ফাইল চিত্র।
আগামী সপ্তাহে সংসদে জনতার স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ঝাঁপাবে বিরোধীরা। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বে চাইছেন, অন্যান্য দলের পাশাপাশি তৃণমূলও যাতে সেই আন্দোলনে পাশে থাকে। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এমনিতেই হারবে বিরোধী পক্ষ। তাই তাকে কেন্দ্র করে সংসদীয় সমন্বয় যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য শুক্রবার নড়ে বসতে দেখা গেল সনিয়া গান্ধীর দলকে। অন্য দিকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাফ বক্তব্য, বিরোধী শিবিরের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম সংসদীয় দল হিসেবে তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। সমমর্যাদা দিয়ে চলতে হবে।একমাত্র তা হলেই বিজেপির বিরুদ্ধে মসৃণ ভাবে একযোগে আক্রমণ শানানো সম্ভব।
কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটদানে বিরত না থাকার আবেদন জানিয়েছেন। কেন তৃণমূল ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিল, তা তিনি জানার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়ে খড়্গে বলেন, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তাঁর বক্তব্য ‘‘যেটুকু ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে, তা মিটিয়ে নেওয়া যাবে। বিরোধীদের শক্তি মজবুত করুন।’’ পাশাপাশি কংগ্রেসের সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের বক্তব্য, তৃণমূল নিজেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেসের তরফে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি বলে ওঠা অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
শুধু কংগ্রেস নেতারা নন, আজ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী মার্গারেট আলভাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘সাহসের প্রতীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের সঙ্গেই দাঁড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস।’’ আলভার বক্তব্য, এখন কলহ, ইগো বা রাগের সময় নয়। এখন সাহস, নেতৃত্ব ও ঐক্যের সময়। অবশ্য সেই সঙ্গে তৃণমূলের ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্তকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন কোনও ব্যক্তির ভোট নয়। আমরা আদর্শগত ভাবে বিজেপির বিভেদকামী রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমাদের বিজেপি-বিরোধিতার প্রমাণ দেওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। কিন্তু এখানে একটি বার্তা কংগ্রেসকে দেওয়ার আছে। তৃণমূলের মতো বৃহৎ বিরোধী দলকে যখন ইচ্ছা ডাকলেই পাওয়া যাবে বলে তারা যেন ধরে না নেয়। আমাদের সমমর্যাদা দেওয়া হোক। তা হলেই বিজেপির মুখোশ খুলে দিতে আমরা মসৃণ ভাবে সমন্বয় করব। সংসদের দু’টি কক্ষেই তৃণমূল বিরোধীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলি তুলে ধরবে।” তৃণমূল নেতার ব্যাখ্যা, বিজেপি-বিরোধিতা যারা করছে, সেই সমস্ত সমমনস্ক দলগুলির মধ্যে দু’টি ভাগ রয়েছে। প্রথমটি হল, যারা কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে রয়েছে। দ্বিতীয় হল, যারা একই ভাবে বিজেপি-বিরোধী হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে নেই। তৃণমূল এই দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগও তুলেছে, কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অন্য দলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার প্রশ্নে ঢিলেমি এবং রাজনৈতিক অপরিপক্কতা দেখা যাচ্ছে। যা জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোটকে দানা বাঁধতে দিচ্ছে না। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, তাদের মূল অভিযোগ খড়্গের দিকেই। কংগ্রেসের মধ্যেও অবশ্য মল্লিকার্জুন খড়্গের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি, দুই নির্বাচনেই তাঁকে বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দুই ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের অভাব অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আর কাউকেই রাজি করাতে পেরে বাধ্য হয়ে যশবন্ত সিন্হাকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠকে তিনি সব দলকে হাজির করাতে পারেননি বলেও অভিযোগ। আজ খড়্গে নিজেও বলেছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব যে উপরাষ্ট্রপতি প্রশ্নে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তিনি আঁচকরতে পারেননি।