ফার্মাসিস্টেরা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এক জন কর্মী অরণ্যদেবের মতো একই সময়ে একাধিক জায়গায় উপস্থিত থাকতে পারেন না। অথচ, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে একাধিক সরকারি হাসপাতালে বেশ কিছু ফার্মাসিস্টের ক্ষেত্রে এ হেন অসম্ভবই কী ভাবে সম্ভব হল, সেই রহস্য ভেদ করতে নেমেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।
ফার্মাসিস্টেরা হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আউটডোরে রোগীদের যে ওষুধ লেখা হয় সেগুলি তাঁরা ডিসপেনসারি থেকে রোগীকে দেন, কী ভাবে খেতে হবে বুঝিয়ে দেন। সেই সঙ্গে হাসপাতালে ওষুধের স্টক নিয়ন্ত্রণ ও ঠিক ভাবে মজুত করা, ওষুধ কেনা, কোন ওষুধ ফুরিয়ে গিয়েছে, কোনটা বেশি রয়েছে তার তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বাদ দেওয়ার মতো গুরুদায়িত্ব তাঁদের উপরে থাকে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কর্মরত অবস্থায় অনেক ফার্মাসিস্ট পূর্ণ সময়ের বি-ফার্মা (৪ বছরের) বা এম-ফার্মা (২ বছরের) ডিগ্রি কোর্সে পাশ করেছেন। সম্প্রতি এ ব্যাপারে তথ্য জানার আইনে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় এমন বেশ কিছু ফার্মাসিস্টের নাম জানিয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে যাঁরা পূর্ণ সময়ের চাকরি করছেন, তাঁরা বি-ফার্মা বা এম-ফার্মার পড়াশোনা চালাচ্ছেন কী করে? স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘হয় তাঁরা হাসপাতালের কাজে চূড়ান্ত গাফিলতি করে কোনও ভাবে হাজিরা ‘ম্যানেজ’ করে পড়াশোনা চালিয়েছেন, নয়তো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরা না দিয়েই ডিগ্রি পেয়ে গিয়েছেন।’’ কাজে ফাঁকি দেওয়ার অর্থ ফার্মাসির পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওষুধের স্টক বজায় রাখা ও সংরক্ষণের কাজ ঠিক মতো হয়নি। প্রসঙ্গত, অভিযুক্তেরা কেউই একই সঙ্গে দুই কাজ চালানোর আগে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি নেননি। চাইলেও তাঁদের অনুমতি পাওয়ার কথা নয়। কারণ, কর্মরত অবস্থায় চিকিৎসকেরা উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারলেও সরকারি ফার্মাসিস্টদের আইনত তা করার অধিকার নেই।
তথ্য জানার আইনে যে সব ফার্মাসিস্টের নাম পাওয়া গিয়েছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই যখন বি-ফার্মা বা এম-ফার্মা করেছেন সেই সময়েই জেলার কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একমাত্র ফার্মাসিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। এতে স্বাস্থ্যকর্তারা আরও স্তম্ভিত। ওই সময়ে ওই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ বন্টন ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে বলে তাঁদের আশঙ্কা। ওই ফার্মাসিস্টদের মধ্যে হাওড়ার ধুলাসিমলা ও বারবেরিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দু’জন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা গ্রামীণ হাসপাতালের এক জন, কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাঁচ জন ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। এ ছাড়াও নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, এসএসকেএম, মেদিনীপুরের এগরা হাসপাতাল, তমলুক জেলা হাসপাতাল এবং কল্যাণী ফার্মাসি ইনস্টিটিউটের এক জন করে ফার্মাসিস্টের নামও স্বাস্থ্য দফতরের কাছে এসেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গুরুতর অভিযোগ। বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।’’ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পার্থ প্রধান বলেন, ‘‘এমন যে হচ্ছে তা দায়িত্বে থাকাকালীন জানতে পারিনি।’’ হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘বছর দু’য়েক আগে এমন অভিযোগ পেয়েছিলাম। সেই সময়ে তদন্তও হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য হাতে আসেনি।’’
অভিযুক্ত কয়েক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেকেই কথা বলতে চাননি। কেউ কেউ দাবি করেন সরকারি অনুমতি নিয়েই পড়তে গিয়েছিলেন। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও অনুমতি মিলল কী ভাবে, তার উত্তর অবশ্য মেলেনি। এক ফার্মাসিস্ট আবার দাবি করেন, নাইট ও ইভনিং ডিউটি করে পড়া চালিয়েছেন। হাসপাতালে নাইট ডিউটি হয় হয় রাত আটটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত। তা হলে কি দিনের পর দিন ঘুমোতেন না? এর উত্তরে ওই ফার্মাসিস্ট বলেন, ‘‘সহকর্মীরা সাহায্য করেছিল। সব মিলিয়ে হয়ে গিয়েছে।’’