প্রহৃত প্রেমিক। —নিজস্ব চিত্র।
প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর বাবা এবং দাদার হাতে প্রহৃত প্রেমিক। শাবলের ঘায়ে দুই চোখে ক্ষত নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুগলির যুবক। এই ঘটনায় শোরগোল শ্রীরামপুরের প্রভাসনগর এলাকায়। প্রেমিকের পরিবার-পরিজনেরা ভাঙচুর করেন অভিযুক্ত তরুণীর বাবার দোকানে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, নামাতে হয় র্যাফ। তরুণীর দাদাকে মারের হাত থেকে বাঁচিয়ে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রহৃত যুবকের নাম বৈদ্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়। বয়স ২৫ বছর। পরিবারের দাবি, স্থানীয় এক তরুণীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। সম্প্রতি মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে পরিবার। এর ফলে বৈদ্যরাজ সম্পর্ক থেকে সরে আসতে চান। কিন্তু ওই তরুণী তাতে রাজি হননি। তিনি জানান, অন্য কাউকে বিয়ে করলেও বৈদ্যনাথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকবে। এই পরিস্থিতিতে ‘আলোচনার’ জন্য প্রেমিককে বুধবার গভীর রাতে বাড়িতে ডাকেন তিনি।
অভিযোগ, বৈদ্যনাথ প্রেমিকার বাড়িতে যেতেই বাবা-দাদাকে ডেকে ঘর বন্ধ করে তাঁকে মারধর করেন ওই তরুণীই। বৈদ্যনাথের বোনের দাবি, রাত ৩টে নাগাদ তিনি এবং আত্মীয়েরা যখন ওই মেয়েটির বাড়িতে যান, তখন দুই চোখে কাপড় চাপা দিয়ে বসে রয়েছেন তাঁর দাদা। দুই সিভিক ভলান্টিয়ার সেখানে ছিলেন। কী করে এ সব হল জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা বলেন পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছেন বৈদ্যনাথ। কিন্তু বৈদ্যনাথ জানান, তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
অভিযোগ, শাবল দিয়ে মারধর করা হয় তাঁকে। শাবলের বাড়ি পড়়ে চোখের পাশেও। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে ওয়ালস্ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, যুবকের একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
শুক্রবার ওই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। তরুণীর দাদাকে মারধর করতে শুরু করেন কয়েক জন। খবর পেয়ে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে আহত যুবকের পরিবার শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। তার প্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রহৃত যুবকের বোন রাজেশ্বরী বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল দাদার। এখন অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছে মেয়েটির। আগামী ৪ ডিসেম্বর তাঁর বিয়ে। ওই সব শুনে দাদা সম্পর্ক শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি ওকে বার বার ফোন করে ডাকত। বলত, ‘তুমি এসো। কথা আছে।’ শেষমেশ বুধবার রাত ১টা নাগাদ ওদের বাড়িতে যায় দাদা। তৎক্ষণাৎ ঘরের দরজা বন্ধ দরজা করে দেয় মেয়েটির বাবা-দাদা। শাবল দিয়ে মারে দাদাকে। রাত্রিবেলা সিভিক ভলান্টিয়ারেরা যায়। তারা শিখিয়ে দিয়েছিল, ‘বোলো, পড়ে গিয়ে এমন হয়েছে।’’
অভিযুক্তদের কেউ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। শ্রীরামপুর থানার পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। অন্য দিকে, তাঁদের শাস্তির দাবিতে সরব এলাকাবাসী।