—প্রতীকী চিত্র।
বীরভূমে তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে এক তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করেন ওই কাউন্সিলর। ধর্ষণের ফলে তরুণী গর্ভবতী হয়ে এক সন্তানের জন্ম দেন বলেও অভিযোগ। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা তরুণী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে ধর্ষণ, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকির কথা উল্লেখ রয়েছে। অভিযুক্ত বীরভূমের একটি পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলর এবং দলের টাউন কমিটির সহ-সভাপতি। বুধবার অভিযুক্ত কাউন্সিলরকে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার ও রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর।
তরুণীর অভিযোগ, “২০১৫ সালে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজের সূত্রে তৃণমূলের কাউন্সিলরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এর পর আমাকে নানা রকম কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি তাতে রাজি হইনি। এর পর আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি অবিবাহিত বলেও জানান আমায়।” তরুণীর আরও অভিযোগ, “২০২০ সালে যখন আমি আমার পরিবারে এই সম্পর্কের কথা জানাই, তখন আমার পরিবারের সঙ্গেও অভিযুক্ত কাউন্সিলর দেখা করেন। কিন্তু বিয়ের তারিখ ঠিক করার সময় তিনি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু পা হটেন। এবং জানান তিনি বিবাহিত। তাঁর একটি পূত্র সন্তানও আছে।” তরুণীর সংযোজন, “এর পর ওই কাউন্সিলর আমায় হুমকি দেন। আমার বিয়ের কথা জানার পরেও আমায় ভয় দেখান। ক্রমাগত আমায় বিরক্ত করেন। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দিনের পর দিন আমার উপর শারীরিক অত্যাচার করেন অভিযুক্ত।”
এর পর তরুণী গর্ভবতী হয়ে পড়লে অভিযুক্ত তাঁর সন্তান নষ্ট করার ‘নির্দেশ’ দেন। কিন্তু তরুণী ওই সন্তানের জন্ম দেন। এর পরেই তাঁর স্বামী সমস্ত ঘটনার কথা জানতে পারেন। এর জেরে তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হয়। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। তরুণী আরও জানান, অভিযুক্ত কাউন্সিলর তাঁকে হুমকি দেন, এই ঘটনা কাউকে জানালে তাঁর বৃদ্ধ মা-বাবার প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। অভিযুক্ত এ-ও জানান, তাঁর যেমন খুশি সেই মতো ওই তরুণীকে তিনি ব্যবহার করবেন। এর পরেই তরুণী পুলিশের দারস্থ হন। তিনি জানান, এই শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার থেকে তিনি মুক্তি চান। এই ঘটনায় তিনি আতঙ্কিত। তরুণী বলেন, “এই ঘটনার উপযুক্ত এবং কঠোর শাস্তি চাই। আইন ব্যবস্থার উপর আমার আস্থা রয়েছে।”
যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের ওই কাউন্সিলর। তাঁর দাবি, “এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুরো ঘটনাই তাঁরা খতিয়ে দেখছে।
এই ঘটনার পর, বিজেপির বক্তব্য, “এতো ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এই ধরনের ঘটনার পরে একজন কাউন্সিলরকে কী ভাবে তৃণমূল কলকাতা থেকে জেনে বা না জেনে, খোঁজ না নিয়ে বা খোঁজ নিয়েই টাউনের সহ-সভাপতি করল, এটা তো জানতে হবে। যারা ধর্ষক তারা এই ধরনের সুযোগসুবিধা পাচ্ছে বলে সমাজে এদের এত বাড়বাড়ন্ত। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মা-বোনেরা ধর্ষিতা হচ্ছেন। এবং সমাজে ধর্ষকেদের সম্মান দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় যারা যুক্ত আছে প্রত্যেকেই গ্রেফতার করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। না হলে আমরা আন্দোলন করব। এই ঘটনার আমরা তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি।”