পরিবারের সাত সদস্যের নাম লিখে ইংরেজিতে লেখা ৭। মনে করা হচ্ছে, মৃত্যুর জন্য এঁদের দায়ী করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
বিছানায় পড়ে স্ত্রী এবং নাবালিকা কন্যার নিথর দেহ। ওই ঘরেই গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছিলেন কর্তা। শনিবার হুগলির চাঁপদানিতে একই পরিবারের তিন সদস্যের দেহ উদ্ধার ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে। পুলিশের সন্দেহ, পারিবারিক গন্ডগোলে স্ত্রী-কন্যাকে বিষ খাইয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন যুবক। ঘরের সবুজ রঙের দেওয়ালে পরিবারের অন্য সাত সদস্যের নাম লেখা রয়েছে। নীচে ইংরেজিতে লেখা ৭। মনে করা হচ্ছে, মৃত্যুর জন্য এঁদের দায়ী করা হয়েছে। তবে হাতের লেখাটি কার, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদের নাম মহম্মদ কেয়ামুদ্দিন (৪০), মমতাজ পারভিন (৩২) এবং আফসা (৮)। চাঁপদানির অ্যাঙ্গাস এলাকার চন্দনপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। শনিবার তিন জনকে বাড়ি থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কেয়ামুদ্দিন ব্যারাকপুর আদালতে মুহুরির কাছে কাজ করতেন। তাঁর এক ভাই এবং বোন রয়েছেন। ভাইয়ের সঙ্গে অহিনকুল সম্পর্ক। তাঁদের বাবা-মা দু’জনেই পক্ষাঘাতে পঙ্গু। বৃদ্ধ দম্পতি থাকেন কেয়ামুদ্দিনের বাড়ির পাশে অন্য একটি বাড়িতে। জানা যাচ্ছে, বাজারে অনেক টাকা ধারদেনা হয়েছিল কেয়ামুদ্দিনের। তাই বাবাকে একটি জমি বিক্রির কথা বলেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের কী হবে এবং অন্য সন্তানেরা কী বলবে, এই সাত-পাঁচ ভেবে কেয়ামুদ্দিনকে জমি বিক্রি করতে দেননি বাবা। এর মধ্যে জনা যায়, কেয়ামুদ্দিন মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বাড়ির সকলকে লুকিয়ে বছর পাঁচেক আরও একটি বিয়ে করেন। সম্প্রতি ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ওই যুবতী কেয়ামুদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন কথা লেখেন। এই সব নিয়ে অশান্তির মধ্যে শুক্রবার কেয়ামুদ্দিন এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যার দেহ উদ্ধার হয়েছে শনিবার।
ঠিক কারণে স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তান মারা গেলেন, তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তিনটি দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠিয়েছে তারা। ময়না তদন্তের জন্য। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি ঈশানী পাল বলেন, ‘‘তিন জনের মৃত্যুর নেপথ্যে পারিবারিক অশান্তি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।’’