Kalyan Banerjee vs Governor CV Anand Bose

রাজ্যপাল প্রসঙ্গে বিরূপ মন্তব্যের জের, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণের বিরুদ্ধে বিএনএস–এর একাধিক ধারায় মামলা দায়ের রাজভবনের

রাজভবনের তরফে অভিযোগে বলা হয়েছে, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যপাল প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করেছেন যা জনসমক্ষে ভয়ভীতি, বিভ্রান্তি এবং অরাজক পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১৫
Share:

(বাঁ দিকে) সিভি আনন্দ বোস, কল‍্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

রাজভবনে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত থাকার অভিযোগ তুলে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন, তা ঘিরে শেষ পর্যন্ত আইনি পদক্ষেপ করল রাজভবন । মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজভবনের তরফে জানানো হয়, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিশানা করে আক্রমণাত্মক মন্তব্যের জেরে কল্যাণের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) ২০২৩-এর বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগগুলি গুরুতর এবং অ-জামিনযোগ্য। ফলে মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়েছে। রাজভবনের তরফে মামলাটি দায়ের করেছেন রাজ্যপালের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি)।

Advertisement

রাজভবনের অভিযোগে বলা হয়েছে, সাংসদ কল্যাণ এমন মন্তব্য করেছেন যা জনসমক্ষে ভয়ভীতি, বিভ্রান্তি এবং অরাজক পরিস্থিতি তৈরির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর মন্তব্যে সংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের মর্যাদাকে আঘাত করা হয়েছে, এমনটাই রাজভবনের ব্যাখ্যা। অভিযোগে বিএনএস-২০২৩-এর যে সব ধারার উল্লেখ রয়েছে, সেগুলি হল সেকশন ১৫১ ও ১৫২ (দেশের ঐক্য, সংহতি এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত), ১৯৭ (মানুষকে ভুল বোঝানো এবং হিংসা ছড়ানো), ১৯৬ ‘এ’ ও ১৯৬ ‘বি’ (সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং ঘৃণা ছড়ানো), ৩৫৩-১ ‘বি’ ও ৩৫৩‘সি’ (সাধারণ মনুষকে ভয় দেখানো এবং রাজ্যপালের ভাবমূর্তি নষ্ট করা), ৩৫৩-২ (দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে হিংসায় ইন্ধন দেওয়া) ইত্যাদি। প্রসঙ্গত, মানহানি-সহ দেশের সম্প্রীতি, সংহতি ও ঐক্যের উপর আঘাত আনার মতো ধারাগুলি এনে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাজভবনের বক্তব্য, কল্যাণের মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর অনাস্থা তৈরি করতে পারে। দাবি করা হয়েছে, সাংসদের বক্তব্য রাজভবনে নাকি অস্ত্র, বোমা এবং গোলাবারুদ মজুত রয়েছে— এ ধরনের ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ অভিযোগ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, পুলিশি ব্যবস্থা এবং সাংবিধানিক পদমর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর)কে সমর্থন জানিয়ে রাজ্যপাল বিবৃতি দেন। তার পরই শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ দাবি করেন, “প্রথমে বলুন রাজ্যপালকে, যেন উনি বিজেপির অপরাধীদের রাজভবনে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেন। উনি সেখানে অপরাধীদের রাখছেন, তাদের বন্দুক ও বোমা দিচ্ছেন এবং বলছেন যে তৃণমূলকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা করো।” এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে রবিবার সকালে বিবৃতি জারি করে রাজভবন। সেই বিবৃতির পাল্টা আবারও রাজ্যপালকে আক্রমণ করেন কল্যাণ।

যদিও, সেই সময় উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন রাজ্যপাল। কল্যাণের মন্তব্যের জেরে সোমবার দুপুরে রাজ্যপাল বোস কলকাতা ফিরে পুলিশের আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং একটি স্নিফার ডগ-সহ নিরাপত্তাবাহিনীর একটি দল নিয়ে রাজভবন চত্বরে চিরুনি তল্লাশি চালায়। এই তল্লাশি অভিযানে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরও পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তল্লাশি শেষে রাজ্যপাল জানান, রাজভবনে আপত্তিকর বা সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। তাই অবিলম্বে কল্যাণ প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। যদিও, সোমবারেই রাজ্যপাল রাজভবনের আইনজীবীদের কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করে দিতে বলেছিলেন। সেই মতো মঙ্গলবার দুপুরে রাজভবনের আইনজীবীরা, কলকাতা হাই কোর্টে শ্রীরামপুরের আইনজীবী সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement