দিলীপকুমার সিংহ (বাঁ দিকে) ও দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
জাল নথি দিয়ে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য-সহ তিন জনকে পাঁচ বছর কারাবাসের নির্দেশ দিল বোলপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালত।
বুধবারই প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপ কুমার সিংহ, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মসচিব দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায় এবং বরখাস্ত হওয়া অধ্যাপক মুক্তি দেবকে এই জালিয়াতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক অরবিন্দ মিশ্র। প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা ওই মামলার রায় তোলপাড় ফেলে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ দিন বিচারক তিন জনকেই পাঁচ বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ১ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাবাস। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করার মামলায় দোষী তিন জনকে ২ বছরের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের অতিরিক্ত কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তবে, দুটো সাজাই একসঙ্গে চলবে।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে বলে দোষীদের আইনজীবীর তরফে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি বিচারকের কাছে সাজাপ্রাপ্তদের জামিনের আবেদনও জানিয়েছেন। সেই আবেদনে জানানো হয়েছে, সাজাপ্রাপ্তদের বয়সের কথা মাথায় রেখেই আদালত যাতে জামিন মঞ্জুর করে। যদিও তা নিয়ে আদালত কোনও মন্তব্য করেনি।
আরও পডু়ন: নির্বাচনের আগে চমক, প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাড়ল সুদের হার
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৬ সালে। বিশ্বভারতীতে ফলিত গণিত বিষয়ে অধ্যাপনার জন্য তফসিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন মুক্তি দেব। নির্বাচন কমিটি তাঁকে ও নন্দলাল বৈরাগীকে বাছাই করে। ১৯৯৭ সালে লেকচারার পদে যোগ দেন মুক্তিদেবীই। পরে তাঁর পদোন্নতিও হয়। ২০০২ সালের ২ এপ্রিল মুক্তিদেবী পিএইচডি করার কথা জানিয়ে বিভাগীয় প্রধানের কাছে আবেদন করেন। তিনি মার্কশিট ও সার্টিফিকেট দেখাতে বলার পরে আবেদনপত্র প্রত্যাহার করেন নেন মুক্তিদেবী। এর পর তৎকালীন উপাচার্য সুজিতকুমার বসুর নির্দেশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানানো হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিব জানান, মুক্তিদেবী বিএসসি প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিলেও উত্তীর্ণ হননি! যাদবপুরও জানায়, এমএসসি প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের কোনও পরীক্ষাতেই তিনি উত্তীর্ণ হননি।
আরও পড়ুন: বান্ধবীদের হেনস্থার প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে, বিষ খাইয়ে যুবককে খুনের অভিযোগ
বিশ্বভারতী সূত্রের খবর, ২০০৪ সালে মুক্তিদেবীকে সাসপেন্ড ও শো-কজ করা হয়। বিশ্বভারতী এক সদস্যের তদন্ত-কমিটি গড়ে। রিপোর্ট পেয়ে কর্মসমিতি মুক্তিদেবীর বিরুদ্ধে মত দিলে ২০০৪-এর ৩০ মে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ৩১ মে তাঁর বিরুদ্ধে বোলপুর থানায় এফআইআর করে বিশ্বভারতী। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, মুক্তিদেবী শিক্ষাগত যোগ্যতার যে প্রতিলিপি জমা দিয়েছিলেন, তাতে সই ছিল দিলীপকুমার সিংহের। মুক্তিদেবী যে দিন বিশ্বভারতীতে যোগদান করেন, সে দিন যাবতীয় মূল নথি দেখে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়ের। পরবর্তীতে রাজ্য সিআইডি তদন্ত ভার গ্রহণ করে। ২০০৪ সালেই দিলীপ কুমার সিংহকে গ্রেফতার করে সিআইডি। ২০০৫ সালে এই মামলার চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৬,৪৬৭,৪৬৮,৪৬৯,৪৭১ এবং ৪৭৪ ধারায় (জালিয়াতি, জাল নথি রাখা,জাল নথিকে আসল প্রমাণ করা এবং কোনও প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি)-র অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয় তিন জনের বিরুদ্ধে।
সেই তদন্তের ভিত্তিতেই দীর্ঘদিন ধরে চলা ওই বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর এ দিন বিচারক তিন জনকেই পাঁচ বছরের কারাদণ্ডর নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিন আদালত থেকে তিনজন কেই জেল হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)