তালপাটি খালের ইলিশ।
জমিরক্ষার আন্দোলনে নন্দীগ্রাম-খেজুরি তখন উত্তাল। চলছে বোমা-গুলি, ঝরছে রক্ত। সেই পর্বেই লোকে জেনেছিল তালপাটি খালের কথা। খালে পোঁতা তিন-তিনটে লাশও মিলেছিল ২০০৭-এর ৭ জানুয়ারি।
এগারো বছরে বহু জল গড়িয়েছে তালপাটিতে। একসময়ের রক্তাক্ত সেই খালই এখন ইলিশের নয়া ঠিকানা!
নন্দীগ্রাম ও খেজুরির মাঝে এই তালপাটি খালে কয়েক মাস ধরেই মিলছে বড় মাপের ইলিশ। বেশিরভাগেরই ওজন দু’কেজির ওপরে, স্বাদও অপূর্ব। স্থানীয় আড়তডার বাবুলাল সিংহ মানছেন, ‘‘সাত সকালেই ইলিশ ধরার নৌকা তালপাটিতে ভিড় করছে। বহু দিন এখানে ব্যবসা করছি। কিন্তু এ বারের মতো বড় মাপের ইলিশ আগে কখনও জালে পড়েনি।’’ নন্দীগ্রামের বাসিন্দা, পেশায় মাছ বিক্রেতা শুভেন্দু শী-রও মন্তব্য, ‘‘এ বার তালপাটি খালে জব্বর ইলিশ আসছে। প্রতিদিনই জালে বড় মাছ থাকছে।’’ মৎস্যজীবী কো-অপারেটিভ সোসাইটির সভাপতি হরিপদ বর্মন জানালেন, গড়ে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিকোচ্ছে তালপাটির রুপোলি শস্য।
মোহনার কাছাকাছি এই তালপাটি খাল হলদি নদীর সঙ্গে যুক্ত। হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন সাহু জানালেন, মূলত দূষণ মুক্ত জলের কারণেই তালপাটিতে ইলিশ মিলছে। সুমনের ব্যাখ্যা, ‘‘ইলিশ মাছ চরিত্র পাল্টাচ্ছে। আগে প্রজননের সময় ইলিশ মিষ্টি জলে আসত। কিন্তু এখন অনেক ক্ষেত্রেই সমুদ্র ও নদীর মিলনস্থল বেছে নিচ্ছে তারা। দূষণ কম হওয়ায় তালপাটি খাল, কুকড়াহাটি, পাতিখালির মতো জায়গায় বড় মাপের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।’’ তা ছাড়া, দীর্ঘ সময় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় বড় মাপের ইলিশ মিলছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ওই খালে মাছ ধরার নৌকা।
হলদিয়ার বাজার এখন ছেয়েছে তালপাটির ইলিশে। হলদিয়ায় দীর্ঘদিনের মাছের ব্যবসায়ী তারাপদ বর্মন জানালেন, জুলাইয়ের শেষ থেকে রোজই বড় মাপের ইলিশ এসেছে। গড় ওজন এক কেজির কম নয়। তারাপদের কথায়, ‘‘গত বিশ বছরে এমনটা দেখিনি।’’ সস্তায় বড় মাছ পেয়ে খুশি ইলিশপ্রেমীরাও। স্থানীয় বাসিন্দা অসীম মাইতি বললেন, ‘‘এ বার এত সস্তায় এত টাটকা ইলিশ খেয়েছি, ভাবা যায় না।’’
মরসুম ফুরনোর আগে ইলিশ উৎসবের ভাবনাচিন্তাও শুরু হয়েছে। স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী মানস বসুর কথায়, ‘‘ইলিশের কদরই আলাদা। ভাবছি শীঘ্রই ইলিশ উৎসবের আয়োজন করব।’’
—নিজস্ব চিত্র।