গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রতিশোধের কথা ভেবে নয়, সংশোধনের কথা ভেবে সাজা দিতে হবে। চলতি মাসের গোড়ায় জলপাইগুড়িতে একটি খুনের ঘটনায় নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির সাজা খারিজ করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড । বৃহস্পতিবার সেই ধারা অনুসরণ করেই এক বছরের একটি শিশুকে খুনের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড রদ করে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিল হাই কোর্ট।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে বলেছে, ‘‘দোষ প্রমাণিত। তবে মৃত্যুদণ্ড ‘রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার’ (বিরলের মধ্যে বিরলতম) মামলায় দেওয়া হয়। এটি সেই গোত্রের মধ্যে পড়ে না। কারণ, দোষীদের আগেকার কোনও অপরাধমূলক ইতিহাস নেই। তাঁরা দরিদ্র ও শিক্ষায় পিছিয়ে। তাঁদের সংশোধনের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকার করা যায় না।’’
তাই হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ডকে আজীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করছে বলে জানিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মামলা। হাওড়া স্টেশনে ফলকনামা এক্সপ্রেসের একটি কামরার ভেতর একটি ব্যাগে ১ বছরের একটি শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল এক দম্পতিকে। ট্রায়াল কোর্ট (হাওড়া, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট–১) ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিযুক্ত ভান্নুর শাহ এবং হাসিনা সুলতানাকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় (খুন, প্রমাণ লোপাট, একাধিক জন মিলে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল।
দোষীরা হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরে বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির বেঞ্চ সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে। দুই বিচারপতি বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে জানিয়েছেন, তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে শিশুটিকে সর্বশেষে অভিযুক্তদের সঙ্গেই দেখা গিয়েছিল। অভিযুক্তেরা ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন যে শিশুটি তাঁদের কাছ থেকে কোথায় গেল বা কী ভাবে তার মৃত্যু হল। তা ছাড়া ময়নাতদন্তে প্রমাণিত হয়েছে শিশুটিকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে (বহু আঘাত ও হাড় ভাঙার চিহ্ন পাওয়া যায়)। এই পরিস্থিতিতে পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ভান্নুর এবং সুলতানাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।