মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা কার্যত বেজে গিয়েছে । চতুর্থ বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। ঠিক এই সময়েই বড়সড় রাজনৈতিক বার্তা দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নের সভাঘর থেকে গত ১৫ বছরে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজের খতিয়ান বা ‘রিপোর্ট কার্ড’ পেশ করবেন তিনি। নবান্ন সূত্রে খবর, সরকারি দফতরওয়ারি সাফল্যের বিশদ বিবরণ-সহ একাধিক রিপোর্ট বা বই প্রকাশিত হবে।
প্রশাসনের শীর্ষমহলের মতে, এটি সাধারণ কোনও অনুষ্ঠান নয়; বরং একপ্রকার আনুষ্ঠানিক দলিল পেশ। ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে ২০২৫— এই দেড় দশকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, গ্রামোন্নয়ন ও নারী কল্যাণ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কী অগ্রগতি হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যান থাকবে এই শ্বেতপত্রে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটি দফতর গত ১৫ বছরের কাজের বিস্তারিত বিবরণ, সাফল্যের সূচক এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে লাভবান মানুষের সংখ্যা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে।
বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথীর মতো বহু জনপ্রিয় প্রকল্প। সরকার মনে করছে, এই প্রকল্পগুলি সাধারণ মানুষের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। সেই বাস্তবচিত্র তুলে ধরতেই এই ‘রিপোর্ট কার্ড’। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী চান আবেগ নয়, উন্নয়নের তথ্যই যেন হয় মানুষের বিচারব্যবস্থার মূল ভিত্তি। শাসকদলের শীর্ষস্তরের একাংশ মনে করছে, গত কয়েক বছরে সমাজমাধ্যমে ও জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে পরিকল্পিত নেতিবাচক প্রচার চালানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, শিল্পায়ন— বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীরা তোপ দাগছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যভিত্তিক জবাব দিতে এই রিপোর্ট কার্ডই সরকারের প্রধান হাতিয়ার হতে পারে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মুখের কথায় নয়, সরকারি নথিপত্রই বিরোধী অভিযোগের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য উত্তর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, টানা ১৫ বছরের শাসনে কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠান বিরোধী বাতাবরণ তৈরি হয়। ২০২৬ সালের নির্বাচনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ তাই শুধু প্রশাসনিক নয়, নির্বাচনী কৌশলেরও অংশ। ভোটের আগে উন্নয়নের গ্রাফ তুলে ধরে জনগণের সমর্থন পোক্ত করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। যদিও অনুষ্ঠানটি সরকারি ভাবে আয়োজিত হচ্ছে, কিন্তু এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। জানা গিয়েছে, রিপোর্ট প্রকাশের পর তৃণমূল তা প্রচারের বড়সড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। দলের সমাজমাধ্যমের সেল তথ্যগুলি ভিডিয়ো, ইনফোগ্রাফিক ও ডিজিটাল প্রচারের মাধ্যমে মানুষের মোবাইলে পৌঁছে দেবে। জেলা ও বুথ স্তরের কর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হবে এই রিপোর্ট ব্যবহার করে মানুষকে ২০১১ সালের আগের পরিস্থিতি ও বর্তমান বাংলার তুলনা বোঝাতে। কারণ প্রধান বিরোধী দল বিজেপি মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনিক অপব্যবহার নিয়ে প্রচার শুরু করেছে। এই বিষয়গুলিও তুলে ধরে তারা বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল বিরোধী ভোটের আবহ তৈরি করতে চাইছে । সেই প্রচার জোর পাওয়ার আগেই মমতা দলের হাতে নিজের সাফল্যের দলিল তুলে দিয়ে ভোট ঘোষণার আগেই প্রচার শুরু করে দেওয়ার এই কৌশল নিয়েছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ ।
সব মিলিয়ে, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর এই রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ ২০২৬-এর ভোটের আগে রাজ্য রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। উন্নয়ন বনাম অভিযোগ—এই দ্বিমুখী রাজনৈতিক যুদ্ধে কোন দিকে পাল্লা ভারী হয়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে বাংলা।