চাষ করতে সমস্যায় পড়ছেন
Farmers

আলু চাষে খরচ বাড়ায় আতান্তর

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য এখনও আলুর বীজ তৈরির ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করতে পারেনি। যদিও উন্নতমানের আলু বীজ তৈরির চেষ্টা জারি বলে দাবি করেছেন কৃষি দফতরের কর্তারা।

Advertisement

কৌশিক সাহা

কান্দি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৪৯
Share:

আলু-পেঁয়াজের বীজ নিয়ে চিন্তা মুর্শিদাবাদে। ফাইল চিত্র।

রাজ্যে উন্নতমানের আলুর বীজ মেলে না। সামান্য কিছু মেলে হুগলির তারকেশ্বর এবং বর্ধমান জেলায়। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। তাই ভিন রাজ্যের আলু বীজের উপরেই নির্ভর করতে হয় এ রাজ্যের আলু চাষিদের। চড়া দামে আলুর বীজ কিনে আলু চাষ করতে হচ্ছে কান্দি তথা মুর্শিদাবাদের আলু চাষিদের। কান্দি মহকুমায় কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা পরেশনাথ বল বলেন, “আলুর বীজ তৈরির ফার্ম নেই এখানে। বর্ধমান, তারকেশ্বর থেকে আলুর বীজ এনে রোপণ করতে পারলে ফলন কিছুটা ভাল হতে পারে।”

Advertisement

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, রাজ্য এখনও আলুর বীজ তৈরির ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করতে পারেনি। যদিও উন্নতমানের আলু বীজ তৈরির চেষ্টা জারি বলে দাবি করেছেন কৃষি দফতরের কর্তারা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আনন্দপুরে পটাটো সিড ফার্ম আছে, তবে সেখানে এ পর্যন্ত উন্নতমানের আলু বীজে তৈরিতে তেমন সফলতা মেলেনি বলে অভিযোগ। একই ভাবে, মুর্শিদাবাদ জেলা কৃষি বিভাগ সারগাছিতে আলুর বীজ তৈরি চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেখানে বীজ তৈরি হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসেনি বলে দাবি কৃষি আধিকারিকদের। তাই এই জেলার আলু চাষিদের ভিন পঞ্জাবের বীজের উপর নির্ভর করতে হয়। সেখান থেকে আলু বীজ এনে এলাকার চাষিরাচাষ করেন।

জেলার মধ্যে কান্দি মহকুমায় সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়। জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। তার মধ্যে কান্দিতেই চাষ হয় প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। আবার এই মহকুমার মধ্যে বড়ঞা ব্লকে আলু চাষ হয় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। মূলত জ্যোতি, পোখরাজ ও চন্দ্রমুখী—এই তিন প্রজাতির আলুর চাষ হয়। তার মধ্যে পোখরাজ আলু চাষ সবচেয়ে বেশি। পঞ্জাব থেকে আসা আলু বীজের মধ্যে পোখরাজ প্রজাতির বীজের দাম অন্য দুই প্রজাতির আলু বীজের চেয়ে কিছুটা কম। তাই চাষিরা ওই বীজই কেনেন সবচেয়ে বেশি। ওই প্রজাতির আলুর ফলনও বেশি হয় বলে দাবি চাষিদের। এক কুইন্টাল পোখরাজ আলু বীজের দাম যেখানে ৪ হাজার টাকা, সেখানে এক কুইন্টাল জ্যোতি আলু বীজের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা। ফলে এক বিঘা জমিতে আলুর বীজ রোপণ করতে রাসায়নিক সার, বীজের দাম ধরে প্রায় ১৪ হাজার টাকা হয়। আলু গাছ বড় হলে তার পরিচর্যা, খেত থেকে আলু তোলার খরচ আলাদা।

Advertisement

কান্দির আলু চাষি কৃষ্ণ দাস বলেন, “আমাদের রাজ্যে হুগলি জেলার চাঁপাডাঙা ও তারকেশ্বরের আলু বীজে ফলন ভাল হয় না। সেখান থেকে বীজ এনে আলু চাষ করলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। ওই বীজে চাষ করলে আলু গাছে রোগপোকা আক্রমণের ভয়ও থাকে। সহজে গাছ মরে যায়। আমরা পঞ্জাবের এবং ওই রাজ্যের জালন্ধরের আলু বীজের উপর ভরসা করি।’’ নাসির শেখ নামে আরেক চাষি বলেন, “আগে চাঁপাডাঙা বা তারকেশ্বর থেকে আলুর বীজ এনে চাষ করতাম। কিন্তু ওই আলুর ফলন কম। একই খরচে প্রায় তিন গুণ ফলন পাওয়া যায় পঞ্জাবের বীজে।”

কান্দি মহকুমার কৃষি দফতরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) পরেশনাথ বল বলেন, “আমাদের রাজ্যে আলুর বীজ তৈরি করা যাবে না, এমন নয়। প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর অভাব না থাকলেও আলুর বীজ তৈরির জন্য যে অনুকূল আবহাওয়ার প্রয়োজন, তা এখানে নেই। অদূর ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজ্য প্রয়োজনের আলু বীজ নিজেরাই তৈরি করতে পারবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন