ্ধি হয়। এ বার এখনও কালবৈশাখীর দেখা না মেলায় দু’ধরনের সঙ্কটচে পড়েছে পাট চাষ। এক, জমিতে জলের অভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে। দুই, ব্যাপক আকারে ঘোরাপোকার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পাট চাষি হাসান শেখ বলেন, ‘‘বৃষঅটি না হলে জানি না কী হবে!’’ বিশেষজ্ঞদের দাবি, উষ্ণ আবহাওয়ায় ঘোরাপোকা বেশি বংশ বিস্তার করে। জমিতে এই পোকা মারাত্মক আকার নিলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হবে। এর সঙ্গেই পাটের গুনগত মান কমে যাবে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। ক্ষতি হচ্ছে আমেও। পোকার হামলায় বোঁটা থেকে সময়ের বহু আগেই খসে পড়ছে আম। কালনার আম চাষি বকুল ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদিনই যেভাবে আম ঝরে পড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত কতটা আম গাছে রাখা যাবে তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছি।’’ জলের অভাবে তিলের জমিতেও দেখা দিয়েছে ফাটল।

চাষে সঙ্কটের কথা মানছে কৃষি দফতরও। জেলার এক সহ কৃষি পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘উচ্চ তাপে সব্জির পরাগরেণু শুকিয়ে যাচ্ছে। পরাগ মিলনের সমস্যা হচ্ছে। ফলে কমছে সব্জির ফলন।’’ ভারী বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি শুধরোবে না বলেও তাঁর দাবি। ক্ষতিকারক পোকা থেকে চাষিদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, নিয়ম করে বিকেলের দিকে সেচ দিতে হবে জমিতে। দিতে হবে ওষুধও। জেলার আর এক সহ কৃষি অধিকর্তা সুব্রত ঘোষেরও দাবি, ভারী বৃষ্টি হলে ক্ষতিকারক পোকার সংক্রমণ সামলানো যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন