West Bengal Lockdown

পুলিশ কড়া হতেই লকডাউনে সুনসান জেলা থেকে কলকাতা, চলছে ধড়পাকড়

ফের আগের মতো জেলা থেকে কলকাতায় কড়া লকডাউন বলবৎ করতে কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ১১:০৩
Share:

লকডাউনে সারাদিনই চলল পুলিশের কড়া নজরদারি। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব ধরা পড়ছিল। মুখে মাস্ক নেই। বাজার, রাস্তাঘাটে দূরত্ববিধি শিকেয় উঠেছিল। বৃহস্পতিবার অসচেতনতার সেই চেনা ছবি উধাও। ফের আগের মতো জেলা থেকে কলকাতায় কড়া লকডাউন বলবৎ করতে কোমর বেঁধে রাস্তায় নেমেছে পুলিশ-প্রশাসন।

Advertisement

সকালেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এ বার রাশ শক্তহাতে ধরতে চাইছেন পুলিশকর্মীরা। জেলা থেকে কলকাতায় ঢোকার সমস্ত রাস্তায় রয়েছে কড়া নজরদারি। অনুমতি ছাড়া কোনও গাড়িকে কলকাতায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যে সব পরিষেবা বা কর্মক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে, তারাই একমাত্র ছাড়পত্র পাচ্ছেন। ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে বাইক— রাস্তায় বেরলেই দেখাতে হচ্ছে পরিচয়পত্র অথবা নির্দিষ্ট কারণ জানাতে হচ্ছে পুলিশকে। প্রয়োজনে নথিপত্রও দেখাতে চাইছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

কলকাতার পাশাপাশি হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, শিলিগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, হুগলি-সহ রাজ্যের সব জেলাতেই পুলিশের কড়াকড়ির ছবিও দেখা গিয়েছে। সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও, পুলিশি নজরদারিতে কোনও ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়নি। বরং রাজাবাজার, খিদিরপুরের মতো এলাকায় চলেছে তল্লাশি। শ্যামবাজার থেকে বেহালা, গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, টালিগঞ্জ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ-সহ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় একই ছবি ধরা পড়ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে লকডাউন: গা-ছাড়া মনোভাব নিয়েই চিন্তা আজ

আরও পড়ুন: লকডাউন শুনেই বাজারে হুড়োহুড়ি

লকডাউনে ফাঁকা ই এম বাইপাস। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল থেকে ৬টা পর্যন্ত নিয়ম বিধি নামানার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন ৮৮৬ জন। মাস্ক না পরার জন্য মামলা করা হয়েছে ৫৫২ জনের বিরুদ্ধে। রাস্তায় থুতু ফেলার জন্য ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বেরনোর জন্য অনেকে আটক হয়েছেন।

রাজ্যের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন থাকবে সপ্তাহে দু’দিন। আজ, সারা দিনই চলবে পুলিশি নজরদারি। এ সপ্তাহে শনিবারও লকডাউন। আগামী সপ্তাহে বুধবার এবং আরও একটি দিন লকডাউন থাকবে রাজ্য জুড়ে। এ দিন যাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরচ্ছেন, তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন, কী কারণে বেরিয়েছেন তা জানতে চাইছেন পুলিশকর্মীরা। দেখতে চাওয়া হচ্ছে পরিচয়পত্র। লকডাউনে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ছাড় রয়েছে।

ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারিও চলছে কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে যেমন পথে নেমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। তেমনই লালবাজারের কন্ট্রোল রুম থেকেই সিসি ক্যামেরায় নজর রেখেছেন পুলিশ অফিসারেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা লাগোয়া ঠাকুরপুকুরে নাকা তল্লাশি চলছে। জেলা থেকে কলকাতায় ঢোকার মুখে সমস্ত গাড়িকে আটকানো হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ এলে, তাঁকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। রাসবিহারীতেও বহু গাড়িকে আটক করে পুলিশ কর্মীরা। অপ্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বেরনোর কারণে তাঁদের বাড়িও পাঠানো হয়েছে। একই ভাবে উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার দিক থেকে আসা গাড়িগুলিকেও আটকানো হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনী কলকাতার রাস্তায় নেমেছে। লকডাউনের প্রথম দফার মতোই এ বারও ঠিক তেমনই পুলিশি কড়াকড়ি রয়েছে। পার্ক স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট, নিউ আলিপুর, তারাতলায় ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইকেও ব্যাপক ভাবে ধড়পাকড় চলছে। যাঁরা গাড়ি নিয়ে বেরচ্ছেন, কিন্তু কোনও কারণ দেখাতে পারছেন না, তাঁদের নাম লিখে রাখা হচ্ছে। অনেক গাড়ি বাজেয়াপ্তও করা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের পদস্থকর্তারাও নেমেছেন পথে।

জনশূন্য সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও, পুলিশি নজরদারিতে কোনও ঢিলেঢালা ভাব দেখা যায়নি। —নিজস্ব চিত্র।

একই রকম ছবি ধরা পড়ছে হাওড়া, দুই ২৪ পরগনাতেও। শ্রীরামপুরে এক আইনভঙ্গকারীকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। মুর্শিদাবাদের বহরমপুরেও বাজার-দোকান একেবারে বন্ধ। প্রতিটি রাস্তায় চলছে পুলিশি টহলদারি। পূর্ব বর্ধমানেও রাস্তা ফাঁকা। সেখানে সকাল থেকেই বৃষ্টি চলছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও পুলিশি নজরদারির রাশ আলগা করা হয়নি। বাঁকুড়ার চকবাজারের রাস্তাঘাট শুনশান। লকডাউনে বেসরকারি এবং সরকারি অফিস বন্ধ। পরিবহণও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। এ দিন রাস্তায় বাস-অটো-ট্যাক্সি তাই পথে নামেনি। রাজ্যে গত কয়েক দিন ধরে প্রতি দিনই দু’হাজারের উপরে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে সংক্রমণ রুখতে ফের লকডাউনের পথেই যেতে হয়েছে রাজ্যকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন