Texas Flash Flood

বেসরকারি সংস্থার তৈরি কৃত্রিম মেঘের কারণেই কি হড়পা বান টেক্সাসে? কী বলছে তদন্ত রিপোর্ট

গত শুক্রবার টেক্সাসের গুয়াদালুপে নদীতে হড়পা বান আসার পর থেকে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে, আট দিন কেটে গিয়েছে উদ্ধার অভিযানের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৫ ২২:৫৭
Share:

ভারী বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত টেক্সাস। ছবি: রয়টার্স। ছবি: রয়টার্স।

হড়পা বানের পর থেকে বিধ্বস্ত আমেরিকার টেক্সাস। এখনও পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ১৭৩ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র কের কাউন্টি থেকেই অন্তত ১৬১ জন নিখোঁজ। অনেকেই বলছেন, কৃত্রিম মেঘ তৈরি করে বৃষ্টি ঝরানোর কারণেই এই বিপর্যয়। যদিও আবহবিদেরা বলছেন অন্য কথা।

Advertisement

কার কী দাবি?

টেক্সাসে হড়পা বানের পর থেকেই অনেকে দাবি করতে শুরু করেছেন, বেসরকারি সংস্থার তৈরি কৃত্রিম মেঘের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ক্লাউড সিডিং’। সম্প্রতি রেনমেকার টেকনোলজি কর্পোরেশন নামে এক সংস্থা এই কৃত্রিম মেঘ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডল প্রশাসনের (এনওএএ) রিপোর্ট বলছে, রেনমেকারের উদ্যোগের কারণেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল টেক্সাসে। এই দাবিকে সমর্থন করেছেন আরও অনেকেই। সত্যাসত্য যাচাইকারী সংস্থা ‘স্নোপস্’-এর একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, গত ২ জুলাই দক্ষিণ-মধ্য টেক্সাসের পূর্ব অংশে একটি কৃত্রিম মেঘ তৈরি করেছিল রেনমেকার। রেনমেকারের প্রধান নির্বাহী কর্তা অগাস্টাস ডোরিকোও সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু, আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এর জেরে টেক্সাসে বৃষ্টিপাত বাড়লেও ওই পরিমাণ বৃষ্টি থেকে হড়পা বান হওয়া অসম্ভব। বরং এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কারণ।

Advertisement

কৃত্রিম মেঘ কী?

খরা অধ্যুষিত অঞ্চলে কিংবা কোনও জায়গায় জল সরবরাহ বাড়াতে আশ্রয় নেওয়া হয় কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের। যা করা হয় ‘ক্লাউড সিডিং’ বা মেঘের বীজ বপন করে। কৃত্রিম বৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে প্রথমে আবহাওয়ায় খানিকটা রদলবদল করা হয়। সে জন্য ড্রোনের মাধ্যমে মেঘের উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় সিলভার আইয়োডাইড জাতীয় রাসায়নিক অথবা ড্রাই আইস কিংবা ভোজ্য লবণ। এর পর ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড এবং ক্যালসিয়াম অক্সাইডের মিশ্রণের প্রলেপ দেওয়া হয় মেঘের গায়ে। এতে শুকনো মেঘের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। আয়তনে এবং ওজনেও ভারী হয়ে যায় মেঘগুলি। অবশেষে শুকনো মেঘগুলি পরিণত হয় জলভরা মেঘে। তা থেকেই বৃষ্টি নামানো হয়, সবটাই কৃত্রিম ভাবে! কখনও কখনও আবার মেঘের জল কম উষ্ণতায় জমে গিয়ে স্ফটিকের মতো বরফকণায় পরিণত হয়। তখনও একই ভাবে বিমান থেকে রাসায়নিক ছিটিয়ে মেঘের মধ্যে জমে থাকা জল বা বরফকণার অতিশীতল অবস্থা নষ্ট করে দেওয়া হয়। বরফ পরিণত হয় জলকণায়। তাতেই মেঘের জলধারণ ক্ষমতা কমে এবং মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ে।

কৃত্রিম মেঘই কী নষ্টের মূল? কী বলছেন আবহবিদেরা

আবহবিদেরা জানিয়েছেন, টেক্সাসে হড়পা বানের জন্য কৃত্রিম মেঘ দায়ী নয়। বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘স্নোপস্’ও এই দাবি খণ্ডন করেছে। এনওএএ-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, কৃত্রিম মেঘ থেকে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সাধারণত খুবই নগণ্য। কৃত্রিম মেঘ থেকে বৃষ্টিও হয় ছোট এলাকা জুড়ে। তা কখনওই এমন আকার নিতে পারে না বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। কৃত্রিম মেঘ বায়ুমণ্ডলে বাড়তি আর্দ্রতাও যোগ করে না। ফলে কৃত্রিম মেঘের কারণে টেক্সাসের দুর্যোগ হওয়া কার্যত অসম্ভব। টেক্সাসের হিউস্টনের আবহাওয়াবিদ ট্র্যাভিস হার্জগের কথায়, ‘‘কৃত্রিম মেঘ থেকে কখনওই এই মাত্রায় বিপর্যয় ঘটতে পারে না। আদতে কৃত্রিম ভাবে একটি মেঘও তৈরি করা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতিতে আগে থেকেই তৈরি হওয়া মেঘের বৃষ্টি ঝরানোর ক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে ফেলা যায় মাত্র। বরং হার্জগের ব্যাখ্যা, টেক্সাসে হড়পা বানের জন্য দায়ী করা যেতে পারে উষ্ণ ঝড় ব্যারিকে। সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরের হ্যারিকেন ‘ফ্লসি’র কারণে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণেও হড়পা বান হয়ে থাকতে পারে।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, গত শুক্রবার গুয়াদালুপে নদীতে হড়পা বান আসার পর থেকে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন নদীর ধারে ‘সামার ক্যাম্প’-এর ছয় জন। উদ্ধার অভিযানের আট দিন কেটে গিয়েছে। ফলে নিখোঁজদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের আশা প্রায় নেই বললেই চলে। বিপর্যয়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১২৯ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯০ জনই কেরভিল এলাকার বাসিন্দা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনও অনেকের দেহ উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে টেক্সাসের বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement