প্রতীকী ছবি।
আজ্ঞাবাহী দৈত্যের সেবা পাওয়ার জন্য আশ্চর্য প্রদীপে তবু খানিক ঘষাঘষি করতে হত। টাচস্ক্রিনে কিন্তু আঙুল ছোঁয়ালেই খুলে যাচ্ছে ভাগ্য! অন্তত রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগমের অভিজ্ঞতা তেমনটাই। তাই মুরগির মাংস বিপণনে লাভের খোঁজে নিগমের মন্ত্র এখন ‘অ্যাপ হি শরণম্’!
গত এক বছরে নিগমের চিকেন বিক্রি টাকার অঙ্কে ছ’কোটি থেকে বেড়ে ১২ কোটি। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে লাভের খাতায় জমা পড়েছিল ৭৬ লক্ষ টাকা। ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে সেটা বেড়ে দু’কোটি ছুঁইছুঁই। এই সরকারি ‘সাফল্য-গাথা’র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ব্যবসার নয়া ময়দান খুঁজে বার করতে পারাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন নিগম-কর্তারা। নিগম সূত্রের খবর, এক বছরে ১৬০ থেকে বেড়ে চিকেন বিক্রির কাউন্টার হয়েছে ২৪০টি! ঘরে বসে বাজারের অ্যাপ বিগ বাস্কেট-এর সঙ্গে গাঁটছড়া এক বছরে নিগমের মাংস বিক্রির দর্শনটাই পাল্টে দিয়েছে।
নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরীশঙ্কর কোনারের মতে, কিছুটা ঝুঁকির রাস্তায় হাঁটার সাহস কাজে দিয়েছে। ন’মাস-এক বছর আয়ুর ‘ফ্রোজেন’ বা হিমায়িত চিকেন বিক্রির বদলে এখন ৭২ ঘণ্টা আয়ুর শূন্য থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখা চিল্ড বা ঠান্ডা চিকেনেও হাত পাকাচ্ছে নিগম। গৌরীশঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘অ্যাপের তাৎক্ষণিক চাহিদার জন্য চিল্ড চিকেনই ভরসা।’’ অনলাইন কেনাকাটায় সড়গড় নাগরিক থেকে হোটেলের হেঁশেল— সকলেরই এটা পছন্দ। কলকাতা থেকে বিমানে চিকেন সরবরাহে যুক্ত তাজস্যাটস গোষ্ঠী এবং ডেলি বাজার ডট কমেও এখন ঢুকে পড়েছে এই সরকারি মুরগির মাংস।
বিগ বাস্কেট-এর কলকাতার ক্যাটেগরি ম্যানেজার হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, নিগমের সৌজন্যে চিকেনের কারবার দৈনিক ৪৫০ কিলোগ্রাম থেকে বেড়ে ৮০০ কিলোগ্রাম, কোনও কোনও দিন এক টনে পৌঁছে যাচ্ছে। অর্থাৎ বৃদ্ধি দ্বিগুণ বা তার থেকেও বেশি। কলকাতায় পরিকাঠামো বাড়াতে পারলে ব্যবসা আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। হেসেখেলে ১৫ কোটি টাকার বিক্রি সম্ভব বলে মনে করছেন নিগম-কর্তারাও। নতুন অর্থবর্ষে অ্যাপের মাধ্যমে শূকরের মাংস এবং ছাগমাংস বিপণনেও জোর দেবেন তাঁরা।
নিজেদের অ্যাপ চালু করেছে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমও। তিন-চারটি অ্যাপ কাজে লাগিয়ে সরকারি মাছ ব্যবসার ৪৫ শতাংশই এখন অ্যাপ-নির্ভর। প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগমের ক্ষেত্রে এই অ্যাপ-নির্ভরতার হার অন্তত শতাংশ। তবে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের মতে, ‘‘গুণমান বজায় রেখে নতুন বিপণি বিস্তার এবং অ্যাপের মতো নয়া মাধ্যমে ব্যবসা— দু’টোই জরুরি।’’ ছ’বছর আগে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিতে কারবার চলত। তার পরে বিপুল লাভেই আত্মবিশ্বাস বাড়ছে নিগমের।