Bangla and Bangali

বাংলাভাষী মানুষের উপর জুলুম বিজেপিশাসিত রাজ্যে, জোড়া প্রস্তাবে বিধানসভায় পদ্মশিবিরকে আক্রমণের কৌশল তৃণমূলের

বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে যোগদান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলার মেয়ো রোডে ওই কর্মসূচিতে বক্তৃতা করার পর নবান্নে যান তিনি। নবান্নে গিয়েই তিনি নির্দেশ দেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আয়োজনে উদ্যোগী হতে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১২:৫৩
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আগামী সোমবারের থেকে শুরু হচ্ছে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন। সেই অধিবেশনে বিজেপিকে আক্রমণের জোড়া কৌশল সাজিয়েছে শাসকদল। তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রে খবর, এই চার দিনের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে জোড়া প্রস্তাব এনে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপিকে আক্রমণ করতে চাইছে তৃণমূল শিবির। গত কয়েক মাস ধরে বিজেপিশাসিত রাজ্য, যেমন রাজস্থান, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ওড়িশায় একাধিক বাংলাভাষী মানুষের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই সব রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা করেছে পুলিশ-প্রশাসন, এমনটাই অভিযোগ। তাঁদের কাউকে আবার পুশব্যাক করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশেও। গোড়া থেকেই বাংলা ভাষা ও পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের উপর ভিন্‌রাজ্যে আক্রমণের নিন্দায় সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর উদ্যোগেই এই বিশেষ বিধানসভার অধিবেশনের আয়োজন করছে শাসকদল।

Advertisement

বাঙালি ও বাংলা ভাষার প্রতি বিজেপির আক্রমণের পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় রাজনীতিতে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারে চলছে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিউ (এসআইআর)। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই প্রক্রিয়া রাজ্যে শুরু করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এই প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকা সংশোধন করে বহু ভোটারকে বাদ দেওয়া হতে পারে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাই এই বিষয়টিকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের উপর বিজেপিশাসিত রাজ্যে আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনার সঙ্গে এসআইআরের বিরুদ্ধেও প্রস্তাব এনে আলোচনা হতে পারে।

আগামী সোমবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে বসবে কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে বিধানসভার তিন দিনের কর্মসূচি ঠিক হবে। বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, প্রথম দিন অধিবেশনের শুরুতেই শোকপ্রস্তাবের পর মুলতবি হয়ে যাবে অধিবেশনের কাজকর্ম। পরদিন মঙ্গলবার বিধানসভায় আনা হতে পারে বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলা ও বাঙালীদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব। বুধবার করম পুজোর কারণে ছুটি রয়েছে। ওই দিন বিধানসভার অধিবেশন বসবে না। তাই বৃহস্পতিবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের শেষ দিন হবে। ওই দিন নির্বাচন কমিশনের এসআইআরের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনে আলোচনা হবে। তৃণমূল পরিষদীয় দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালি অস্মিতার অস্ত্রে শান দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তাই রাজপথে বাংলা ও বাঙালির উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে তিনি যেমন লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দলকে নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনই প্রশাসনিক ভাবে বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে বিধানসভার অধিবেশন ডেকে তা কার্যকর করতে চান।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন কৌশলের কথা বুঝেই বিধানসভার কর্মসূচি প্রকাশের অপেক্ষায় বিরোধী শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি পরিষদীয় দল। কার্যবিবরণী কমিটির বৈঠকের পর বিধানসভার কর্মসূচি প্রকাশিত হলেই পাল্টা চাল দিতে পারেন নন্দীগ্রাম বিধায়কও। তাই আপাতত এই সংক্রান্ত বিষয় বিজেপি পরিষদীয় দলের কোনও সদস্যকে মুখ না খোলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচিতে যোগদান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ধর্মতলার মেয়ো রোডে ওই কর্মসূচিতে বক্তৃতা করার পর নবান্নে যান তিনি। নবান্নে গিয়েই তিনি নির্দেশ দেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আয়োজনে উদ্যোগী হতে। সেই মতো নবান্ন থেকেই যোগাযোগ করা হয় রাজভবনে। সেই পর্যায়েই একে একে যোগাযোগ করা হয় বিধানসভার স্পিকার এবং পরিষদীয় দফতরের সঙ্গে। শুক্রবার অধিবেশন সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় নথি পৌঁছে গিয়েছে বিধানসভার সচিবালয়ে।‌ প্রসঙ্গত, গত বছর ২৮ আগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আর জি কর হাসপাতালে যুবতী চিকিৎসকের ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার জেরে নতুন আইন তৈরি করতে বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এ বার ওই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে না হলেও, ওই দিনই নবান্নে ফিরে ফের একবার বিশেষ অধিবেশন বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement