kaushik basu

‘ঘৃণার আবহে, অযোগ্য শিক্ষকে ক্ষতি দেশের’

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসুর এমন বক্তব্য একই সঙ্গে দেশ ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩১
Share:

পুরুলিয়ার পাড়ায় স্কুল পড়ুয়াদের সঙ্গে কৌশিক বসু। ছবি: সঙ্গীত নাগ

সমস্যাসঙ্কুল এই সময়ের পরে যে দু’টি বিষয় সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেগুলি হল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। যে সব দেশ এই দু’টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বেশি করবে, অন্যদের থেকে এগিয়ে যাবে। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার পাড়ায় এক আলোচনায় এই কথা বলেন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু। একই সঙ্গে তিনি দু’টি বিষয় মনে করিয়ে দেন। প্রথমত, যেখানে বিভাজন ও ঘৃণার পরিবেশ রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগ কমবে। দ্বিতীয়ত, উপযুক্ত শিক্ষক তৈরি না হলে শিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের মানও নিম্নগামী হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।

Advertisement

ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বসুর এমন বক্তব্য একই সঙ্গে দেশ ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। বিভাজনের রাজনীতি দেশ জুড়ে ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করেছে, গত কয়েক বছর ধরে এমন অভিযোগ উঠছে বারবারই। আর শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির নালিশ ঘিরে সম্প্রতি তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য। আদালতে বাতিল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক শিক্ষকের নিয়োগ। ফলে গত কয়েক বছরে নিযুক্ত শিক্ষকদের একাংশের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

অধ্যাপক বসুর মতে, করোনা-পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পেরিয়ে এবং ‘ডিজিটাল বিপ্লব’ থিতু হলে, ভারত-সহ বিভিন্ন দেশই আরও উন্নতি করবে। তবে তার গতি কেমন হবে, তা যে দু’টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উপরে নির্ভর করবে, তার একটি শিক্ষা। কারণ, শিক্ষার ধরন নাটকীয় ভাবে পাল্টে যাবে। তাই শিক্ষার পদ্ধতিও সে ভাবে পাল্টাতে হবে। যে সব দেশ সেই অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে, তাদের উন্নতি দ্রুত হবে।

Advertisement

শিক্ষায় বিনিয়োগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝাতে অধ্যাপক বসু উল্লেখ করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেকার আর্জেন্টিনার কথা। লাতিন আমেরিকার দেশটি তখন দ্রুত উন্নতি করছিল। মনে করা হত, বিশ্বের বড় শক্তি হতে চলেছে তারা। কিন্তু পরবর্তী তিরিশ বছরে সে জায়গা নিয়ে নেয় আমেরিকা। তার অন্যতম কারণ, আমেরিকা শিক্ষাক্ষেত্রে এমন ভাবে বিনিয়োগ করেছিল, যা অন্য দেশ করেনি। আরও একটি কারণ, আর্জেন্টিনায় তখন চড়া সুরের জাতীয়তাবাদের পর্ব চলছিল। এই ধরনের জাতীয়তাবাদ নিজের দেশের প্রতি ভালবাসার থেকেও অন্য দেশের প্রতি ঘৃণা বেশি তৈরি করে। অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণেও তার ছায়া ছিল, যা দেশের ক্ষতিই করেছিল।

বর্তমান ভারতের পরিস্থিতি প্রসঙ্গেও অধ্যাপক বসুর বক্তব্যে এসেছে ঘৃণা, বিদ্বেষের মতো বিষয়গুলি। নানা গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, দেখা গিয়েছে, যে সব সমাজে মানুষের

মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস বেশি, তাদের উন্নতিও বেশি। ভারতে ২০০৯ সালের পর থেকে জাতীয় আয়ের সাপেক্ষে বিনিয়োগের অংশ কমছে। তাঁর মতে, বিনিয়োগ শুধু আর্থিক নীতির উপরে নির্ভর করে না, সমাজে বিশ্বাস বাড়লে বিনিয়োগ বাড়ে। কিন্তু এখন সমাজে যে ধরনের বিভাজন, ঘৃণার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা বিশ্বাস ও সংহতির ক্ষয় ঘটাচ্ছে। আখেরে তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপকের মতে, গত দু’আড়াই বছরে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার জন্য অতিমারি না খারাপ নীতি, কোনটি বেশি দায়ী, তা অন্য প্রশ্ন। তবে মানুষ যতটা বুঝেছে, ক্ষতির গভীরতা তার চেয়ে বেশি। এই প্রসঙ্গেই ভাল শিক্ষক তৈরি জরুরি বলে জানান তিনি। এখন যদি ভাল শিক্ষক তৈরি না হয়, উপযুক্ত শিক্ষা না পেলে কুড়ি-পঁচিশ বছর পরে ভাল পড়ুয়াও তৈরি হবে না। তখনও এই ভাল শিক্ষকের ঘাটতি চলতে থাকবে। যা সমাজকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন