ইলিশ-দাপটে ব্রাত্য খাসি-মুরগি

দিঘা হোক বা ডায়মন্ডহারবা— সর্বত্রই জালে উঠছে টন-টন ইলিশ। কলেবরেও নেহাত খাটো নয়। স্বাদেও খাসা। দেদার জোগান মানেই দামও নাগালের মধ্যে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করছেন না বাঙালিরা। ইলিশ এখন ‘মাস্ট আইটেম’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:২০
Share:

মাস দেড়েক আগে মুরগির মাংসের দাম চড়চড়িয়ে বাড়ছিল বলে বাজারের ছিল ব্যাজার মুখ। এক ধাক্কায় দাম কিছুটা কমাতে মাসখানেক ধরে সেই দোকানগুলিতে ভিড় হামলে পড়ছিল।

Advertisement

কিন্তু ইদের মুখে সস্তার ইলিশ উপচে পড়ায় বাজারুর ঠোঁটে হাসি খেলে গেলেও পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ। গত কয়েক দিনে, সে নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর কিংবা বহরমপুর-কান্দি, বাজারে মুরগি-খাসির দিকে ফিরে তাকাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ। ভিড় চাক বেঁধেছে ইলিশের ঝুড়িতে।

বাজার জুড়ে ইলিশের সেল চলছে! ঢেলে বিক্রি হচ্ছে জলের রুপালি শস্য। আর পাঁচটা দিন বাজারের এক কোনে চারা পোনা-লটে-তেলাপিয়া নিয়ে বসে থাকা বিক্রেতাও ঝুড়ি উপচে ইলিশ নিয়ে বসছেন। আর মানুষের মুখ ফেরাতে তাই খাসি-মুরগিতেও ছাড় দিতে বাধ্য হচ্ছেন কারবারিরা।

Advertisement

মুরগির মাংস এখন ১২০ টাকা কেজি থেকে কোথাও বা ১০০। খাসির মাংস ৪৫০ ছেড়ে ৩৮০, তবে তাতেও বাজারুদের ইলিশ থেকে মুখ ফেরানো কি চাট্টিখানি কথা!

দিঘা হোক বা ডায়মন্ডহারবা— সর্বত্রই জালে উঠছে টন-টন ইলিশ। কলেবরেও নেহাত খাটো নয়। স্বাদেও খাসা। দেদার জোগান মানেই দামও নাগালের মধ্যে। এমন সুযোগ হাতছাড়া করছেন না বাঙালিরা। ইলিশ এখন ‘মাস্ট আইটেম’।

বৃহস্পতিবার সকালে কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারে দাঁড়িয়ে নেদের পাড়ার শম্ভু সরকার বললেন, ‘‘একেবারে এক জোড়া কিনে ফেললাম। এমন নধর ইলিশ কেউ হাতছাড়া করে?’’ এসেছিলেন মাংস কিনতে, ফিরছেন ইলিশ ঝুলিয়ে। জানিয়ে গেলেন ‘‘রবিবার ফের কিনব।’’ বহরমপুর বাজারে ইদ্রিশ আলিও বলছেন, ‘‘এমন মাছ কত দিন দেখিনি। মাংসের দোকানে পা বাড়ালাম না!’’ ২৫০-৪৫০ টাকায় ইলিশ দেখে পরবের বাজারে আহ্লাদে আটখানা বাঙালি।

কৃষ্ণনগরের আমিনবাজারে মাছ বিক্রেতা স্বপন বিশ্বাস বলছেন, ‘‘পকেটের মাপ তো সবার সমান নয়। তাই ছোট ইলিশেরও বিক্রি দেদার।’’ ঘুর্ণি, বেলেডাঙা, গোয়াড়িবাজার— সর্বত্রই বাজার ছেয়েছে রুপোলি শস্যে।

করিমপুর থেকে শুরু করে চাপড়া, বেথুয়াডহরি, মাজদিয়া কিংবা বগুলা সর্বত্রই মাংসের বাজারে মন্দা। ছবিটা প্রায় একইরকম বহরমপুর, কান্দি, ডোমকল কিংবা ফরাক্কায়। খাসির মাংস বিক্রেতা আলি শেখ বলছেন, “আমার দৈনিক বিক্রি ৪০-৪৫ কেজি। গত দু’দিনে তা দশ কেজিতে নেমে এসেছে। ইদের বাজার বড় খারাপ!’’

কল্যাণীর মাছ ব্যবসায়ী রতন দেবনাথ ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ইলিশের দাম ছিল সাধারণের নাগালের বাইরেই। ছ’শো-সাতশো ওজনের ইলিশ আটশো টাকার নীচের নামেনি। এ বার তার দাম অর্ধেকেরও কম। মানুষ কী করে মুখ ফিরিয়ে থাকবে বলুন তো!’’ তবে, ইলিশের বাড় বাড়ন্ত নদিয়ার তুলনায় মুর্শিদাবাদে কিঞ্চিৎ কম। গোরাবাজার এলাকার মুরগির মাংসের ব্যবসায়ী রুকসাদ শেখ বলেন, “ইলিশের দাম কমায় মাংস বিক্রি কমেছে বটে, তবে আশা ছাড়িনি। ইদের দিন দেখবেন অনেকেই মাংসে ফিরবে!’’

তামাম অ-মাছ বিক্রেতারা সে দিকেই তাকিয়ে আছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন