US Elections

ট্রাম্পের প্রার্থীর শোচনীয় হার নিউ ইয়র্কের মেয়র ভোটে, ১০% ভোটও জুটল না! ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সিতেও হারল তাঁর দল

নিউ ইয়র্কের নির্বাচনে লড়াই হয়েছে বটে। তবে ট্রাম্পের প্রার্থী শুরু থেকেই সেই লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছেন। লড়াই হয়েছে দুই ডেমোক্র্যাট নেতার মধ্যে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৪:৫১
Share:

(সামনে) নিউ ইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে জয়ী জ়োহরান মামদানি এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (পিছনে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে শোচনীয় হার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির। ডেমোক্র্যাট শিবিরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থীর সামনে দাঁত ফোটানোর সুযোগ পেলেন না ট্রাম্পের প্রার্থী কুর্টিস স্লিওয়া। মেয়র নির্বাচনে স্লিওয়া ভোট পেয়েছেন ১০ শতাংশেরও কম। মাত্র ৭.১ শতাংশ (মোট ভোটের ৯১ শতাংশ গণনার হিসাবে) ভোট জুটেছে ট্রাম্পের প্রার্থীর। ভার্জিনিয়া এবং নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনেও হেরেছেন ট্রাম্পের দলের প্রার্থীরা।

Advertisement

নিউ ইয়র্কের নির্বাচনে লড়াই হয়েছে বটে। তবে ট্রাম্পের প্রার্থী শুরু থেকেই সেই লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছেন। লড়াই হয়েছে দুই ডেমোক্র্যাট নেতার মধ্যে। এক জন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী— ভারতীয় বংশোদ্ভূত জ়োহরান মামদানি। অপর জন ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যান্ড্রু কুয়োমো। তিনি নিউ ইয়র্ক প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর। এ বারের নিউ ইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে (যেখানে একই দলের দুই বা তার বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে লড়াই হয়) মামদানির কাছে পরাজিত হন তিনি। পরে নির্দল প্রার্থী হয়ে মেয়র পদের জন্য লড়াই করেন। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মামদানি এবং কুয়োমোর মধ্যেই লড়াই হল নির্বাচনে।

ডেমোক্র্যাট শিবিরের মনোনীত প্রার্থী মামদানি পেয়েছেন ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট। নির্দল হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রাক্তন গভর্নর তথা ডেমোক্র্যাট নেতা কুয়োমো পেয়েছেন ৪১ শতাংশের বেশি ভোট। সেখানে ট্রাম্পের প্রার্থী স্লিওয়া ভোট পেয়েছেন সাত শতাংশের আশপাশে। আমেরিকার পাঁচটি কাউন্টি নিয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি কাউন্সিল গঠিত— ম্যানহ্যাটন, ব্রুকলিন, কুইনস, ব্রঙ্কস এবং স্টেটেন আইল্যান্ড। মেয়র পদের নির্বাচনে দেখা গেল, পাঁচটির কোনওটিতেই বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি স্লিওয়া। চারটি কাউন্টিতেই লড়াই হয়েছে দুই ডেমোক্র্যাট নেতার মধ্যে। শুধুমাত্র স্টেটেন আইল্যান্ডে একতরফা এগিয়ে ছিলেন নিউ ইয়র্ক প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মামদানি।

Advertisement

ট্রাম্পের প্রার্থী স্লিওয়ার সবগুলি কাউন্টিতেই শোচনীয় ফল হয়েছে। তিনি ম্যানহ্যাটনে ৩.৪ শতাংশ, ব্রুকলিনে ৪.৯ শতাংশ, ব্রঙ্কসে ৭.১ শতাংশ এবং কুইনসে ৯.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। কেবল স্টেটেন আইল্যান্ডেই শতাংশের হিসাবে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছোতে পেরেছেন তিনি। সেখানে পেয়েছেন ২১.৩ শতাংশ ভোট।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়েও নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি ট্রাম্প। এই পাঁচ কাউন্টির মধ্যে একমাত্র স্টেটেন আইল্যান্ড থেকেই ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি। বাকি চারটি কাউন্টিতে ট্রাম্প ভোট পেয়েছিলেন ৫০ শতাংশের কম (ব্রুকলিনে ২৮ শতাংশ, ম্যানহ্যাটনে ১৮ শতাংশ, কুইনসে ৩৮ শতাংশ, ব্রঙ্কসে ২৭ শতাংশ)। এ বার এক বছরের মধ্যে মেয়র নির্বাচনে দেখা গেল সবগুলি কাউন্টিতেই ভোট শতাংশ আরও কমেছে ট্রাম্পের দলের।

শুধু নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনেই নয়, নিউ জার্সি এবং ভার্জিনিয়ায় গভর্নর নির্বাচনেও পরাস্ত হয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা। নিউ জার্সিতে ট্রাম্পের দলের প্রার্থী জ্যাক সিয়াটারেলি পেয়েছেন ৪৩.২ শতাংশ ভোট (মোট ভোটের ৯৭ শতাংশ গণনার হিসাবে)। ভার্জিনিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থী উইনসম এরলিসির পেয়েছেন ৪২.৩ শতাংশ ভোট (মোট ভোটের ৯৫ শতাংশ গণনার হিসাবে)। এই দুই প্রদেশেও গভর্নর পদের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়েও এই দুই প্রদেশে হারতে হয়েছিল ট্রাম্পকে। গত বছর দুই প্রদেশ থেকেই ট্রাম্প পেয়েছিলেন প্রায় ৪৬ শতাংশ ভোট।

এ বারের আঞ্চলিক নির্বাচনে নিউ ইয়র্কে ডেমোক্র্যাট শিবিরের প্রার্থী মামদানির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে সুর চড়িয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাম্প। আমেরিকার রাজনীতিতে বামঘেঁষা ডেমোক্র্যাট বলে পরিচিত মামদানি। আফ্রিকা মহাদেশের উগান্ডায় জন্ম হলেও তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ারের পুত্র। তাঁর পিতা উগান্ডার খ্যাতনামী লেখক মাহমুদ মামদানি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ডেমোক্র্যাট নেতাকে বিভিন্ন ভাবে নিশানা করে আসছিলেন ট্রাম্প। তাঁকে ‘১০০ শতাংশ উন্মাদ কমিউনিস্ট’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

‘কমিউনিস্ট’ প্রার্থী মামদানি ভোটে জিতলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য আমেরিকার কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, “যদি নিউ ইয়র্ক কমিউনিস্ট মেয়র বেছে নেয়, তা হলে আমি ওই শহরের জন্য ফেডারেল অর্থবরাদ্দ বন্ধ করে দেব, যত ক্ষণ না আইন আমাকে তা দিতে বাধ্য করছে।” ট্রাম্পের এই ধারাবাহিক আক্রমণের পরেও মেয়র পদের নির্বাচনে জয়ের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে খোঁচা দিয়ে মামদানি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনাকে আমি চারটি শব্দ বলতে চাই— আরও জোরে চিৎকার করুন।”

জয়ের পরে প্রথম বক্তৃতায় ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহরলাল নেহরুর উক্তিও উদ্ধৃত করেন তিনি। নিউ ইয়র্কবাসীর উদ্দেশে মামদানি বলেন, “আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আমার জওহরলাল নেহরুর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এমন কিছু মুহূর্ত আছে যা ইতিহাসে কম সময়ের জন্য জন্য আসে। যখন আমরা পুরাতন থেকে নতুনের দিকে পা বাড়াই, যখন একটি যুগ শেষ হয় এবং যখন দীর্ঘ নিপীড়িত জাতির আত্মা স্বর খুঁজে পায়।” বস্তুত, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সময়ে এই কথাগুলি বলেছিলেন নেহরু। এর পরেই মামদানি বলেন, “আজ রাতে আমরা পুরনোকে ছেড়ে নতুনের দিকে পা রাখছি।”

আঞ্চলিক ভোটে দলীয় প্রার্থীদের হার নিয়ে মুখ খুলেছেন ট্রাম্পও। সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দাবি, সমীক্ষক সংস্থা ‘পোলস্টার’ অনুসারে দু’টি কারণেই রিপাবলিকান শিবির নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে। প্রথমত, ট্রাম্প এই ভোটে প্রার্থী ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ‘শাটডাউন’ (প্রশাসনিক অচলাবস্থা)। ট্রাম্পের বক্তব্য, এই দু’টির কারণেই তাঁর দল আঞ্চলিক নির্বাচনে জিততে পারেনি বলে মনে করছে ‘পোলস্টার’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement