Bhabanipur assembly

মমতার ভবানীপুরে সমীক্ষা শুরু করালেন শুভেন্দু, বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রীকে কঠিন লড়াই দেওয়াই লক্ষ্য বিরোধী নেতার

ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ওয়ার্ড এবং বুথের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে স্পষ্ট ধারণা পেতে সমীক্ষা শুরু করিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। দক্ষিণ কলকাতা বিজেপি সূত্রে খবর, সেই সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট হাতেও পেয়ে গিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

Advertisement

অমিত রায়

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২৫ ১০:৪২
Share:

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে) — ফাইল চিত্র।

আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘কঠিন’ লড়াইয়ের মুখে ফেলতে চান বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘পরীক্ষিত নেতা’ হিসাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দায়িত্ব দিয়েছে পদ্মশিবির। সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর বছরের গোড়া থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। সেই সূত্রেই এ বার ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ওয়ার্ড এবং বুথের পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে সমীক্ষা শুরু করিয়েছেন শুভেন্দু। দক্ষিণ কলকাতা বিজেপি সূত্রের খবর, সেই সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টও হাতে পেয়ে গিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

Advertisement

ভবানীপুর বিধানসভাকে অনেকে ‘মিনি ভারতবর্ষ’ বলে অভিহিত করেন। কারণ, ভবানীপুর বিধানসভা এলাকায় বাস করেন বাঙালি, পঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাতি, মরাঠি, ওড়িয়া এবং মুসলিম-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। শুভেন্দুর সমীক্ষায় ধর্মীয় পরিচয়ের পাশাপাশি ভাষা এবং জাতিভিত্তিক বিষয়গুলিও রাখা হয়েছে। ভবানীপুরে কত শতাংশ ব্রাহ্মণ, কত শতাংশ কায়স্থ, কত শতাংশ চামার বা মুচি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, তা-ও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। বিজেপি সূত্রের খবর, সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভবানীপুরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ভোট রয়েছে কায়স্থ সমাজের। ২৬.২ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব রয়েছে তাদের। মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিত্ব ২৪.৫ শতাংশ। পূর্বাঞ্চলীয় ভোটার ১৪.৯ শতাংশ, মারোয়াড়ি ১০.৪ শতাংশ এবং ব্রাহ্মণ ৭.৬ শতাংশ।

ভবানীপুরের এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘বিরোধী দলনেতা ভবানীপুর বিধানসভা এলাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাবটা জানতে চাইছেন। কোন বুথে কোন সম্প্রদায় বা ভাষাভাষীর ভোটার রয়েছে, তা জেনেই তিনি রণনীতি সাজাতে চান। তাই সমীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় রিপোর্ট আপাতত গোপনই রাখা হয়েছে।’’ ভবানীপুর বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, শুভেন্দুর কথামতোই ভবানীপুরে দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যবহার করবেন জেপি নড্ডা এবং অমিত শাহেরা। গত এপ্রিল মাসে ভবানীপুরের ওড়িয়াপাড়া দইপট্টিতে ওড়িয়াভাষী ভোটারদের সঙ্গে ‘উৎকল দিবস’ পালন করতে ওড়িশার যুব মোর্চার সভাপতি অভিলাষ পন্ডাকে আনা হয়েছিল। শুভেন্দুর পরামর্শেই তাঁকে ভবানীপুরের ওড়িয়া ভোটারদের সঙ্গে জনসংযোগ করতে ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। আবার অহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর মৃত্যু হলে ভবানীপুরে বিজেপি-র আয়োজিত স্মরণসভায় হাজির হয়ে গুজরাতি সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন শুভেন্দু নিজে। আগামী দিনে প্রয়োজনে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ভবানীপুরে এসে জনসংযোগ করতে পারেন পদ্মশিবিরের সব সম্প্রদায়ের নেতারা। সেই কাজে কার্যকর হতে পারে বিরোধী দলনেতার করানো সমীক্ষা। কখন, কাকে, কোথায় ব্যবহার করা হবে, সেই পথও দেখাতে পারে ওই সমীক্ষা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার আটটি ওয়ার্ড নিয়ে ভবানীপুর বিধানসভা। সেগুলি ৬৩, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৭ এবং ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিলে সব ওয়ার্ডেই ভোট রয়েছে বিজেপি-র। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরে তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় ৬,৩৩৪ ভোটে বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর থেকে এগিয়ে থাকলেও পাঁচটি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল পদ্মশিবির। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আবার বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষকে ২৮ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন। তারই পাশাপাশি ছ’টি ওয়ার্ড থেকে জোড়াফুলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র ৭০ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়েছিলেন রুদ্রনীল। আর ২০২১ সালে মমতার উপনির্বাচনে আটটি ওয়ার্ডেই জোড়াফুল ফুটেছিল। যদিও বিজেপির অভিযোগ ছিল, সব ওয়ার্ডে ‘ব্যাপক রিগিং এবং সন্ত্রাস’ করে মুখ্যমন্ত্রী ওই ভোটে জয়ী হয়েছেন। তবে তাতে বিশেষ কেউ কর্ণপাত করেননি।

বিজেপি-কে খানিকটা ভরসা যোগাচ্ছে ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভবানীপুরের ফলাফল। ২০১৪ সালে সকলকে চমকে দিয়ে দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুব্রত বক্সীকে ১৭৬ ভোটে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথাগত রায়। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও জয় পেয়েছিল বিজেপি। ২০১৯ সালে সাড়ে তিন হাজার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মালা এগিয়ে গেলেও সে বার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড-সহ ছ’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলেন পদ্ম প্রতীকের প্রার্থী চন্দ্রকুমার বসু। এমনই সব ভোটের পরিসংখ্যানে ভরসা করে শুভেন্দুকে ভবানীপুরের ময়দানে নামিয়েছে বিজেপি। দলের তরফে দায়িত্ব পাওয়ার পরেই চুপিসারে ওই সমীক্ষা করিয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি বিজেপি নেতৃত্ব নতুন মণ্ডল সভাপতিদের নাম ঘোষণা করেছেন। সেই পর্যায়ে ভবানীপুর বিধানসভার অন্তর্গত তিনটি মণ্ডলেই নতুন সভাপতিদের দায়িত্বে আনা হয়েছে। কিন্তু নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা হওয়ার পর ভবানীপুর বিধানসভার কর্মীদের একাংশের মনে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে। অভিযোগ, তিনটি ক্ষেত্রেই বিহারি নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবানীপুর বিজেপি-র এক বাঙালি নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দুদা বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব নেওয়ার পর যে বার প্রথম ভবানীপুরে এসেছিলেন, তখনও তিন মণ্ডলেই অবাঙালি সভাপতিদের দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাই শুভেন্দুদা যখন ভবানীপুরে ভোটের দায়িত্ব নিয়েছেন, আশা করব তিনি সামাজিক সমীকরণের বিষয়ের ভারসাম্য সঠিক ভাবেই পরিচালনা করবেন।’’ ওই নেতার আরও বক্তব্য, ‘‘যে সমীক্ষার কথা বলা হচ্ছে, সেই সমীক্ষাই শুভেন্দুদাকে ভবানীপুর বিজেপি-র অন্দরের সামাজিক সমীকরণ ঠিক করতে সাহায্য করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’ শুভেন্দুর সমীক্ষা শেষ হলে ভবানীপুরের ভোট পরিচালনার পদ্ধতিতেও ‘সামাজিক সমীকরণ’-এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন ভবানীপুর বিজেপি-র নিচুতলার কর্মীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement